পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই প্রেমের টানে পলাতক নাবালিকা ও গৃহবধূ সংখ্যা ৩৫
কারও নাবালিকা কন্যা, কারও আবার স্ত্রী। প্রত্যেকের বয়ান কিন্তু একই—সরস্বতী ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে আর ফেরেনি। এলাকায় খোঁজখবর করে জানা যাচ্ছে, প্রত্যেকে ‘পলাতক’। কার…
পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই প্রেমের টানে পলাতক নাবালিকা ও গৃহবধূ সংখ্যা ৩৫
কারও নাবালিকা কন্যা, কারও আবার স্ত্রী। প্রত্যেকের বয়ান কিন্তু একই—সরস্বতী ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে আর ফেরেনি। এলাকায় খোঁজখবর করে জানা যাচ্ছে, প্রত্যেকে ‘পলাতক’। কারও জন্য দাঁড়িয়ে ছিল সাইকেল, আবার কেউ উঠেছে মোটর বাইকে। প্রেমের টানে ঘর ছাড়ার মোক্ষম প্ল্যানিং। সরস্বতী পুজো, আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র বিরল সমাপতন। কেউ যে সন্দেহই করবে না! রাত পর্যন্ত উদ্বেগের অপেক্ষা। আর দিনের আলো ফুটতেই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারস্থ। কেউ কেউ আবার সরাসরি থানায়। কাতর আর্জি, খুঁজে দিন। মেয়েকে... ঘরের বউকেও। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই প্রেমের টানে পলাতক নাবালিকার সংখ্যা ২৫। গৃহবধূ ও আঠারো পেরনো যুবতী আরও ১০। অর্থাৎ, প্রেমদিবসে ওই জেলাতেই বেপাত্তা ৩৫ যুগল। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের হাত ধরে ঘর পাতানোর স্বপ্নে পাড়ি দেওয়া গৃহবধূও রয়েছেন নিখোঁজ-তালিকায়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই থানার সামনে অসহায় বাবা ও স্বামীদের লাইন। স্থানীয় প্রভাবশালীরাও চলে এসেছেন তাঁদের সঙ্গে। ভূপতিনগর, ময়না, পাঁশকুড়া, বা তমলুক—ছবি সর্বত্র এক। সকাল ১০টার মধ্যেই ভূপতিনগর থানায় আটটি ‘নিখোঁজ ডায়েরি’ হয়ে যায়। তার মধ্যে দু’জন গৃহবধূ, একজন সাবালিকা। বাকি পাঁচজনের বয়সই আঠারোর নীচে। ময়নার ব্রজবল্লভপুর গ্রাম থেকে তিন বান্ধবী সরস্বতী পুজো দেখতে বেরিয়ে একসঙ্গে বেপাত্তা। ভূপতিনগর থানার পূর্বচক, পুরুলিয়া, বাহাদুরপুর, গড়বাড়ি-১ ও ২ সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আটজন ভ্যালেন্টাইন্স ডে সেলিব্রেট করতে গিয়েছিল। তারা আর বাড়ি ফেরেনি। বাহাদুরপুর গ্রামের বছর কুড়ির এক বধূও আছেন। দু’বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। পটাশপুর থানা এলাকায় আবার পাঁচজন নাবালিকা নিখোঁজ। নিখোঁজ নাবালিকা ও বধূর সন্ধান পেতে পুলিসকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বুধবার রাতেই ময়না থানার গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা মৌমিতা দাসের স্বামী অরুণ দাস একসঙ্গে তিনজন নাবালিকার বাবাকে নিয়ে থানায় হাজির হন। ব্রজবল্লভপুর গ্রামের ১৬-১৭বছর বয়সি তিন বান্ধবী একসঙ্গে বেরিয়েছিল। কিন্তু কেউই বাড়ি ফেরেনি। খোঁজ নিয়ে বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, প্রত্যেকেরই বয়ফ্রেন্ড ছিল। তারাও বাড়িতে নেই। তমলুক এলাকার এক বধূ স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার আশায় চম্পট দিয়েছেন বলে থানার আইসি শান্তনু মণ্ডল জানিয়েছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঁশকুড়া থেকে দু’জন নাবালিকা প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছে। পাঁশকুড়ার হাউর গ্রামের এক যুবক দাসপুরের এক কিশোরীকে ক্ষীরাইয়ে ফুলের শোভা দেখাতে এনে চম্পট দিয়েছে। দাসপুর থানায় অভিযোগ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এখন পুলিস অবশ্য কান টানলে মাথা আনার থিওরিতেই এগচ্ছে। খোঁজ চলছে প্রেমিকের। তার হদিশ পেলেই কেল্লা ফতে। জালে ধরা পড়বে গুণবতীরাও।
No comments