Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ভোটের মুখে বর্তমান মোদি সরকারের শেষ বাজেট?

ভোটের মুখে বর্তমান মোদি সরকারের শেষ বাজেট?
এই সরকারের বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, বাজেটে যা বলা হয় বাস্তবে সেটুকুও বরাদ্দ করে না তারা। পরবর্তীকালে সংশোধিত বাজেটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরাদ্দটুকুও তারা খ…

 




ভোটের মুখে বর্তমান মোদি সরকারের শেষ বাজেট?


এই সরকারের বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, বাজেটে যা বলা হয় বাস্তবে সেটুকুও বরাদ্দ করে না তারা। পরবর্তীকালে সংশোধিত বাজেটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরাদ্দটুকুও তারা খরচ করতে পারে না। তাহলে তাদের এমন বাজেটের প্রতিশ্রুতি আদৌ কতটা বিশ্বাসযোগ্য? এই প্রশ্ন থেকেই যায়। 

গত বছরে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দর মধ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচই করতে পারেনি মোদি সরকার। গত পাঁচ বছরে এভাবেই ফেরত গিয়েছে কৃষি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ এক লক্ষ কোটি টাকা। নির্বাচনের আগে এহেন সরকারের বাজেটে যা বলা হল, তাকে এককথায় বলা যায় ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি! লক্ষ্য মহিলা, যুব, কৃষক ও শহুরে ভোট, তরুণ ডিজিটাল প্রজন্ম এবং এক বিশেষ শ্রেণির কর্পোরেটের পছন্দের বাজেট করে অর্থমন্ত্রী বিলিয়েছেন ‘অমৃতকাল’ আর ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন। অথচ স্বপ্নপূরণের অর্থ কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে বাজেটে কোনও কথা নেই। সর্বোপরি, ‘বিকশিত ভারত’ নির্মাণের কথা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলছেন বটে, দেশের অর্থনীতি কিন্তু ক্রমে ডুবছে। শুধু বৃদ্ধির হারের দিকে তাকালে হবে না, দেশের রাজস্ব ও আর্থিক ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারি, বৈষম্য প্রভৃতি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। কোন পথে রাজকোষের সঞ্চয় এবং দেশে নিয়োগ বৃদ্ধির মতো বিনিয়োগ বাড়বে, তার দিশা নেই। 

গত বছরের বাজেটে আর্থিক ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৪.৮ শতাংশ, সেটা বাস্তবে হল এই বাজেট পেশের আগে ৫.৮ শতাংশ! এবারের বাজেটের হিসেবে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি। ধরা হচ্ছে ৫.৮ শতাংশ হবে, শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে আরও বাড়বে। আর্থিক ঘাটতি বেড়ে চলা মানে সরাসরি মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত মাশুল গুনতে হবে শিল্পমহল ও সাধারণ মানুষকেই, অতিরিক্ত জিনিসপত্রের দাম চুকিয়ে।

অর্থমন্ত্রী নিজেও এসব জানেন। কিন্তু অর্থনীতিকে শুধরে সঠিক পদক্ষেপ করতে হলে আম জনতার আয় বৃদ্ধির কথা ভেবে কিছু করতে হয়। সে-পথে তিনি হাঁটেননি। অর্থমন্ত্রী চান, কর্পোরেট বেসরকারি লগ্নিভিত্তিক বিত্তবান ও উচ্চ মধ্যবিত্ত কেন্দ্রিক বিকাশ। তাছাড়া তিনি জানেন, ভোটের পর নতুন সরকার হবে, তারা পূর্ণাঙ্গ বাজেট তৈরি করবে। তখন এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে কেই-বা ভাববে? তাই দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য উদ্ধারের দিশা এই বাজেটে নেই। 

গত দশ বছরের মোদি জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে তিনগুণ—২০১৪ সালে ছিল ৫২ লক্ষ কোটি, এখন সেটা হয়েছে দেড়শো লক্ষ কোটি। ঋণ করে খাও ঘি, দেখাও ফানুস ওড়ানোর স্বপ্ন। এই হল নীতি। তাই ছত্রে ছত্রে চমকের প্রস্তাব, যা কার্যকর করার কোনও দায় সরকারের নেই। এই বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে, মহিলাদের আয় বাড়াতে ৩০ কোটি টাকার মুদ্রা লোন বরাদ্দ বা স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। এছাড়া গ্রামীণ মহিলাদের নামে বাড়ি করে দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায়। এরকম অনেক প্রতিশ্রুতি এই বাজেটে দেওয়া হয়েছে—চার মাসের ভোট অন অ্যাকাউন্টে এসব করাই সম্ভব নয়। আসলে, সরকার এই বাজেটকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল হিসেবেই ভেবেছে।

অর্থমন্ত্রীর এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যেও যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, সেটা ভয়ানক আশঙ্কার। দেশের অর্থনীতি ক্রমশ গভীরতর সঙ্কটে পড়ছে। ভারতীয় অর্থনীতি ডুবছে ঋণের গর্তে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ ব্যাঙ্কে কমছে। জিডিপির তুলনায় প্রতি বছর কমছে সঞ্চয়ের হার। এমন অবস্থায় সাধারণত সরকার খরচ তুলতে কর্পোরেট ও অতিধনীদের উপর কর বাড়ায়। সারা বিশ্বে সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সেটাই হচ্ছে। সেসব দেশে মোট রাজস্বের মধ্যে পরোক্ষ কর ৪০ শতাংশ এবং কর্পোরেট, ব্যক্তিগত ও প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ৬০ শতাংশ। এই দেশে আশ্চর্যজনকভাবেই উল্টো নিয়ম। এই সরকার ক্রমশ পরোক্ষ কর বাড়িয়ে চলেছে। তুলনায় কর্পোরেট কর রাখছে কম হারে। এবারের বাজেটে মোট কর সংগ্রহের ১৭ শতাংশ জিএসটি, পরোক্ষ কর, সেই তুলনায় কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ এবং প্রত্যক্ষ কর ১০ শতাংশ। বেশিই নির্ভর করা হচ্ছে ব্যক্তিগত আয়করের উপর। সরকারের রোজগার বাড়ানোর এই কৌশল ব্যর্থ। ঘাটতি সামাল দিতে জিএসটি বাড়ানো চলছে। ফলে জিনিসের দামও বাড়ছে। 

বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের আয়ই অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে। তার জন্য বাজেটে কোনও ঘোষণা নেই। বাড়ছে না তাদের আয়, সঞ্চয় বৃদ্ধি তো দূর অস্ত। সঞ্চয় বাড়ছে না বলে চাহিদাও বাড়ছে না। ফলে নতুন লগ্নিও হচ্ছে না। কর্পোরেট কর গত পাঁচ বছর ধরে হয় একই আছে কিংবা কমেছে, কিন্তু ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে লগ্নি বাড়েনি, ফলে বড় আকারে নিয়োগ বাড়েনি বেসরকারি ক্ষেত্রে। এবারের বাজেটে আশা করা গিয়েছিল অর্থমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এইসব সঙ্কটের জায়গাগুলো শুধরে নিতে সংস্কারের রাস্তায় তিনি হাঁটবেন। কিন্তু সে-পথ সন্তর্পণে এড়িয়ে উল্টে সোলার বিদ্যুৎ, গ্রিন ইকনমি, ব্লু ইকনমি, ৪১ হাজার রেল কোচকে বন্দেভারত বানানো, শ’পাঁচেক বিমান বন্দর নির্মাণ এবং এক হাজার বিমান কেনার প্রস্তাব দিয়ে এক নব বিকশিত ভারতের ‘ফাঁপা-গালভরা’ ছবি তুলে ধরা হল। ডিজিটাল ভারত নির্মাণের নানা প্রকল্পে যুব সমাজকে কম সুদে কিংবা বিনা সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার জন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এসব শুনতে যতটা ভালো, কার্যত দেশজুড়ে বেকারি কমাতে তেমন প্রভাব ফেলে না। বাড়ে না রাজকোষের আয়। কমে না আর্থিক ও রাজস্ব ঘাটতি।

বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর সংস্কার ভীষণ জরুরি ছিল। কিন্তু ভোটের দিকে তাকিয়েই কর্পোরেট ও বিত্তবান শ্রেণির উপর বাড়তি কর চাপানোর রাস্তায় হাঁটেননি নির্মলা দেবী। ব্যক্তিগত করের হারও একই রেখেছেন। কৃষি উন্নয়নের নামে বীজ থেকে মজুতকরণ—সবেতেই কর্পোরেট লগ্নির আহ্বান! বলির পাঁঠা হয়েই থাকল সেই গরিব কৃষক। উপেক্ষিত হল বেকার ও যুব শ্রেণি, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ গরিব লোকজন। শুধু পেশাদার ও চাকরিজীবী শ্রেণি, উচ্চ মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং কর্পোরেট শ্রেণিকে পাখির চোখ করেই এবারের বাজেট তৈরি হয়েছে। একে বাজেট না বলে আসন্ন লোকসভা ভোটের ইস্তাহার বলাই ভালো।

No comments