সার্জিক্যাল নিডল
‘সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনো— এই প্রবাদের অর্থ হল বিশ্বস্ত হওয়ার ভান করে চরম ক্ষতি করে চলে যাওয়া।’— প্রবাদ প্রবচন পড়াচ্ছিলেন চৌধুরিবাবু। ক্লাস শেষে বেরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন। মাথা ফাটল। ছাত্র,…
সার্জিক্যাল নিডল
‘সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনো— এই প্রবাদের অর্থ হল বিশ্বস্ত হওয়ার ভান করে চরম ক্ষতি করে চলে যাওয়া।’— প্রবাদ প্রবচন পড়াচ্ছিলেন চৌধুরিবাবু। ক্লাস শেষে বেরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন। মাথা ফাটল। ছাত্র, অন্যান্য সহকর্মীরা ধরাধরি করে ভর্তি করলেন নিকটবর্তী হাসপাতালে। সেলাই পড়ল। খানিক সুস্থ হয়ে চৌধুরিবাবু ভাবলেন, কথায় যতই সুচকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দেওয়া হোক, চিকিৎসাশাস্ত্রে তার জুড়ি মেলা ভার। ক্ষত সারাতে, রক্তপাত বন্ধ করতে বা দেহের অভ্যন্তরে অপারেশন— সার্জিক্যাল নিডলের গুরুত্ব অপরিসীম। জানা যায়, সার্জিক্যাল নিডলের ব্যবহার প্রথম শুরু হয়েছিল মিশরে। কিন্তু তা জীবিত মানুষের দেহে অস্ত্রোপচারের জন্য নয়। মমির উপর ব্যবহৃত হতো সেই সুচ। সম্ভবত ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম নিডল ব্যবহার করা হয়েছিল মমির ক্ষেত্রে। সেই সময় থেকেই মানুষ ভেবেছিলেন, মমির উপর যদি সেলাই করা যায়, মানব দেহে কেন করা যাবে না? মানুষের দেহে নিডল ব্যবহার হল ১৬৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। শল্য চিকিৎসার জনক সুশ্রুত এই অস্ত্রোপচারের বর্ণনা দিয়েছিলেন। বর্তমানে যেমন স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি সার্জিক্যাল নিডল দেখা যায়, তখন তেমন ছিল না। লোহা, তামা এমনকী, রুপোর সুচও পাওয়া গিয়েছে। তবে ওই নিডলগুলির ব্যবহারে সংক্রমণের উচ্চ আশঙ্কা থাকত। পাশাপাশি রেশম সুতো ব্যবহার করে এই সেলাইগুলি হতো। তবে সাময়িকভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হতো বলে, অনেকেই এভাবে অপারেশন করাতেন। খ্রিেস্টর জন্মের দুশো বছর পর রোমান চিকিৎসক গ্যালেন নিডলের খানিক পরিবর্তন আনলেন। সুচের মুখ আরও সরু করলেন তিনি। পাশাপাশি একটি সুচ একবার ব্যবহারের নিদান দিলেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে উন্নত হয়েছে নিডল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ধাতুবিদ্যার অগ্রগতি হয়। রাশিয়ান ডাক্তার নিকোলাই পিরোগভ প্রথম এমন লোহার সুচ অস্ত্রোপচারে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে জং কম ধরে। তিনি বন্দুকের গুলির ক্ষত ও অন্যান্য আঘাতের চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি নতুন পদ্ধতিও তৈরি করেছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে ভিন্ন চিকিৎসার জন্য নানান নিডল ব্যবহার শুরু হল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনাঘাঁটিতে আধুনিক নিডল দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। মনে মনে হাসলেন চৌধুরিবাবু। ভাবলেন, সব সুচ ফাল হয়ে বেরয় না!
No comments