Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মহান অভিনেতার জন্মদিবসে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম 'হাসির রাজা' চিন্ময় রায় - বাঙালি চিরকাল মনে রাখবে পর্দার টেনিদাকে।

মহান অভিনেতার জন্মদিবসে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম'হাসির রাজা' চিন্ময় রায় - বাঙালি চিরকাল মনে রাখবে পর্দার টেনিদাকে।
চিন্ময়বাবুর জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লায়। ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি। রুপোলি পর্দায় কমেডিয়ান হিসেবে জনপ্রিয় হলেও অভিনয় …

 



মহান অভিনেতার জন্মদিবসে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম

'হাসির রাজা' চিন্ময় রায় - বাঙালি চিরকাল মনে রাখবে পর্দার টেনিদাকে।


চিন্ময়বাবুর জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লায়। ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি। রুপোলি পর্দায় কমেডিয়ান হিসেবে জনপ্রিয় হলেও অভিনয় জগতে চিন্ময়বাবুর শুরুটা হয়েছিল থিয়েটারের মঞ্চে। নান্দীকারের মতো গ্রুপ থিয়েটারের দলে। তবে এক সময় সে দলও ছেড়ে দেন তিনি। চিন্ময়বাবু পরে বলেছিলেন, “সেটাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।”


হাল্লা রাজার মন্ত্রীর ঘর। মন্ত্রী খাচ্ছেন আর গুপ্তচরের কাছে খবর নিচ্ছেন শুণ্ডি রাজ্যের। মন্ত্রীর সামনে সাজানো নানান রকম খাবার। সেই দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে গুপ্তচর। রোগা পাতলা চেহারা, গায়ে নোংরা জামা। দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন ভালো করে খায়নি। 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' এ এই গুপ্তচরের ছোট্ট চরিত্রটা ছিল চিন্ময় রায়ের। সত্যজিৎ রায় তাঁকে বলেছিলেন, "একটা ছোট্ট চরিত্র আছে। তুমি করবে?" চিন্ময় রায় বলেছিলেন, "কি বলছেন! কণামাত্র চরিত্র হলেও, আপনার ছবিতে যদি একবার মুখ দেখাতে দেন, তাতেই আমি রাজি"। গুপ্তচরের চরিত্রে তিনি স্বগতোক্তি করেন "আর যদি ধরে আনতে পারি..." - এই ডায়ালগ বলার পাশাপাশি তাঁর দৃষ্টি ভোলার নয়। 


অমিয়প্রসাদ দত্ত রায় ও ঊষারানী দেবীর সাত সন্তানের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শান্তি দত্ত রায় ওরফে চিন্ময়। কাশীপুর ইনস্টিটিউশন এর ছাত্র ছিলেন তিনি। পড়াশোনায় কোনোকালেই মন ছিল না। তারপর কো এড মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। চিন্ময় তখন উত্তম কুমার, রাজ কাপুর, দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার প্রমুখ নায়কদের ডায়লগ মুখস্থ করতেন। তাই কলেজে গিয়ে বৈজয়ন্তীমালা, মধুবালার খোঁজও করতেন। কিন্তু কলেজের সবাই যেন কেমন বোন বোন টাইপ। এমন সময় আলাপ হয় স্কটিশ চার্চ কলেজের স্মার্ট সুন্দরী মেয়ে ছন্দা সরকারের সঙ্গে। প্রেমপত্র লিখে ফেললেন ছন্দাকে। ছন্দা দেবী সেটা হাতে পেয়ে তাঁকে দেখা করতে বললেন কফি হাউসে। আনন্দের চোটে রাতে আর ঘুমই আসে না তাঁর। অবশেষে কফি হাউসে দেখা করলেন এবং গিয়ে দেখলেন ছন্দা দেবীর সাথে একই টেবিলে চিন্ময়ের আরও চার বন্ধু বসে রয়েছেন। জানা গেল তাঁরা সবাই ছন্দাকে লাভ লেটার লিখেছেন। যাই হোক সেই প্রেম পর্ব আর এগোয়নি কারো সাথেই।


কখনও ভাবেননি অভিনয় জগতে পা রাখবেন। ঘনিষ্ঠ মহলে এমনটাই বলেছিলেন চিন্ময় রায়। তবে ম্যাট্রিকে থার্ড ডিভিশনে পাশ করা সেই আপাতনিরীহ চেহারার মানুষটিই কখন যেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম সারির কমেডিয়ান হয়ে উঠলেন।


অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহের সূচনা হয় ঠাকুমার সঙ্গে যাত্রা দেখতে দেখতে। বরানগরে ছোট-বড় নানা থিয়েটারের আসর বসতো। বরানগরের 'নক্ষত্র' ঠাকুরদাস মিত্র, যাঁর নাম 'শাজাহান' নাটকের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্যে বিশেষ খ্যাত। তিনি ছিলেন ছোট্ট চিন্ময়ের 'আইডল'। কলেজেই অন্যতম বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন ভবিষ্যতের নামী ও সুদর্শন অভিনেতা অজয় গাঙ্গুলীকে। কলেজে নাটকের দল তৈরি হয়। মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্র নাটক 'মালঞ্চ', যেখানে বিহারী চাকর এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন চিন্ময় রায়। এই নাটক থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে তাঁর, নাটক দেখতে আসেন প্রখ্যাত নাট্যকার অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়। নাটক শেষে সরাসরি প্রস্তাব দেন তিনি একটি নতুন নাটকের দল খুলবেন এবং সেই দলে চিন্ময় রায় এবং অজয় গাঙ্গুলী থাকলে তিনি খুবই খুশি হবেন। তৈরি হলো সেই ঐতিহাসিক নতুন দল, যার নাম 'নান্দীকার'। 'নান্দীকার' এর প্রথম নাটক ছিল অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'সেতুবন্ধন', চিন্ময়ের ভূমিকা ছিল একটি সিরিও কমিক অভিনেতার চরিত্র; আরও করলেন 'মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, 'চার অধ্যায়'। কিন্তু মতবিরোধের কারণে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চিন্ময় রায়ের সম্মিলিত দল ভেঙে যায়। চিন্ময় সহ বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায় প্রমুখ নয়জন দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এবং নতুন দল গড়ে তোলেন, নাম রাখা হয় 'থিয়েটার ওয়ার্কশপ'। এরপরই ঐ দলের জয়যাত্রা শুরু হয় 'ভিয়েতনাম', 'ছায়ায় আলোয়' প্রভৃতির হাত ধরে।

'গল্প হলেও সত্যি' ছায়াছবির সেটে চিন্ময় রায়ের অভিনয় দেখে অত্যন্ত খুশি হয়ে ভানু বন্দোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, "ঢাকার পোলা হইলে সবসময় সফল হইবই"। চিন্ময়ের রোলটি ছিল অসৎ উদ্দেশ্যে হালদার বাড়ির গৃহভৃত্যের কাজ নিতে আসা এক বখাটে যুবকের। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেন তিনি; 'আপনজন', 'হাটেবাজারে' প্রভৃতি। সত্যজিৎ রায়ের 'চিড়িয়াখানা' ছবিতে এক মূক ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। চিন্ময় রায়, রবি ঘোষ, উমানাথ ভট্টাচার্য্য একসঙ্গে একটি ছবি করেছিলেন, 'সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা', যার প্রিন্ট আর পাওয়া যায় না। "খুব মজা করে তৈরি হয়েছিল ছবিটা। টাকা পয়সা ছিল না। সব বন্ধুরা মিলে নিজেদের গ্যাট থেকে টাকা দিয়ে করেছিলাম", চিন্ময় এক পত্রিকাতে এমনটাই উল্লেখ করেছিলেন। রবি ঘোষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব ভাল ছিল, মজার মানুষ ছিলেন রবি ঘোষ এমনটাই বলেন তিনি। 'চারমূর্তি' মাছের মাথা খাওয়ার দৃশ্যতে পরিচালকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রবি ঘোষ কাঁচা মাছ খাইয়ে দিয়েছিলেন চিন্ময় রায়কে। তখনতো ফিল্মের রিলের দাম অনেক, তাই মাঝ রাস্তায় উঠে যেতে পারেননি, কোনরকমে শর্ট শেষ করেছিলেন। ‌ কিন্তু কাঁচা মাছের গন্ধের চোটে তিন মাস মাছ খেতে পারেননি। পরে রবি ঘোষ অবশ্য দোষ স্বীকার করে রুচি আসার পরে ভালো মাছ খাইয়েছিলেন চিন্ময়কে। 'পদি পিসির বর্মী বাক্স' ছবিটির শুটিংয়ের সময় যথেষ্ট আনন্দ করেছিলেন রবি ঘোষের সঙ্গে।

সালটা ১৯৭০। তপন সিনহার ছবি ‘সাগিনা মাহাতো’। সেই ছবির কাস্টিংয়ের সময় ঘটেছিল এক মজার ঘটনা। একদিন নাকি পরিচালক তপনবাবু চিন্ময় রায়কে নিয়ে গিয়েছিলেন ছবির মূল অভিনেত্রী সায়রা বানুর কাছে। সেই প্রথম সাক্ষাৎ সায়রাবানু এবং চিন্ময় রায়ের। তপনবাবু তাঁকে পরিচয় করালেন অভিনেত্রীর সঙ্গে। বলেছিলেন, এ তোমার নায়ক। এর নাম চিন্ময়। তারপরের ঘটনা যা ঘটেছিল, তা স্মরণ করতে গিয়ে চিন্ময়বাবু একবার বেশ মজা পেয়েছিলেন। তবে, আদতে সেই সময়ে কিন্তু ঘটেছিল ঠিক তাঁর উলটোটা। সায়রাবানুর নায়ক বলে কথা, চেহারায় একটা হ্যান্ডসাম গোছের ভাব তো থাকতেই হবে! কিন্তু, এ তো পুরো উলটো। কাজেই যা ঘটার তাই ঘটল। দেখে শুধু অবাকই হলেন না অভিনেত্রী। সঙ্গে নাকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ারও জোগাড় হয়েছিল তাঁর। মনে মনে বেশ দুঃখ পেয়েছিলেন চিন্ময়বাবু। এ তো গেল প্রথম সাক্ষাতের কথা। দ্বিতীয় সাক্ষাতের ঘটনা আরও মজাদার। পরের দিন ধূমপানে ব্যস্ত অভিনেতা। পরনে তাঁর সাদা জামা সাদা প্যান্ট। হঠাৎ-ই কোত্থেকে সায়রাবানু এসে হাত রাখলেন চিন্ময়ের কাঁধে। শুধু তাই নয়। বললেন, ‘হাই চিনু! হাউ স্মার্ট ইউ আর।’ তখন নাকি পালটা চিন্ময়বাবুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে স্মৃতিচারণে বেশ কয়েকবার এই মজার কথা শেয়ার করেছেন তিনি।

আরেক ঘটনা ‘হাটেবাজারে’ ছবি মুক্তি পাওয়ার পরের। একদিন তিনি শ্যামবাজার থেকে ডবল ডেকার বাসে উঠেছেন। জনা কয়েক তাঁর মতোই রোগা লোকও বাসে উঠেছেন। তাঁরা চিন্ময়বাবুকে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা আপনি ‘হাটেবাজারে’ ছবিতে অভিনয় করেছেন? অভিনেতারও সপাট জবাব, হ্যাঁ ভাই করেছি। তৎক্ষণাৎ ওদিক থেকেও বাণের গতিতে প্রশ্ন, আপনার চেহারা তো ভালো নয় রোল পেলেন কী করে? তাঁর থেকেও অবাক করে দিয়ে আসে আরেক প্রশ্ন, আচ্ছা আপনি কী অমুক অভিনেতার বাড়ির বাজার করে দেন?… ভাবুন কী অনাসৃষ্টি কান্ড! অত বড় মাপের অভিনেতাকে নাকি এরকমটাও শুনতে হয়েছিল। 

“শোনো, তুমি আমাকে একবার বলো উত্তম কুমার… বলো না!”- বসন্ত বিলাপ’-এর সিধুর সেই চিরস্মরণীয় সংলাপ। ছবির সংলাপে উত্তম কুমার হওয়ার সাধ জাগলেও বাস্তবের সিধু কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছিলেন চেহারার গড়ন ঠিক না হলেও কিংবা হিরোর চরিত্রে ঠাঁই না পেলেও, শুধুমাত্র অভিনয়ক্ষমতায় ঠাঁই পাওয়া যায় দর্শকের মনের মণিকোঠায়। চিরতরের জন্য। ভানু বন্দ্যোপাধায়, রবি ঘোষ, জহরের উত্তরসূরি তিনি। বাংলা কমেডি জগতের অন্যতম নক্ষত্র। রোগা-প্যাটকা চেহারা, শ্যামবর্ণ, পাট পাট করে ব্যাক ব্রাশড চুল… চেহারায় হিরো গোছের ভাব না থাকলে কী হবে, অ্যাটিটিউডে ষোলো আনা। কেমন একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব! এমনটাই নাকি ছিলেন অভিনেতা চিন্ময় রায়। তাঁর সমসাময়িক অভিনেতাদের চোখে ‘চিনু’ এরকমই।

ঢলা প্যান্ট, ঢলা শার্ট, তবে গোঁজা। মুখে গোঁজা ধুম্রকাঠি। অবলীলাক্রমে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে, মুখে একটা রকের ‘গুরুদেব’ গোছের হাসি। যেন সবজান্তা। তবে, কর্মে অষ্টরম্ভা। টেনিদা হোক কিংবা সিধুর চরিত্র পর্দায় এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছিলেন অভিনেতা চিন্ময় রায়। ‘চারমূর্তি’তে তাঁর চেলা ক্যাবলা, প্যালার মতো অগণিত ভক্তই রয়েছে বাংলা সিনেমার দর্শককুলে। আর থাকবেও। যিনি অনায়াসে তাঁর হারকিউলিস গোছের চেহারা নিয়ে একটা স্ক্রিন প্রেসেন্সে, কটা মাত্র সংলাপ দিয়েই মাত করে দিতে পারেন। অনায়াসেই টেক্কা দিতে পারেন পাশের অভিনেতাকে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যদি বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাক্টরের জন্য পুরস্কার বরাদ্দ থাকত। অনায়াসেই তা বছর বছর অগুন্তি পুরস্কার বাগিয়ে নিতে পারতেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অমর চরিত্র ‘টেনিদা’কে তিনি যে বাঙালির আট থেকে আশি সবার মনেই গেঁথে দিয়ে গিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। কী অসম্ভব কমিক টাইমিং!


চিন্ময় রায় সম্পর্কে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাংলা ছবিতে ওর যা পাওনা ছিল তা পায়নি। ওর মতো চরিত্রাভিনেতা খুবই দুর্লভ"। 'বসন্ত বিলাপ' ছবিতে একসাথে কাজ তাঁদের। চিন্ময়ের সেই পুকুর পাড়ে জলে পা ডুবিয়ে বিখ্যাত সংলাপ, "আমাকে একবার উত্তমকুমার বলো" এবং তারপর জলে ঝাঁপ মারার দৃশ্য আপামর জনতা এখনো বারবার দেখতে চায়‌। তিনি খুবই পজিটিভ মাইন্ডের মানুষ ছিলেন। কখনোই হাল ছেড়ে দেবার কথা ভাবতেন না। গান খুবই ভালবাসতেন, মাঝেমধ্যেই গলা ছেড়ে সলিল চৌধুরীর গান, সিনেমার গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। স্ত্রী জুঁই দেবীর সাথে ভালোবাসার বাঁধনটা বেশ শক্তই ছিল তাঁর। স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। চিন্ময় এবং স্ত্রী জুঁই নায়ক নায়িকা হিসেবে কাজও করেছিলেন দমফাটা হাসির ছবি 'ননীগোপালের বিয়ে'-তে।

অন্যতম বিখ্যাত সিনেমা 'চারমূর্তি'। মুখে সারাক্ষণ বীরত্বের কথা শোনালেও, আসলে ভজহরি মুখোপাধ্যায় ওরফে টেনিদা চরিত্রটি ভীরু প্রকৃতির। সাথে ছিল প্যালা, হাবুল ও ক্যাবলা। সেই যুগের বিশাল হিট ছবি, অবশ্য সেই যুগের না বলে, সর্বকালের হিট সিনেমা বলাই শ্রেয়। যদিও পরিচালক হিসেবে পরে চিন্ময় ছবিটি বানালে সেটি যেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ইন্ডাস্ট্রিতে কমেডিয়ান থেকে সিরিয়াস সব রোলেই চিন্ময় রায় বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। দেবশ্রী চিরঞ্জিতের 'বেয়াদব', বিশ্বজিৎ -এর 'সোরগোল', আবার অন্যদিকে 'মৌচাক' এ চাকর রাধিকার রোল - সবকিছুতেই তাঁর অভিনয় অনবদ্য। চার্লি চ্যাপলিন, বাস্টার কিটনদের খুব পছন্দ করতেন। চিন্ময়ের একটা বড়ো গুণ ছিল সময়ে আসা, কখনোই দেরি করতেন না। উত্তমকুমারকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন তিনি, একটু ভয়ও পেতেন। তাঁর থিয়েটার অভিনয় দেখলে বোঝা যায় তিনি শুধু কমেডিয়ানই নন, একজন দক্ষ ভার্সাটাইল অভিনেতা। তথাকথিত সাদামাটা চেহারা সত্ত্বেও নিজের অভিনয় প্রতিভায় রুপোলি পর্দায় নায়কদের পাশে রীতিমতো নজর কেড়েছেন। নবদ্বীপ হালদার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসী চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের পর বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় রবি ঘোষ বা অনুপকুমারের সঙ্গে পাল্লাও দিয়েছেন সমানে সমানে।

ছাদ থেকে ঝুঁকে একবার বাচ্চাদের খেলা দেখছিলেন। নীচে তাকিয়ে ব্ল্যাক আউট হয়ে যান এবং পড়ে যান। কিন্তু আবারও সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, হাঁটাহাঁটিও শুরু করেছিলেন। পায়ে যেসব কৃত্রিম প্লেট লাগানো হয়েছিল, ডাক্তারেরা সব খুলে দিয়েছিলেন। কেবল বাঁপায়ে একটা প্লেটস ছিল, সেটাই পরে খুলিয়ে আনা হয়। মোটামুটি সুস্থই ছিলেন, কিন্তু ২০১৯-এর ১৭ই মার্চের পর আর চোখ খুললেন না। জীবনের শেষ কয়েক বছরে আবার নাটকে ফেরার কথা ভাবতেন। মনেপ্রাণে চাইতেন তাঁর প্রথম প্রেম থিয়েটারে ফিরে আসতে। কিন্তু সেই ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে গেল তাঁর।

প্রথম ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’। তপন সিংহের পরিচালনায় প্রথম ছবিতেই নজর কাড়লেন। এর পর আর থেমে থাকেননি। ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘চারমূর্তি’,‘মৌচাক ’, ‘হাটে বাজারে’, ‘ঠগিণী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘সূবর্ণ গোলক’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ 'বসন্ত বিলাপ' - একের পর ছবিতে তিনি মাতিয়েছেন বাঙালি দর্শককে। বাংলা সিনেমা জগতে তিনি ছিলেন 'হাসির রাজা'। 'বসন্তবিলাপ' ছবিতে তাঁর ‘একবার বলো, তুমি উত্তমকুমার’ সংলাপ বাংলা চলচ্চিত্রে ইতিহাস।

টেনিদা চরিত্রে 'চারমুর্তি' সিনেমায় তার অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে তাকে অধিক জনপ্রিয় করে। ভারতের বাংলা সিনেমার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন অনন্য উচ্চতায়।

তথাকথিত সাদামাটা চেহারা সত্ত্বেও নিজের অভিনয় প্রতিভায় রুপোলি পর্দায় নায়কদের পাশে রীতিমতো নজর কেড়েছেন। নবদ্বীপ হালদার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসী চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের পর বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় রবি ঘোষ বা অনুপকুমারের সঙ্গে পাল্লাও দিয়েছেন সমানে সমানে। তাঁর প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্রের এক অধ্যায়ের যেন সমাপ্তি ঘটে।

আজ এই মহান অভিনেতার জন্মদিবসে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

No comments