ফিল্মি কায়দা ২৫ লক্ষ টাকা ভোজ্য তেল বোঝাই ট্রাকবন্দর শহর ও লাগোয়া এলাকায় নজরদারির জন্য হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এক কোটি টাকা খরচে এবার শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এই কাজে ঠিকাদার সংস্থা গড়িমসি করছে বলে অভিযো…
ফিল্মি কায়দা ২৫ লক্ষ টাকা ভোজ্য তেল বোঝাই ট্রাক
বন্দর শহর ও লাগোয়া এলাকায় নজরদারির জন্য হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এক কোটি টাকা খরচে এবার শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এই কাজে ঠিকাদার সংস্থা গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ। শহরের প্রবেশদ্বার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সিটিসেন্টারে সিসিটিভি ক্যামেরা এখনও বসানোই হয়নি। এইচডিএর চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কোন্থাম সুধীর বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও এলাকায় কাজও শুরু করেছে। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ায় এগুলি উদ্বোধন হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই এগুলির দায়িত্বভার পুলিসকে দেওয়া হবে। এইচডিএ জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর একাংশ খরচ শিল্প সংস্থাগুলি দিয়েছে। শিল্প সংস্থাগুলির বক্তব্য, শিল্প ও মানুষের নিরাপত্তার জন্যই তারা সিসিটিভি বসানোর খরচ দিয়েছে। কিন্তু তা কতটা কার্যকরীভাবে পুলিস ব্যবহার করবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস পদ্ধতির নজরদারি ফাঁকি দিয়ে ফের হলদিয়া থেকে উধাও হয়ে গেল প্রায় ২৫লক্ষ টাকার ভোজ্যতেল বোঝাই ট্রাক। হলদিয়ার একটি নামী সংস্থার ভোজ্যতেলের পাউচ ভর্তি ২হাজার কার্টুন বক্স নিয়ে ওই ট্রাক হলদিয়া থেকে শিলিগুড়ি যাচ্ছিল। মাঝরাস্তায় ট্রাকটি জিপিএস সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রহস্যজনকভাবে উধাও হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার দু'সপ্তাহ পরও ট্রাকের হদিশ মেলেনি। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ঠিক একইভাবে জিপিএস সিস্টেমকে ধোঁকা দিয়ে হলদিয়া থেকে বিহার যাওয়ার পথে মাঝরাস্তায় উধাও হয়ে গিয়েছিল ২২ লক্ষ টাকার ভোজ্যতেল বোঝাই একটি ট্রাক। শুধু ভোজ্যতেল নয়, পণ্য সহ ট্রাক বা ট্যাঙ্কার হাইজ্যাকিং কিংবা লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্য যাতায়াতের পথে রহস্যজনকভাবে উধাও হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিল্প সংস্থাগুলি। শিল্পসংস্থা, এজেন্সি বা ট্রান্সপোর্টাররা এজন্য পুলিসি নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছে। অন্যদিকে, শিল্পাঞ্চলে চুরি, ছিনতাইয়ে লাগাতর নজরদারির জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজে ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়ার আদানি উইলমার ভোজ্যতেল কারখানার ইউনিট ওয়ান থেকে গত ৩১ মে ভোজ্যতেল বোঝাই করে ওই ট্রাক। লাইম লাইট সেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি এজেন্সির দায়িত্বে পণ্য বোঝাই করে শিলিগুড়ি পাঠানো হচ্ছিল। এক কিলোগ্রাম ও ৫০০গ্রাম ওজনের সোয়া অয়েল এবং সর্ষের তেলের পাউচ কার্টুন বক্সে ভর্তির পর তা বোঝাই হয় ওই গাড়িতে।
শিলিগুড়ির এনভি ট্রেডার্স নামে একটি সংস্থার গোডাউনে ওই মাল পাঠানোর কথা ছিল। ওই পণ্যের মোট মূল্য ২৪লক্ষ ৭৪হাজার টাকা। মাল বোঝাই করে ট্রাকটি ওইদিন সন্ধে সাড়ে ৬টায় আদানি কারখানার গেট থেকে বের হয় শিলিগুড়ির উদ্দেশে। কিন্তু ট্রাকটি ১১৬নম্বর হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কের পথ না ধরে উল্টোদিকে সুতাহাটা থানা এলাকায় চলে যায়। জিপিএসের তথ্য থেকে জানা যায়, ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার সময় ট্রাকটি সুতাহাটা থানার চৈতন্যপুর সংলগ্ন রামপুরে দাঁড়িয়েছিল। পরদিন অর্থাৎ ১জুন রাত ১১টা ১৭ মিনিটে হাওড়ার পাঁচলা এলাকায় ১৬নম্বর মুম্বাই রোডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারপরই হঠাৎ জিপিএসের নজরদারি থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ট্রাকটি। তবে বিদ্যাসাগর সেতুর ফাস্ট ট্যাগ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২জুন রাত ১২টা ৪২ মিনিটে টোল প্লাজা ক্রশ করেছিল ট্রাকটি।
এই ঘটনার পর প্রায় দু'সপ্তাহ কেটে গেলেও মাল সহ ট্রাক শিলিগুড়ি না পৌঁছনোয় লাইম লাইট এজেন্সির পক্ষ থেকে সুতাহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কারণ হলদিয়ার সুতাহাটা থানা এলাকাতেই ট্রাকটিকে শেষ দেখা গিয়েছে। কেন ওই এলাকায় চালক এবং ড্রাইভার ট্রাক নিয়ে গিয়েছিল তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। পুলিস জানিয়েছে, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই তদন্তে নেমেছে পুলিস। হলদিয়ার কোনও ট্রাক এই প্রথম সুতাহাটা এলাকা থেকে গায়েব হল। তদন্তকারী পুলিস জানিয়েছে, কেন ট্রাকটি ২৪ঘণ্টা ধরে হলদিয়া ও হাওড়ার মধ্যে ঘুরপাক খেল তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গত ১৪মাসে হলদিয়া থেকে ভোজ্যতেল সহ বিভিন্ন শিল্প পণ্যের ১২-১৪টি ট্রাক ছিনতাই বা লুট হয়েছে। এর মূল্য কয়েক কোটি টাকা। কখনও বন্দরের স্টিম কোল বা কোকিং কোল, কখনও প্লাস্টিক দানা, কখনও ভিন দেশ থেকে হলদিয়ায় আসা কোটি টাকা দামের ফেরো সিলিকন, দামি ধাতব পাত লোপাট হচ্ছে অবাধে। পুলিসের নজরদারি ও তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে শিল্প সংস্থাগুলি। শিল্প সংস্থা ও বিভিন্ন এজেন্সি শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ।
No comments