প্রয়াণ দিবসে ওস্তাদজীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (জন্ম : ৮ অক্টোবর, ১৮৬২ - মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২) ছিলেন একজন বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ। 'বাবা আলাউদ্দিন খান' নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। সেতার ও সানাই এবং রাগ সঙ্গীতে বিখ…
প্রয়াণ দিবসে ওস্তাদজীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (জন্ম : ৮ অক্টোবর, ১৮৬২ - মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২) ছিলেন একজন বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ। 'বাবা আলাউদ্দিন খান' নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। সেতার ও সানাই এবং রাগ সঙ্গীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসাবে সারা বিশ্বে তিনি প্রখ্যাত। মূলতঃ সরোদই তাঁর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহন হলেও সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেট সহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্রে তাঁর যোগ্যতা ছিল অপরিসীম। আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে, যা বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। তাঁর সন্তান ওস্তাদ আলী আকবর খান ও অন্নপূর্ণা দেবী নিজস্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আচার্যের বিখ্যাত শিষ্যরা হলেন - পণ্ডিত রবি শঙ্কর, পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, বসন্ত রায়, পান্নালাল ঘোষ সহ আরো অনেকে। আচার্য আলাউদ্দিন খান সাহেব নিজেও অনেক বিখ্যাত গুরুর থেকে দীক্ষা নিয়েছেন। আলাউদ্দিন খাঁ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরীর সংগীত সভায় যন্ত্রবাদনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, জগৎকিশোর সানন্দে তার ব্যবস্থা করে দেন। জানা যায় যে, আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতে পারদর্শিতা দেখাবেন, এমন অভিলাষ নিয়েই সকাল বেলায় সভায় আসন গ্রহণ করেন। সেসময় মুক্তাগাছার সংগীত সভায় ছিলেন বিখ্যাত সরোদী আহমদ আলী খাঁ। আলাউদ্দিনের সভায় আসার আগে থেকেই তিনি সরোদ বাজাচ্ছিলেন। তাঁর বাজনা শুনে আলাউদ্দিন খাঁ অভিভূত হয়ে পড়েন ও তাঁর শিষ্যত্ব প্রার্থনা করেন। জগৎকিশোরের অনুরোধে আহমদ আলী খাঁ আলাউদ্দিনকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করেন। জগৎকিশোর আলাউদ্দিনকে একখানা সরোদ উপহার দেন। মুক্তাগাছা কিছুদিন থেকে আহমদ আলী খাঁ রামপুর আসলে, আলাউদ্দিন রামপুর আসেন ও সরোদ শিক্ষা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। কিছুদিন পর আহমদ আলী জানান যে, তাঁর শিক্ষাগ্রহণ সমাপ্ত - এবার যেন তিনি ওয়জির খাঁর নিকট শিক্ষাগ্রহণ করেন।
এরপর তিনি ওস্তাদ ওয়াজির খান এর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন
১৯৩৫ সালে বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন তিনি। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডের রানী কর্তৃক 'সুরসম্রাট' খেতাবপ্রাপ্ত হন। ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পদ্মভূষণ ছাড়াও পদ্মবিভূষণ, বিশ্ব ভারতীয় দেশীকোত্তম সহ দিল্লি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।
আলাউদ্দিনের ডাকনাম ছিল আলম। বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। সুরের সন্ধানে তিনি দশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিত হন। অতঃপর কলকাতা গিয়ে তিনি প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তবে সাধক গোপালকৃষ্ণ একটি শর্তারোপ করলেন, আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণের সময়, যে কমপক্ষে ১২ বছর একনাগাড়ে সঙ্গীত সাধনা করতে হবে সেখানে থেকে। আলাউদ্দিন খাঁ রাজি হয়ে গেলেন আরোপিত শর্তে। কিন্তু সাত বছরের শেষদিকে হঠাৎ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন সঙ্গীতসাধক গোপালকৃষ্ণ।
তাঁর কয়েকজন বিখ্যাত শিষ্য :
রবি শঙ্কর,
নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়,
পান্নালাল ঘোষ,
ওস্তাদ বাবর আলী খান।
উত্তরসূরী :
তাঁর ছেলে আলী আকবর খাঁ বা মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবী ছাড়াও তাঁর ভাগ্নে রাজা হোসেন খান এবং নাতি আশীষ খানও সঙ্গীতজ্ঞ হয়েছেন। তাঁর অন্যান্য শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন রবি শঙ্কর, নিখিল ব্যানার্জী, ভি জি যোগ, বসন্ত রায়, শ্রীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, পান্নালাল ঘোষ, বাহাদুর খান, রবিন ঘোষ, শরণ রাণী, নলীন মজুমদার, যতীন ভট্টাচার্য, রাজেশ চন্দ্র মৈত্র, ডেভিড পোদিআপ্পুহামি এবং ডব্লিউ. ডি. অমরদেব।
আলাউদ্দিন খাঁর বাড়ি ছিল মৈহারে। বাড়িটি অম্বিকা বেড়ি কর্তৃক সংস্কার করা হয়েছিল একটি উন্নয়নের অংশ হিসাবে।
চলচ্চিত্র :
• উস্তাদ আলাউদ্দীন খান (১৯৬৩), ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র।
• বাবা আলাউদ্দীন খান (১৯৬৫), হরিসাধন দাসগুপ্ত পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র।
• রাগা (১৯৭১), হাওয়ার্ড ওয়ার্থ পরিচালিত। ইস্ট মিটস ওয়েস্ট মিউজিক কর্তৃক ২০১০। রিমাস্টার করা সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
• মাইহার রাগ (১৯৯৩), সুনীল শানবাগ পরিচালিত। মাইহারে আলাউদ্দিন খানের বিধ্বস্ত ঐতিহ্যের দিকে এক নজর, ১৯৯৪ সালে National Film Award for Best Non-Feature Film পুরস্কার পায়।
No comments