সংবিধান-প্রণেতার প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল (জন্ম : ২৯ জানুয়ারি, ১৯০৪ - মৃত্যু : ৫ অক্টোবর, ১৯৬৮) আধুনিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যক্তিত্ব এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট …
সংবিধান-প্রণেতার প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল (জন্ম : ২৯ জানুয়ারি, ১৯০৪ - মৃত্যু : ৫ অক্টোবর, ১৯৬৮) আধুনিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যক্তিত্ব এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। সংবিধান প্রণেতা হিসেবে দেশের আইন ও শ্রম মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও তিনি কমনওয়েলথ ও কাশ্মীর বিষয়ক দ্বিতীয় মন্ত্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী যোগেন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে পাকিস্তানের মুখপত্র ছিলেন। ভারত বিভাজনের কয়েক বছর পর তিনি পাকিস্তানে অবস্থান করেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বন্দর নগরী ও পাকিস্তানের সাবেক রাজধানী করাচীতে বসবাস করতেন। তিনি দেশ বিভাগের কয়েক বছর পরে পাকিস্তান প্রশাসনের হিন্দু বিরোধী পক্ষপাতিত্ব তুলে ধরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে পদত্যাগ জমা দেওয়ার পরে ভারতে পাড়ি জমান।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন :
যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার মৈস্তারকান্দিতে। পিতা রামদয়াল মণ্ডল ও মাতা সন্ধ্যা দেবী। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে অঙ্ক ও সংস্কৃতে ভালো নম্বর পেয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ এবং গণিত ও সংস্কৃত নিয়ে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবন :
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার ছোটো আদালতে শিক্ষানবিশ হিসাবে যোগ দেন। পরে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল সদর আদালতে আইনজীবী হন। সেসময় হতেই তিনি সামাজিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির উন্নতিসাধনে জনসেবামূলক কাজকর্মে যুক্ত হন।
রাজনৈতিক জীবন :
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে নিম্নবর্গের মানুষদের দাবিদাওয়া সামনে রেখে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন। সাধারণ নির্বাচনে তিনিই প্রথম তফশিলি জাতির একমাত্র প্রতিনিধি যিনি সারা ভারতে আইনসভার একটি সাধারণ আসন দখল করতে পেরেছিলেন। কেন্দ্রটি ছিল বাখরগঞ্জ। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় বিধানসভায় তফশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যদের নিয়ে তিনি 'ইনডিপেনডেন্ট শিডিউলড কাস্ট পার্টি' নামে একটি নিরপেক্ষ তফশিলি দল গঠন করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি সমবায় ও ঋণদান বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের অন্তর্বর্তী সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্বভার পালন করেন। বাংলার সোহরাওয়ার্দির মন্ত্রীসভায় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করেছেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন হয়। এরপর তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ও অস্থায়ী সভাপতি হন। দলিত শ্রেণীর নেতা হিসেবে যোগেন্দ্রনাথ কতকগুলো সাধারণ বিষয় নিয়ে মুসলিম লীগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তিনি আশা করেছিলেন যে, এর ফলে দলিত শ্রেণীর লোকেরা লাভবান হবে। ফলশ্রুতিতে তিনি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায় আইন ও শ্রম মন্ত্রী হন। এর মাধ্যমে সরকার প্রশাসনে সর্বোচ্চ স্তরের হিন্দু সদস্য হন।
ভারতে প্রত্যাবর্তন (১৯৫০) :
পাকিস্তানি প্রশাসনের হিন্দু বিরোধী পক্ষপাতিত্ব অনুধাবন করার কথা উদ্ধৃত করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার পরে ১৯৫০ সালে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ভারতে ফিরে আসেন। তিনি তাঁর পদত্যাগের চিঠিতে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি সামাজিক অন্যায় ও পক্ষপাতমূলক আচরণ সম্পর্কিত ঘটনা উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পরে অজ্ঞাতনামা জীবনযাপন করার পরে ১৯৬৮ সালের ৫ অক্টোবর তিনি তাঁর গৃহে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন।
No comments