নয়া জালিয়াতি টেলিগ্রাম ট্যাস্ক স্ক্যাম!
গত এপ্রিল মাসে ভাস্কর পাণ্ডে ফেসবুকে দেখতে পান ঘরে বসে পার্ট টাইম কাজের অফার। তিনি যোগাযোগ শুরু করেন। সেখানে খপ্পরে পড়েন এক জালিয়াতি চক্রের। তারা ভাস্কর বাবুকে টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত কর…
নয়া জালিয়াতি টেলিগ্রাম ট্যাস্ক স্ক্যাম!
গত এপ্রিল মাসে ভাস্কর পাণ্ডে ফেসবুকে দেখতে পান ঘরে বসে পার্ট টাইম কাজের অফার। তিনি যোগাযোগ শুরু করেন। সেখানে খপ্পরে পড়েন এক জালিয়াতি চক্রের। তারা ভাস্কর বাবুকে টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করেন । বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও লিংকে লাইক, শেয়ার বা কমেন্ট করে কিছু টাকা উপার্জনের টোপ দেয় প্রতারকরা। সেই ফাঁদে পা দিয়ে ভাস্কর বাবু প্রতারিত হন ও খোঁয়া যায় ওনার প্রায় দু'লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা ।
তদন্তে নেমে পূর্ব মেদিনীপুর সাইবার ক্রাইম থানার আধিকারিক সৌরভ মিত্রের প্রচেষ্টায় প্রতারিত টাকার প্রায় পুরোটাই উদ্ধার হয়। আদালতের রায়ে ভাস্কর পান্ডের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সেই টাকা ফেরত দিতে পেরেছেন !
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘরে বসে আয়ের সুযোগ। এমনই বিজ্ঞাপন দেখে সাড়া দিয়েছিলেন মহিষাদলের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ভাস্কর পাণ্ড। বাড়তি আয় করতে গিয়ে গুণাগার দিতে হবে বলে কল্পনাও করতে পারেননি ওই ম্যানেজার। তারপর নানা অছিলায় দু’লক্ষ ৪২ হাজার টাকা খুইয়ে শেষপর্যন্ত ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তমলুক সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অবশেষে পুলিসের তৎপরতায় দু’লক্ষ ৩৮হাজার টাকা ফেরত পেলেন ভাস্করবাবু। আদালতের নির্দেশে দু’দফায় ওই টাকা পেয়েছেন। টাকা পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন ভাস্করবাবু। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে কোনওদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের ফাঁদে পা দেবেন না বলে অঙ্গীকারও করলেন।
ভাস্করবাবুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানার রবীন্দ্রনগর গ্রামে। এই মুহূর্তে মহিষাদলে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ম্যানেজার পদে কর্মরত। গত ১৩এপ্রিল নিজের ফেসবুক পেজে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সেখানে ঘরে বসে আয়ের সুযোগ আছে বলে উল্লেখ ছিল। তাতে ‘অ্যাপ্লাই নাও’ বক্সে ক্লিক করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে একটি লিঙ্ক আসে। সেটি ক্লিক করে খুলতেই রেজিস্ট্রেশন করান। এজন্য ৮০টাকা বোনাস পান। এই বিজ্ঞাপন আসলে প্রতারণার ফাঁদ তখনও টের পাননি ভাস্করবাবু। তারপর উল্টোদিক থেকে ২০০টাকা ট্রান্সফার করতে বলা হয়। ওইদিনই অনলাইনে ২০০টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর নিজের অ্যাকাউন্টে ৪০০টাকা রিটার্ন পান। পরদিন এক হাজার টাকা অনলাইনে জমা করেন। রিটার্ন হিসেবে ২০২০টাকা পান। তারপর অতিরিক্ত লাভের আশায় দফায় দফায় দু’লক্ষ ৪২হাজার টাকা ট্রান্সফার করেন। পাঁচ লক্ষ ১৭হাজার ৭৫০টাকা ফেরত দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দফায় দফায় টাকা চাওয়া হয়েছিল। তাতেই সাড়া দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার।
গত ১৭এপ্রিল তমলুক সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভাস্করবাবু। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার হওয়া সবকটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস। সেইসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া চলে। প্রথমে এক লক্ষ টাকা ফেরানো হয়। তারপর আরও এক লক্ষ ৩৮হাজার টাকা ফেরানো হয়েছে। এভাবে দু’দফায় টাকা ফেরত পেয়েছেন ওই ব্যাঙ্ক ম্যনেজার। আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে তাঁকে ওই টাকা ফেরত দিয়েছে তমলুক সাইবার ক্রাইম থানা।
ইদানীং সাইবার অপরাধের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। প্রতারকরা প্রতারণার কৌশলও বদলেছে। কখনও শুক্রাণু বিক্রির লোভনীয় অফার, আবার কখনও মোটা অর্থের প্রলোভনে টাওয়ার বসানোর টোপ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে ক্রেডিট কার্ড ও অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাজের নাম করে অহরহ সাইবার জালিয়াতি চলছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং লোভ সংবরণ করতে হবে বলে সাইবার ক্রাইম থানার অফিসার সৌরভ মিত্র জানিয়েছেন।
ভাস্করবাবু বলেন, এই ধরনের বিজ্ঞাপনে সাড়া দেওয়া ভুল হয়েছিল। এই ভুল আর জীবনে কখনও করব না। আমার প্রতারণার প্রায় সব টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে তমলুক সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস। এজন্য তদন্তকারী অফিসারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
No comments