কার দখলে থাকবে পূর্ব মেদনীপুরহলদিয়া বন্দরঃ বাম আমলে পূর্ব মেদিনীপুরে বিরোধীদের সামনে অদৃশ্য ‘লক্ষ্মণরেখা’ টেনে দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন বিরোধীদের সেই লক্ষ্মণ রেখা অতিক্রম করার সাহস জুগিয়েছিল। আন্দোলনের জ…
কার দখলে থাকবে পূর্ব মেদনীপুর
হলদিয়া বন্দরঃ বাম আমলে পূর্ব মেদিনীপুরে বিরোধীদের সামনে অদৃশ্য ‘লক্ষ্মণরেখা’ টেনে দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন বিরোধীদের সেই লক্ষ্মণ রেখা অতিক্রম করার সাহস জুগিয়েছিল। আন্দোলনের জেরে ২০০৮সালে জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। তারপর থেকেই জেলা নিয়ন্ত্রণের ভরকেন্দ্র দ্রুত বদলাতে থাকে। হলদিয়ার পরিবর্তে কাঁথি। দ্রুত বাড়তে থাকে পারিবারিক ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা নিয়েই সংঘাতের শুরু। তার জেরেই একুশের নির্বাচনের আগে ঘটে যায় আড়াআড়ি বিভাজন। অনেকে মনে করেছিলেন, পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল দলটাই হয়তো উঠে যাবে। কিন্তু, ঘটল তার উল্টো। জেলায় আধিপত্য বজায় রাখল তৃণমূলই। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। গেরুয়ার রং আরও ফিকে হয়েছে। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে উঠেছে জেলায় দলবদলুদের কাছে অস্তিত্ব প্রমাণের লড়াই।
পূর্ব মেদিনীপুরের দিকে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ নজর রয়েছে। তাঁর চারদিনের নবজোয়ার কর্মসূচির রেশ এখনও জীবন্ত। পাড়ায়, চায়ের দোকানে চর্চা চলছে তাঁর পদযাত্রা নিয়ে। ২০ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছেছিলেন জমি আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রামে। তাঁর এই জেদ তৃণমূল কর্মীদের লড়াই করার শক্তি জুগিয়েছেন। তাকে সম্বল করেই পঞ্চায়েতে ঝাঁপাতে চলেছেন শাসক দলের কর্মীরা।
২০২১সালে নির্বাচনের আগে এই জেলায় রীতিমতো ‘গেরুয়া ঝড়’ উঠেছিল। তারপরেও জেলার ১৬টির মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল ৯টি আসনে। বিজেপি পেয়েছিল৭টি। এখন সেই ঝড় তো দূরের কথা, হাওয়ার ছিঁটেফোঁটা নেই। তারউপর বিজেপির অন্দরে বেড়েছে আদি-নব্য সংঘাত। হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, ময়নার বিধায়ক অশোক দিন্দার মতো ‘তৎকাল বিজেপি’ নেতাদের সঙ্গে পুরনো নেতা-কর্মীদের বনিবনা নেই। এরইমধ্যে শুক্রবার নন্দীগ্রাম বিধানসভার তিনবারের বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি বিজন দাস তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে এটা নতুন কিছু নয়, বিধানসভা ভোটের পর থেকেই এই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
একুশের ভোটে এই জেলায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির মূলে ছিল সিপিএমের ভোট সিফ্টিং। কিন্তু গত দু’বছরে সিপিএম গা ঝাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রায়ই পূর্ব মেদিনীপুরে আসছেন। তাতে বামেদের মাটি কিছুটা শক্তপোক্ত হয়েছে। তাই কিছু এলাকায় এবার পঞ্চায়েত ভোটে প্রধান বিরোধীর লড়াই হবে বিজেপি ও সিপিএমের মধ্যে। তবে ভগবানপুর, খেজুরি, এগরা, পটাশপুর প্রভৃতি এলাকায় শাসক দলের লড়াইটা বিজেপির সঙ্গেই হবে।
এই জেলায় ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ৬৬৫। ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ৪২৯০টি। জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ৭০। আচমকা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হওয়ায় এই বিপুল সংখ্যক আসনে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না বিরোধীরা। তাই কমিশনের বাপ-বাপান্ত চলছে। বিজেপি জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শাসক দলের সঙ্গে সাধারণ মানুষ নেই। তাই ওরা মনোনয়ন আটকে দিতে চাইছে। কিন্তু, আমরা সব বাধা টপকে মনোনয়ন পেশ করব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ২০১৮সালের পুনরাবৃত্তি ২০২৩সালে হবে না। মনোনয়নে বাধা দিলেই হবে প্রতিরোধ। জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। তাই কমিশনকে দোষারোপ করছে। পঞ্চায়েতে তৃণমূল ভালো ফল করবে, সেটা ওরা বুঝে গিয়েছে।
পরিষেবা দেওয়ায় এই সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জেলায় ১৩লক্ষ ৪০হাজার চাষি কৃষকবন্ধুর ভাতা পান। ১৩লক্ষ ৮৫হাজার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তা। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেয়েছেন ১৪লক্ষ মানুষ। বাড়ি বাড়ি পরিষেবা পৌঁছে যাওয়ায় সরকারের সঙ্গে মানুষের সমন্বয় দৃঢ় হয়েছে। বিরোধীদের যত ভয় এই পরিসংখ্যানকেই।
No comments