Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দূষিত বাতাসের, সেখান থেকেই বিষ ঢুকছে শরীরে। ডেকে আনছে বিভিন্ন রোগ

দূষিত বাতাসের, সেখান থেকেই বিষ ঢুকছে শরীরে। ডেকে আনছে বিভিন্ন  রোগবেঁচে থাকার জন্য দরকার যে বাতাসের, সেখান থেকেই বিষ ঢুকছে শরীরে। ডেকে আনছে বিভিন্ন রোগ। জানালেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর প্রাক্তন ডিন …

 


দূষিত বাতাসের, সেখান থেকেই বিষ ঢুকছে শরীরে। ডেকে আনছে বিভিন্ন  রোগ

বেঁচে থাকার জন্য দরকার যে বাতাসের, সেখান থেকেই বিষ ঢুকছে শরীরে। ডেকে আনছে বিভিন্ন রোগ। জানালেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর প্রাক্তন ডিন ও ডিরেক্টর প্রফেসর ডাঃ মধুমিতা দোবে।


বর্তমানে দেশের অন্যতম দূষিত শহরের তালিকায় একেবারে প্রথমদিকে নাম কল্লোলিনী কলকাতার। যার জেরে পৌষ-মাঘ জুড়ে হারিয়ে যাচ্ছে মাঘের শীত। চৈত্র-বৈশাখে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রীষ্মের আমের বোল। কুয়াশা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া নিয়েই শীত কাটাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। শুধু শীত-গ্রীষ্ম বলেই নয়, আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনা সারা বছর জুড়েই চলছে। সঙ্গে দোসর নানা অকাল বিপর্যয়। দেশ-বিদেশের নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই বিপর্যয়গুলোর নেপথ্যেও  রয়েছে দূষণের ‘কালো হাত’। 

পরিবেশবিদরা বলছেন, বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পিএম ১০ ও পিএম ২.৫ কণাই আসল ‘ভিলেন’। পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০-এর অর্থ হল ২.৫ মাইক্রন ঘনত্বের সূক্ষ্ম কণা থেকে ১০ মাইক্রন ঘনত্বের ধূলিকণা। এই দুই কণার প্রভাবে বাতাস ভারী হচ্ছে। বাড়ছে বিষাক্ত পদার্থ। তার জেরেই শরীরে বাসা বাঁধছে নানা কঠিন অসুখ। বিশেষ করে পিএম ২.৫ ফুসফুসের বেশি ক্ষতি করে। এই দূষণ রুখতে তাই চিকিৎসক ও পরিবেশবিদদের সঙ্গে কথা বলে রাজ্য ও কেন্দ্র একটি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। যার সারমর্ম, ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় স্তরে বাতাসে ভাসমান এই পিএম ২.৫ ধূলিকণার পরিমাণ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো। কিন্তু কলকাতা সহ অন্যান্য শহরের দূষণের পরিমাপ যা উঠে আসছে, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর পথ ক্রমেই অনতিক্রম্য এক ব্যর্থতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর এই দুই কণার জেরে দেশে বিভিন্ন অসুখের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। 

দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ইঞ্জিন চালু

 রাখাও ডেকে আনছে দূষণ

বাতাসে ভাসমান ধুলো সরাসরি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কল-কারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া, জলভাগ বুজিয়ে বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ ও সেই নির্মাণকার্যের ধুলো, ইট-বালি-সিমেন্টের গুঁড়ো, রাস্তা তৈরির ধোঁয়া, ধুলো,  নিম্নবিত্ত পরিবারে কয়লার উনুন থেকে নির্গত ধোঁয়া, এসি ও ফ্রিজ থেকে বেরনো ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, রাস্তায় ওড়া বিভিন্ন ময়লা, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ড্রপলেট— সব মিলিয়ে বাতাসে ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ অনেক বেড়ে যায়। সিগন্যালে গাড়ি থামলে, বাচ্চাদের স্কুলের সামনে অভিভাবকদের গাড়ির ভিড়ে একটু চোখ রাখলেই দেখবেন, অধিকাংশই গাড়ির ইঞ্জিন চালু রেখেই অপেক্ষা করছেন। আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না যে, ইঞ্জিন বন্ধ না করলে কিন্তু বাতাসে অনেক বেশি পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ মিশে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।  শীতে  একটু উষ্ণতার আঁচ নিতে অনেকেই প্লাস্টিক ও কাগজ জ্বালিয়ে আগুনের ওম নিতে শুরু করেন। এতে সাময়িক আরাম হয় ঠিকই। কিন্তু ওই প্লাস্টিক, কাগজ, পাতা, কাঠের টুকরো পুড়ে যে ধোঁয়া তৈরি হয়, তাতে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। আক্রান্ত হয় রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টও।

দূষণে অসুখের ছায়া

শিশু, গরিব ও বয়স্ক—এই তিন শ্রেণির মধ্যে দূষণ থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রকোপ অনেক বেশি হয়। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। বায়ু দূষিত কণায় ভরে উঠে ভারী হয়ে নীচে নেমে আসে। শিশুরা আকারে ছোটখাট হয় বলে মাটির কাছাকাছি থাকা এই অতি দূষণ স্তর থেকে তাদের ক্ষতির শঙ্কা বাড়ে। গরিব মানুষও আর্থিক কারণে কাঠ-কয়লার ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এঁরা দূষণের সবচেয়ে বড় শিকার। এই দূষণ কণাগুলি শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। ফুসফুস, ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ফুসফুসে সংক্রমণই নয়, দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকা অ্যাসিড, নানা রকমের ক্ষতিকর রাসায়নিক, বিভিন্ন প্রকারের ধাতু, মাটি, ধুলো— সমস্ত উপাদান যখন ফুসফুসে প্রবেশ করে, তখন তা ফুসফুসে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। ফলস্বরূপ দেখা দেয় ক্যান্সারের মতো রোগ।  হৃৎপিণ্ডেও এইসব ক্ষতিকর কণা জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ সবকিছুতেই দূষণের ভয়াল দখল আছে। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত, মানসিক উদ্বেগ, এমনকী ডায়াবেটিসের নেপথ্যেও ভূমিকা রয়েছে দূষণের। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এইডস, টিবি, ম্যালেরিয়া সহ নানা রোগে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে দূষণের কারণে। দূষণের ভার কমলে এ পৃথিবী সত্যিই বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত সময়ের আগেই জন্মে যাওয়া কিছু শিশুর কাছে। দেখা যায়, প্রি-ম্যাচিওর শিশুরা যেসব জটিলতার শিকার হন, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে অনেক সহজ হতো, যদি খানিকটা শুদ্ধ বাতাসের অক্সিজেন আমরা, পূর্বতন প্রজন্ম তাদের জন্য রেখে যেতে পারতাম। সুতরাং মারী নিয়ে ঘর করা বাঙালির কাছে দূষণের বিষবায়ু বর্তমানে নয়া চ্যালেঞ্জ। বড় চ্যালেঞ্জ। 

লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়


No comments