ইডি, সিআরপি এবং সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় আলোড়ন শুরু হওয়া মাত্রই গা-ঢাকা দিয়েছেন সন্দেশখালির তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহান। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার পরিস্থিতি একটু থিতু হতেই নিজের ‘কার্গিল বাহিনী’কে নিয়ে সরবেড়িয়া …
ইডি, সিআরপি এবং সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় আলোড়ন শুরু হওয়া মাত্রই গা-ঢাকা দিয়েছেন সন্দেশখালির তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা
শেখ শাহজাহান। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার পরিস্থিতি একটু থিতু হতেই নিজের ‘কার্গিল বাহিনী’কে নিয়ে সরবেড়িয়া ছাড়েন এলাকার ‘দাদা’। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সুন্দরবনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা অংশে, বাসন্তীর এক প্রত্যন্ত ভেড়ি বেষ্টিত এলাকায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। সঙ্গে ছিল বেতনভোগী ১৯৪ জন সশস্ত্র বডিগার্ড টিম। তাদের মধ্যে ১২ জনের একটি কোর গ্রুপ তাঁর ছায়াসঙ্গী। বিষয়টি নজরে এসেছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সির। যদিও ইডি-সিআরপির বিরুদ্ধেই ন্যাজাট থানায় পাল্টা অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকার।
এই পর্বে গুজরাতের মুন্দ্রা বন্দর এবং কলকাতা ডক ইয়ার্ড থেকে উদ্ধার হওয়া ২ হাজার কোটি টাকার মাদক মামলায় শাহজাহানের যোগসূত্রের বিষয়টি সামনে এনেছে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) এবং ডিরেক্টর অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের (ডিআরআই) মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। খোঁজখবর শুরু করেছে গুজরাত এটিএস। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বলছেন, শাহজাহান মামলায় এবার ইডির সঙ্গে তদন্তে নামবে এনসিবি এবং ডিআরআই। এই আলোড়নের মধ্যেই এদিন গোপন ডেরা থেকে অনুগামী, সমর্থক ও শাগরেদদের জন্য অডিও বার্তা জারি করেন শাহজাহান। ইডি, সিবিআইকে ভয় না পেয়ে সন্দেশখালির সব মানুষকে একযোগে লড়াই চালানোর পরামর্শও দেন। শাহজাহানের কথায়—‘এটা চক্রান্ত! এভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে বিশ্বাসী তৃণমূলের সৈনিকদের ভয় দেখানো যাবে না। মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না।’
ইডির আধিকারিকরা মনে করছেন, গোপনে নদীপথে বাংলাদেশে পালানোর মতলবে রয়েছেন শাহজাহান। সেক্ষেত্রে বাগেরহাট বা সাতক্ষীরাই সম্ভাব্য গন্তব্য। কিন্তু আজ, রবিবার ওপারে সংসদ নির্বাচনের কারণে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। বাড়তি সতর্ক বিএসএফও। রায়মঙ্গল, ইছামতী, কলাগাছিয়ার মতো যে সমস্ত নদীর প্রত্যন্ত খাঁড়ি ধরে বাংলাদেশে পৌঁছনো যায়, ভারতীয় জল সীমান্তের সেই সব অংশে টহলদারি বাড়িয়েছে তারা। এই আবর্তেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের এই কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিস (এলওসি) জারি হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে দেশের সব বিমানবন্দর এবং স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের টাকা রয়েছে শাহজাহানের কাছে—মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের চিঠি থেকে নির্দিষ্ট তথ্য মেলার পরই শুক্রবার সরবেড়িয়ার আকুঞ্জিপাড়ায় হানা দিয়েছিল ইডি। ওই টাকার সন্ধান যাতে তাঁরা না পান, সে কারণেই জনরোষের আড়ালে হামলা চালায় শাহজাহানের লোকজন। এমনটাই মনে করছেন ইডি আধিকারিকরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪ জনের বডিগার্ড টিমের বেশ কয়েকজন সদস্যও হামলার সময় ‘বীরদর্পে’ হাজির হয়েছিল। এদের কারও বেতন ৪০০০, আবার কারও জোটে ৩৫ হাজার টাকা। তদন্তকারীরা বলছেন, প্রতিদিন সকালে ‘দাদা’কে বাড়ি থেকে এসকর্ট করে ব্যবসা কেন্দ্র বা পার্টি অফিসে পৌঁছে দেওয়া এবং বাড়ি ফিরিয়ে আনাই এদের মূল কাজ। বডিগার্ডদের কোর টিম সন্দেশখালির বাইরে অন্যত্র ‘ছায়াসঙ্গী’ হতো। এছাড়াও সরকারি উর্দিধারী দেহরক্ষী তো থাকতই।
No comments