সন্দেশখালিতে আক্রান্ত ইডি, বালু ঘনিষ্ঠ শাহজাহানের অনুগামীদের তাণ্ডব
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে সন্দেশখালিতে গিয়ে আক্রান্ত ইডির তদন্তকারী দল। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (বালু) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তৃণমূল ন…
সন্দেশখালিতে আক্রান্ত ইডি, বালু ঘনিষ্ঠ শাহজাহানের অনুগামীদের তাণ্ডব
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে সন্দেশখালিতে গিয়ে আক্রান্ত ইডির তদন্তকারী দল। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (বালু) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের সরবেড়িয়ার বাড়িতে শুক্রবার সকালে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। অনেক ডাকাডাকির পরও সাড়া না মেলায় গ্রিলের তালা ভেঙে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন সিআরপি জওয়ান এবং অফিসাররা। তখনই যেন আগুনে ঘি পড়ে। শুরু হয়ে যায় তুমুল প্রতিরোধ ও বিক্ষোভ। প্রথমে মহিলারা তাঁদের ঘিরে ধরে। তারপরই ইট, লাঠি আর রড নিয়ে আসরে নেমে পড়ে পিছনে থাকা শাহজাহানের ২০০’র বেশি ‘অনুগামী’। নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় আঁকারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান তথা শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগির জিয়াউদ্দিন (জিয়া)। বলতে শোনা যায়—‘আমরা শাজাহানের লোক! এখানে কাউকে ঢুকতে দেব না! বিজেপির নির্দেশে ইডির অভিযান মানব না’। উত্তেজিত মারমুখী জনতা ইডি কর্তা ও সিআরপি জওয়ানদের লক্ষ্য করে শুরু করে তুমুল ইটবৃষ্টি। সঙ্গে বাঁশ, লাঠি আর রড দিয়ে ব্যাপক মারধর। রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। ভাঙচুর করা হয় তাদের গাড়ি ও ক্যামেরা। এমনকী মারধরের পর প্রত্যেকের মোবাইল থেকে ছবি ডিলিট করিয়ে দেওয়া হয়। ইডির কলকাতা অফিস থেকে গোটা বিষয়টি জানানো হয় অর্থমন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। রাতে ইডি টুইট করে জানায়, ৮০০-৯০০ জন আমাদের ঘিরে ধরেছিল। খুন করাই উদ্দেশ্য ছিল ওদের।
শাহজাহান বাহিনীর তাণ্ডবে মারাত্মক জখম হয়েছেন রাজকুমার রাম, সোমনাথ দত্ত এবং অঙ্কুর নামে ইডির তিন আধিকারিক। তাঁদের সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রাজকুমারবাবুর মাথায় ছয়-সাতটি সেলাই পড়েছে। মারধরের সঙ্গেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে ইডি আধিকারিকদের চারটি মোবাইল, দু’টি ল্যাপটপ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। ইডির অভিযোগ, হামলা চলাকালীন বারবার সন্দেশখালি থানায় ফোন করলেও সাহায্য মেলেনি। এমনকী জয়েন্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিক ফোন করলেও, তা নাগাড়ে বেজে গিয়েছে। রাতেই দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছে ইডির আর একটি টিম। রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং ডিজিকে ইমেলও করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। জানানো হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে শাহজাহানকে।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে কীভাবে এল শাহজাহানের নাম? জানা গিয়েছে, ধৃত বাকিবুর রহমানকে জেরা করে নামটা সামনে আসে। শাহজাহানের নামে একাধিক কোম্পানি রয়েছে। সেই কোম্পানির অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রেশন বেনিয়মের টাকা লেনদেন হয়েছে। এর পরই শাহজাহানের ডেরায় হানা দেয় ইডি। তাণ্ডবের মুখে সেখান থেকে কোনওক্রমে পালান অফিসাররা। ভাঙা অটোয় চেপেই কয়েক কিমি দূরের একটি পেট্রল পাম্পে প্রথমে আশ্রয় নেন। এরপর ধামাখালি নদীঘাটের দিকে রওনা দেন। পথেই উল্টোদিক থেকে আসা পুলিসের এক এসআইয়ের সাহায্য নিয়ে নদী পেরিয়ে তাঁরা সন্দেশখালি থানায় আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে কলকাতা থেকে চলে আসে সিআরপির বাহিনী। আসেন বসিরহাট জেলা পুলিস সুপার জোবি থমাসও। কড়া নিরাপত্তায় মালঞ্চ ব্রিজ পেরিয়ে কলকাতায় ফিরে আসে ইডির টিম।
No comments