মুম্বই সাইবার শাখার নাম করে তমলুক শহরের এক যুবকের ৩৩লক্ষ ১৬হাজার টাকা প্রতারণা হল। গত ৩০ ও ৩১ডিসেম্বর দু’দফায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩লক্ষ ২২হাজার ৭০০টাকা ও ১৯লক্ষ ৯৪হাজার ১০১টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তমলুক শহরে পদুমবসানে একটি বেসরকা…
মুম্বই সাইবার শাখার নাম করে তমলুক শহরের এক যুবকের ৩৩লক্ষ ১৬হাজার টাকা প্রতারণা হল। গত ৩০ ও ৩১ডিসেম্বর দু’দফায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩লক্ষ ২২হাজার ৭০০টাকা ও ১৯লক্ষ ৯৪হাজার ১০১টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তমলুক শহরে পদুমবসানে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে থাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা খোয়া গিয়েছে। প্রতারিত ২৬বছর বয়সি শুভজিৎ মিশ্র পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর বাড়ি তমলুক শহরের ৫নম্বর ওয়ার্ডে পদুমবসান আচার্যপাড়ায়। ওই ঘটনার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই যুবক। ৪জানুয়ারি তিনি তমলুক সাইবার ক্রাইম থানায় এনিয়ে এফআইআর করেছেন। ওই থানার আইসি বিপ্লব হালদার বলেন, অভিযোগ আসার পর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন তমলুক শহরের ওই যুবক। গত ৩০ডিসেম্বর বেলা ২টো নাগাদ শুভজিৎবাবু একটি ফোন পান। ইরানের উদ্দেশে পাঠানো তাঁর পার্সেলে মাদক রয়েছে বলে ভয় দেখানো হয়। জবাবে তমলুকের ওই যুবক জানান, তিনি এরকম কোনও পার্সেল পাঠাননি। এরপর সাইবার অপরাধীরা জানায়, বিদেশে পার্সেল পাঠানোর সময় তাঁর আধার নম্বর ব্যবহার হয়েছে। তারপর ফোন কেটে যায়। ওইদিন বিকেল ৩টে নাগাদ আবারও একটি নম্বর থেকে ফোন পান শুভজিৎবাবু। এবার মুম্বই সাইবার ব্রাঞ্চের নাম করে তাঁকে ইন্টারনেট কলে যোগ দিতে বলা হয়। সেইমতো তমলুকের ওই যুবক স্কাইপে কলে যোগ দেন। তাঁর আধার নম্বর দিয়ে মুম্বইয়ে দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে প্রচুর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে ভয় দেখানো হয়। ওইসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানানো হয়। কোনও হোটেল, জেরক্স কিংবা কোনও দোকানে আধার কার্ড দেওয়ার পর তাঁর নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে কিনা যাচাই করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তবে, শেষ ছ’মাসের ব্যাঙ্ক লেনদেনের কপি এবং আধার কার্ডের জেরক্স দিতে হবে বলে চাপ আসে।
তমলুক শহরের ওই যুবকের সঙ্গে টানা দু’ঘণ্টা ইন্টারনেট কল চালু রেখেছিল সাইবার অপরাধীরা। উল্টোদিকে থাকা ব্যক্তি নিজেকে মুম্বই সাইবার ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর বলে পরিচয় দিয়েছিল। তবে, বিদেশে অর্থ পাচারের মতো মারাত্মক অভিযোগ থাকায় তাঁকে মহারাষ্ট্র পুলিসের ডিজির থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে বলে জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর আর এক ব্যক্তিকে ফোন রেফার করা হয়। সে নিজেকে ডিজি পরিচয় দিয়ে তমলুকের ওই যুবককে ফোনে সহযোগিতা করতে হবে বলে জানায়। শুভজিৎ তাতে সায় দেন। তাঁর মাসিক আয়, ব্যাঙ্কে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য মিলিয়ে তাঁকে রেহাই দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
উভয়ের কথাবার্তা চলাকালীন কয়েকটি ওটিপি পাঠানো হয়। বিকেল ৪টে ৫৫মিনিট নাগাদ সেই ওটিপি শেয়ার করেন তমলুকের ওই যুবক। তারপর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩লক্ষ ২২হাজার টাকা গায়েব হয়। তাঁর অ্যাকাউন্টে আর টাকা ছিল না। এরপর সাইবার অপরাধীরা অনলাইনে তাঁর পার্সোনাল লোন মঞ্জুর করিয়ে নেয়। তিনি মোটা টাকা মাস মাইনে পান।
সেইমতো প্রায় ২০লক্ষ টাকার পার্সোনাল লোন মঞ্জুর হয়। সেই টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট হয়। লোনের বিষয়টি বুঝতেই পারেননি শুভজিৎ। উল্টোদিক থেকে বলা হয়, ওই টাকা মুম্বই সাইবার ব্রাঞ্চের। তাই টাকা তাঁদের ফেরাতে হবে। ৩১তারিখ সকাল ১১টায় ডিপার্টমেন্টের টাকা ভেবে ১৯লক্ষ ৯৪হাজার টাকা নিজেই সাইবার অপরাধীদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে সর্বস্বান্ত হন শুভজিৎ।
No comments