Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সেদিনের কলকাতা আইনি কথা

‘পুরানো কলকাতার আইনি কথা’                                    রানা চক্রবর্তীবঙ্গদেশের সবচেয়ে পুরানো ও প্রাচীন ইউরোপীয় আদালত কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে, সকলেই সমস্বরে বলে উঠবেন, কেন আদি কলকাতার সুপ্রিম কোর্ট; পরে যেটা কলকাতা হাইকোর্…

 




‘পুরানো কলকাতার আইনি কথা’

                                    রানা চক্রবর্তী

বঙ্গদেশের সবচেয়ে পুরানো ও প্রাচীন ইউরোপীয় আদালত কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে, সকলেই সমস্বরে বলে উঠবেন, কেন আদি কলকাতার সুপ্রিম কোর্ট; পরে যেটা কলকাতা হাইকোর্টে রূপান্তরিত হয়েছে। ভুল, এই উত্তরটা একটা মস্ত বড় ভুল। রোম নগরী যেমন একদিনে গড়ে ওঠেনি, তেমন ভাবেই পুরানো কলকাতাকে কেন্দ্র করে ভারতের বুকে ইউরোপীয় বা ব্রিটিশ আইনি ব্যবস্থাও একদিনে গড়ে ওঠেনি। পুরানো কলকাতার আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাপ্ত, সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহাসিক নথি থেকে জানতে পারা যায় যে, ‘পলাশীর যুদ্ধের’ তিপান্ন বছর আগেই, ১৭০৪ সালের আগস্ট মাসে, ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’, কলকাতায় একটা আদালত স্থাপন করেছিল। সেই সময়, প্রতি শনিবারের সকাল ন’টা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত ওই আদালত বসত। ওই আদালতের শাস্তিবিধান পদ্ধতি ছিল বড়োই অদ্ভুত৷ কারণ, ১৭০৬ সালের আগস্ট মাসের একটা নথি থেকে জানা যায় যে, কতগুলি চোর ও খুনী আসামী সম্বন্ধে ওই আদালত রায় দিয়েছিল যে, তাঁদের গালে গরম লোহার শলাকার ছেঁকা দিয়ে চিহ্নিত করে, তাঁদের নদীর অপর পারে ছেড়ে দিয়ে আসা হোক। ঐতিহাসিকদের মতে, খুব সম্ভবতঃ কলকাতায় ‘মেয়রস্ কোর্ট’ স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত ওই আদালতটি চালু ছিল। ইংল্যাণ্ডের রাজা ‘প্রথম জর্জের’ আমলে এক রাজকীয় সনদানুসারে, ১৭২৬ সালের কলকাতায়, ‘মেয়রস্ কোর্ট’ স্থাপিত হয়েছিল। সেই আদালতের বিচারকার্য নির্বাহের জন্য - একজন ‘মেয়র’ ও নয়জন ‘সহকারী বিচারক’ বা ‘অ্যালডারম্যান’ নিযুক্ত হয়েছিলেন৷ সেই সময়ের কলকাতায়, ‘মেয়রস কোর্টের’ জন্য কোন নির্দিষ্ট বাড়ী ছিল না। তখনকার দিনের টাকার হিসেবে মাসিক ত্রিশ টাকা ভাড়ায় একটা ‘চ্যারিটি স্কুল’ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেই স্কুল বাড়ীটার জমির ওপরেই বর্তমান ‘সেণ্ট এন্ড্রুজ চার্চ’ অবস্থিত। ‘মেয়রস্ কোর্টে’ প্রধানতঃ ইংরেজদের বিষয়সম্পত্তিঘটিত ‘দেওয়ানী মামলা’রই শুনানী হত এবং সেটির এলাকা কলকাতার সীমানার মধ্যেই নিবদ্ধ ছিল। সেই আদালতের রায় চূড়ান্ত ছিল না। সেটির ওপরে ‘কোর্ট অফ আপীল’ নামের আরেকটি আদালত ছিল। এ ছাড়া, তখনকার কলকাতায়, ‘কোর্ট অফ কোয়াটার সেসনস্’ নামের আরেকটা ‘ফৌজদারী আদালত’ও ছিল। ১৭৫৩ সালের ৮ই জানুয়ারী তারিখের একটি রাজকীয় সনদ বলে, ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্টস্’ নামের একটি আদালত কলকাতায় স্থাপিত হয়েছিল। সেখানে প্রথম দিকে, তখনকার টাকার হিসেবে, ২০ টাকার অনধিক দাবীর ‘মুৎফরাক্কা’ মামলাসমূহের বিচার করা হত। পরবর্তীকালে সেই আদালতেরই বংশধর হয়ে উঠেছিল - কলকাতার ‘ছোট আদালত’ বা ‘স্মল কজেস কোর্ট’। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার ‘দেওয়ানী’ হাতে পাবার পরে, ইংরেজরা ‘দাওয়ানী ও ফৌজদারী’ মামলাগুলির বিচারের ভার নিজেদের হাতে নিয়েছিল। এজন্য মফস্বলে আদালত স্থাপন করা হয়েছিল। সেই সব আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবার জন্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, কলকাতায় ‘সদর নিজামত’ ও ‘সদর দেওয়ানী’ আদালত স্থাপন করেছিল। ওই আদালতদ্বয় - ‘সদর আদালত’ নামে পরিচিত ছিল, এবং সেটার অবস্থান ছিল বর্তমান কলকাতার ‘সদর স্ট্রীটে’, ও পরে সেটি স্থান পেয়েছিল - কলকাতা ‘রেসকোর্সের’ দক্ষিণে। তারপরে, ১৭৮৪ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে, কলকাতায় ‘সুপ্রিম কোর্ট’ স্থাপিত হয়েছিল। প্রথমে পুরানো ‘মেয়রস্ কোর্ট’ ভবনেই কলকাতার ‘সুপ্রিম কোর্ট’ অবস্থিত হয়েছিল। প্রথমদিকে সেই সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন সহকারী বিচারক ছিলেন। পরে সহকারী বিচারকদের সংখ্যা কার্যতঃ দুইজন করা হয়েছিল। পরে (১৭৮০ সাল থেকে ১৭৮৪ সালের মধ্যে) সুপ্রিম কোর্টের জন্য বর্তমান কলকাতা হাইকোর্টের পশ্চিমাংশের ভূমিতে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই নতুন ভবনের নীচের তলায় অন্যান্য কোর্টের অধিবেশন হত, আর দোতলায় ‘দায়রা কোর্ট’ বসত। ওই কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের ‘এক্তিয়ার’ (Jurisdiction) ছিল - ‘মারহাট্টা ডিচের’ অন্তর্ভুক্ত ‘শহর কলকাতা’। ১৮৬২ সালের ১৪ই মে তারিখে ‘কলকাতা হাইকোর্ট’ গঠিত হবার পরে, ‘সদর নিজামত’ আদালত ও ‘সদর দাওয়ানী আদালত’ সমেত সুপ্রিম কোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই নবগঠিত কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন - ‘স্যার বারনস্ পিকক্’। তাঁর অধীনে আরও বারো জন ‘জজ’ (puisne judges) নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরের বছর (১৮৬৩ সালে) একজন ভারতীয় জজও নিয়োগ করা হয়েছিল। বর্তমান কলকাতা হাইকোর্ট ভবনের নির্মাণ কার্য শুরু হয়েছিল, ১৮৬৪ সালের মার্চ মাসে, আর সেটির নির্মাণ কার্য শেষ হয়েছিল - ১৮৭২ সালের মে মাসে। সেটির স্থপতি ছিলেন - তৎকালীন কলকাতার সরকারী ‘আর্কিটেক্ট’, ‘মিষ্টার ওয়াল্টার গ্র্যানভিল’। যে জমিটার ওপরে কলকাতা হাইকোর্টের বাড়ীটা তৈরী হয়েছিল, সেটার পশ্চিম ভাগে অবস্থিত ছিল সেকালের সুপ্রিম কোর্টের বাড়ী। পুরানো কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের সামনে (পূর্বদিকে) একটা খুব সরু গলি ছিল। ওই গলির পূর্বদিকে (বর্তমান হাইকোর্ট ভবনের পূর্বাংশ) ছিল, তৎকালীন কলকাতার তিনজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাসভবন। ওই তিনটা বসতবাটী ছিল - ‘লঙভিল ক্লার্ক’, ‘উইলিয়াম ম্যাকফারসন’ ও ‘জেমস্ উইলিয়াম কলভিল’-দের। তাঁদের মধ্যে ‘লঙভিল ক্লার্ক’ই, ১৮২৫ সালে, ‘বার লাইব্রেরী’ স্থাপন করেছিলেন। ‘উইলিয়াম ম্যাকফারসন’ ছিলেন, ১৮৬৪ সাল থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত, হাইকোর্টের জজ, ‘স্যার আর্থার জর্জ ম্যাকফারসনের’ ভাই। আর ‘জেমস উইলিয়াম কলভিল’ ছিলেন, ১৮৪৬ সালের ‘অ্যাডভোকেট জেনারেল’ ও ১৮৪৮ সাল থেকে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত, কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের জজ। ওই তিনখানা বাড়ী, সরু গলিটা ও কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের পুরানো বাড়ী - এগুলো সবই বর্তমান বর্তমান কলকাতা হাইকোর্টের গর্ভে চলে গিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হবার পরে, সেটার ওপরে অর্পিত হয়েছিল, আদি কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের ‘জুরিসডিকশন’ - অর্থাৎ, ‘মারহাট্টা ডিচ’ বেষ্টিত তৎকালীন শহর কলকাতার এলাকা। সেটাই ছিল হাইকোর্টের ‘অরিজিন্যাল সাইড’-এর এলাকা। ‘আপীলেট সাইড’-এর ‘জুরিসডিকশনে’ রাখা হয়েছিল - সমগ্র বাঙলা, বিহার, উড়িষ্যা, ছোটনাগপুর ও আসামকে (প্রায় দুই লক্ষ বর্গ মাইল এলাকা)। পরে স্বতন্ত্র প্রদেশসমূহ গঠিত হবার পরে, কলকাতা হাইকোর্টের ওই ‘জুরিসডিকশন’কে সঙ্কুচিত করা হয়েছিল। বর্তমান কলকাতা হাইকোর্টের ‘অরিজিন্যাল সাইড’-এ কোন মামলার মাত্র ‘প্রাথমিক আর্জি’ পেশ করা হয়, আর ‘আপীলেট সাইড’-এ ভিন্ন ভিন্ন স্থানের নিম্নতর কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘আপীল’ পেশ করা চলে। এছাড়া ‘ফৌজদারী মামলা’র শুনানী ‘দায়রা’ অধিবেশনে করা হয়। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের মাত্র ১২ জন জজ ছিলেন। তারপর সেই সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের সূচনায়, সেখানকার সব জজই ইংরেজ জজ ছিলেন। ১৮৬৩ সালে, ‘রাজা রামমোহন রায়ের পুত্র’, ‘রামপ্রসাদ রায়’কে প্রথম দেশীয় জজ হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পদাসীন হবার আগেই তাঁর মৃত্যু ঘটায়, ‘শম্ভুনাথ পণ্ডিত’ নামের একজন ‘কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ’কে কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম দেশীয় জজরূপে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ১৮৮২ সালে, ‘রমেশচন্দ্র মিত্র’ কিছুদিনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতিরূপে নিযুক্ত হয়েছিলেন। মুসলমানদের মধ্যে, ‘আমীর আলি’, ১৮৮৯ সালে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলমান জজরূপে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে, ‘শ্রীমতী জ্যোতির্ময়ী নাগ’ ও ‘শ্রীমতী পদ্মা খাস্তগীর’, কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মহিলা জজরূপে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

প্রথম দিক থেকে শুরু করে একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত, হাইকোর্টের উকিলদের আগে ‘ভকিল’ (শব্দটি হিন্দি) বলা হত। এ ছাড়া ছিলেন ইংল্যাণ্ডের ‘ব্যারিষ্টার’ ও আয়ারল্যাণ্ডের ‘অ্যাডভোকেট’রা (ব্যারিষ্টারের সমগোত্রীয় ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ’, সেই অর্থে ‘অ্যাডভোকেট’ ছিলেন)। ১৯২৪ সালের ২০শে নভেম্বর তারিখ থেকে, ‘ভকিল’দের আখ্যা পরিবর্তন করে ‘অ্যাডভোকেট’ রাখা হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের ও সেটির আগের সুপ্রিম কোর্ট সমেত, ইংরেজ জজদের মধ্যে, ইতিহাসে স্বানামধন্য হয়ে আছেন - ‘উইলিয়াম জোনস্’, ‘এলিজা ইম্পে’, ‘রবার্ট চ্যাম্বারস্’, ‘হেনরী রাসেল’, ‘বার্নস্ পীকক’, ‘আর্থার জর্জ ম্যাকফারসন’, ‘চালর্স জ্যাকসন’, ‘জন প্যাংকসটন নরম্যান’, ‘ওয়াল্টার মর্গ্যান’, ‘ফ্রান্সিস উইলিয়াম ম্যাকলীন’, ‘উইলিয়াম ডাককিন’, ‘এডওয়ার্ড হাইড’, ‘জন উডরফ’, ‘জন অ্যানষ্ট্রাটার’, ‘বাকল্যাণ্ড’ ও ‘প্যানক্রিজ’। এছাড়া আরও অনেক ইংরেজ জজ, যাঁদের নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, তাঁরা হচ্ছেন - ‘ফ্রানসিস ম্যাগনাটেন’, ‘উইলিয়াম বরোজ’, ‘হেনরী ব্লসেট’, ‘ক্রিস্টোফার পুলার’, ‘এণ্টনী বুলার’, ‘রিচার্ড গার্থ’, ‘উইলিয়াম কোমার পেথেরাম’, ‘চালর্স বিনি ট্রেভর’, ‘জন রাসেল কলভিন’, ‘হেনরী উইলমট সেটন’, ‘লবো্’, ‘পীল’, ‘জন হারবার্ট হ্যারিংটন’, ‘এডওয়ার্ড রায়ন’, ‘চার্লস এডওয়ার্ড গ্রে’, ‘গ্রেগরী চার্লস পল’ প্রমুখ। একজন ইংরেজ জজের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা এখানে উল্লেখ করতেই হয়। ঘটনাটা ঘটেছিল ১৮৭১ সালে। হাইকোর্টের ‘অরিজিন্যাল সাইড’-এর ভবনটি তখন তৈরী হচ্ছিল। ফলে সেই সময়ের কলকাতা হাইকোর্টের অধিবেশন বসছিল কলকাতা ‘টাউন হলে’। ওই সময়ে একদিন, তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের ‘চীফ জাষ্টিস’, ‘নরম্যান’ যখন টাউন হলের সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন, এমন সময় একজন উন্মত্ত মুসলমান তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের এদেশীয় বিচারপতিদের মধ্যে যাঁরা ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা হচ্ছেন - ‘শম্ভুনাথ পণ্ডিত’, ‘রমেশচন্দ্র মিত্র’, ‘আমীর আলি’, ‘দ্বারকানাথ মিত্র’, ‘চন্দ্রমাধব ঘোষ’, ‘গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘আশুতোষ মুখোপাধ্যায়’, ‘আশুতোষ চৌধুরী’, ‘চারুচন্দ্র বিশ্বাস’, ‘মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায়’, ‘রাধাবিনোদ পাল’, ‘ফণিভূষণ চক্রবর্তী’, ‘বিনোদচন্দ্র মিত্র’, ‘সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়’ প্রমুখ। ‘বিনোদচন্দ্র মিত্র’ ইংল্যাণ্ডের ‘প্রিভি কাউন্সিলের’ও বিচারপতি হয়েছিলেন। কলকাতা

হাইকোর্টের ইতিহাস বিখ্যাত আইনবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন - ‘রমাপ্রসাদ রায়’, ‘শম্ভুনাথ পণ্ডিত’, ‘রমেশচন্দ্র মিত্র’, ‘আমীর আলি’, ‘দ্বারকানাথ মিত্র’, ‘কালীমোহন দাশ’, ‘হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘ত্রৈলোক্যনাথ মিত্র’, ‘গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘আশুতোষ মুখোপাধ্যায়’, ‘আশুতোষ চৌধুরী’, ‘মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায়’, ‘রাধাবিনোদ পাল’, ‘সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ’, ‘চিত্তরঞ্জন দাশ’, ‘ব্যেমকেশ চক্রবর্তী’, ‘উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘ফণিভূষণ চক্রবর্তী’, ‘অতুলচন্দ্র গুপ্ত’, ‘কিরণশঙ্কর রায়’, ‘শরৎচন্দ্র বসু’, ‘তুলসীচরণ গোস্বামী’, ‘কুমুদনাথ চৌধুরী’, ‘গোপালচন্দ্র সরকার’, ‘জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর’, ‘তারকনাথ পালিত’, ‘রাসবিহারী ঘোষ’, ‘দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘নির্মলচন্দ্র চন্দ্ৰ’, ‘নৃপেন্দ্রনাথ সরকার’, ‘ভূপেন্দ্রনাথ বসু’, ‘যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত’, ‘শ্রীমতী পদ্মা চ্যাটার্জি’ প্রভৃতি।

১৭৫৩ সালের ৮ই জানুয়ারী তারিখের ‘রাজকীয় সনদ’ দ্বারা কলকাতায় যে ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্ট’ স্থাপিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে সেটারই উত্তরাধিকারী হয়েছিল, কলকাতার ‘স্মল কজেস্ কোর্ট’ বা ‘ছোট আদালত’। ১৭৮৪ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে যখন সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয়েছিল, তখন ভারতের ‘প্রেসিডেন্সী টাউন’গুলিতে অবস্থিত (কলিকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ) অবস্থিত ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্ট’গুলি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ন্যস্ত হয়েছিল। প্রথমে ‘রিকুয়েষ্ট’-এর মাত্রা ছিল ২০ টাকা ও পরে ওই আদালতের ১০০ টাকার অনধিক দাবীযুক্ত মামলার বিচার করবার অধিকার ছিল। আরো পরে সেটা ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ওই ‘কোর্ট অফ রিকুষ্টেস্’-এ মামলা করবার অনেক অসুবিধা ছিল, এবং ১৮৩৮ সালে, ‘ক্যালকাটা ট্রেডারস্ এসোসিয়েশন’ সেগুলির প্রতি কোম্পানির কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তারপরে অনেক জল ঘোলা হবার পরে, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার, ১৮৫০ সালের ‘নয় নম্বর আইন’ বলে, ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্টস’কে ‘স্মল কজেস্ কোর্ট’ বা ‘ছোট আদালতে’ পরিণত করেছিল। সেই আদালতে, মামলার দাবীর সীমা ৪০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছিল। পরে ১৮৬৮ সালে, মামলার দাবীর সীমা - ১০০০ টাকা পর্যন্ত ও ১৮৮২ সালে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। আগে কলকাতার ‘ছোট আদালত’ প্রতিদিনই বসত, কিন্তু গ্রীষ্মকালে - ১লা থেকে ১৫ই মে ও শীতকালে - ১৫ই থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই আদালত বন্ধ থাকত। সেই বন্ধের সময় জরুরী মামলা সমূহ দায়ের করবার জন্য, ১৮৫৪ সালে একটি ‘ভেকেশন বেঞ্চ’ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্ট’-এর ঋণের টাকা অনাদায়ে জন্য কাউকে জেলবন্দী করার ক্ষমতা ছিল। ১৮১৯ সালের ২৯শে অক্টোবর তারিখের একটি সরকারী ঘোষণা থেকে জানতে পৰ যায় যে, ওই সময়ের ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্ট’-এর ঋণের টাকা অনাদায়ে জন্য হাজতবাসের পরিমাণ ছিল - দশ টাকা ঋণের জন্য এক মাস জেল, পঞ্চাশ টাকা ঋণের জন্য পাঁচ মাস জেল, ২০০ টাকার অধিক ঋণের জন্য এক মাস জেল। ১৮২৭ সালে, কলকাতার ‘ছোট আদালতের’ জেলখানায় ৩৪ জন বন্দী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে - ৬ জন ইরেজ, ৭ জন মুসলমান ও ২১ জন হিন্দু ছিলেন। তাঁদের ঋণের পরিমাণ ছিল - তিন টাকা থেকে ৩৭০ টাকা পর্যন্ত। সেই সময়, বন্দীদের ভরণপোষণের জন্য তাঁদের পাওনাদারদের প্রত্যেকদিন ‘দেড় আনা’ করে দিতে হত। যদি সেই খরচ একদিন না দেওয়া হত, তাহলে বন্দীকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হত। ১৮২৮ সালে, ‘কোর্ট অফ রিকুরেষ্ট’-এ শপথ গ্রহণ করাবার জন্য একজন ‘গঙ্গাজলী ব্রাহ্মণ’ ও একজন ‘কোরানী মোল্লা’কে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ১৮৪০ সালের এক বিবরণী থেকে জানতে পারা যায় যে, ওই ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্ট’-এর শতকরা ২৫ ভাগ মামলা, ‘ওড়িয়া কাপড় ব্যবসায়ীরা’ করতেন। আগেই বলা হয়েছে যে, পরবর্তী সময়ে, ‘কোর্ট অফ রিকুয়েষ্ট’-এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল ‘স্মল কজেস্ কোর্ট’ বা ‘ছোট আদালত’। ‘ছোট আদালত’ বলবার উদ্দেশ্য এই যে, তখন যে সব মামলা, দাবীর পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ার কারণে ‘স্মল কজেস্ কোর্টে’ করা যেত না, সেগুলি কলকাতার বড় আদালত বা ‘হাইকোর্টে’ করতে হত। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে, মূল্য স্ফীতির ফলে, পাওনাদারদের দাবীর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, হাইকোর্টে ওই ধরণের মামলার বোঝা ক্রমশঃ বেড়ে যাচ্ছিল। হাইকোর্টের ‘অরিজিন্যাল সাইড’-এ মামলার বোঝা লাঘব করবার জন্য, তৎকালীন ‘জুডিশিয়্যাল রিফর্ম কমিটি’র সুপারিশক্রমে ও ‘W.B .Acts XX ও XXI of 1953’ অনুসারে, ১৯৫৭ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী তারিখে, কলকাতার টাউন হলে, ‘সিটি সিভিল অ্যাণ্ড সেসনস্ কোর্টের’ উদ্বোধন হয়েছিল। ওই আদালতের উদ্বোধন করেছিলেন, তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের তদানীত্তন প্রধান বিচারপতি - ‘পি. বি. চক্রবর্তী’। পরে ‘২ ও ৩ নং হেষ্টিংস স্ট্রীটের’ (বর্তমান কলকাতার ‘কে. এস. রায় রোড’) বর্তমান ভবনে আদালতটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ‘সিটি কোর্টের’ স্বানামধন্য আইনবিদদের মধ্যে উল্লেখনীয় হলেন - ‘পূর্ণেন্দুশেখর বসু’, ‘এ. কে. মিত্র’, ‘এন. বি. ব্যানার্জী’, ‘চন্দ্রনারায়ণ লায়েক’ (পরে কলকাতা হাইকোর্টের জজ হয়েছিলেন), ‘চাঁদমোহন চক্রবর্তী’, ‘অশোককুমার চক্রবর্তী’, ‘প্রভাতকুমার বোস’, ‘ডঃ হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত’, ‘অশোকলাল বোস’, ‘স্নেহেশকুমার সুর’, ‘জে. এল. চ্যাটার্জি’, ‘বি. বি. মিত্র’, ‘এস. এন. দাশগুপ্ত’, ‘কে. কে. মিত্র’, ‘বি. সি. ঘোষ’ (সিটি কোর্টের প্রথম প্রধান জজ), ‘বিভুতোষ ব্যানার্জি’, ‘বিজয়কৃষ্ণ বসু’, ‘কে. সি. মুখার্জি’, ‘তিনকড়ি সরকার’, ‘উমাপদ মৈত্র’, ‘সুনীলকুমার ঘোষ’, ‘বৈদ্যনাথ সরকার’, ‘নরেশচন্দ্র ব্যানার্জি’, ‘শ্যামলেন্দুমোহন রায়’, ‘অজিতকুমার বোস’, ‘দেবীপ্রসাদ মুখার্জি’, ‘সুকুমার গুহ ঠাকুরতা’, ‘মনোরঞ্জন দাস’, ‘নারায়ণচন্দ্র দাশ শর্মা’, ‘বদ্রীনারায়ণ সুর’, ‘বৈদ্যনাথ সরকার’, ‘প্রশান্তকুমার সিংহ’, ‘সৌধেন্দুকুমার বসু’, ‘দেবীপ্রসাদ কর’, ‘বীরেন্দ্রকুমার গুপ্ত’, ‘শচীকান্ত হাজারি’ (পরে হাইকোর্টের জজ হয়েছিলেন) প্রমুখ।

আগেই বলা হয়েছে যে, অতীতের কলকাতা হাইকোর্টের ‘জুরিসডিকশন’-এর সীমা ছিল - ‘মারহাট্টা ডিচ’ বা পরবর্তীকালে সেটার ওপরে নির্মিত ‘সার্কুলার রোড’ (বর্তমানের ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড’ ও ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র রোড’)। ‘সার্কুলার রোডের’ পূর্বদিক যে সব থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেই সব অঞ্চল আগে ‘শিয়ালদহ কোর্টের’ অধীনস্থ ছিল। তবে ঠিক কবে ‘শিয়ালদহ কোর্ট’ স্থাপিত হয়েছিল, ইতিহাসে সেটা জানা যায় না। তবে নানারকম অনুমানের ভিত্তিতে, পুরানো কলকাতার গবেষকরা বলেন যে, ১৮১৪ সালে, ‘১৪নং রেগুলেশন’ বলে, কলকাতার শহরতলীর জন্য যে সব ‘জেলা আদালত’ (ডিস্ট্রিক্ট কোর্টস) স্থাপিত হয়েছিল, শিয়ালদহের বর্তমান ‘মুন্সেফ কোর্ট’ সেগুলোরই বংশধর। শিয়ালদহের ‘মুন্সেফ কোর্ট’ বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগণার অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখনীয় যে ১৭৯৩ সালের ‘দুই, তিন ও নয় নম্বর রেগুলেশনস্’ অনুযায়ী, ২৪ পরগণা জেলায় - দাওয়ানী, ফৌজদারী ও রাজস্ব আদালতসমূহ স্থাপিত হয়েছিল। ওই সব আদালতের এক্তিয়ার, কলকাতা (মারহাট্টা ডিচ বেষ্টিত) শহরের বাইরে ছিল। ১৮০০ সালে, ২৪ পরগণার ‘দাওয়ানী আদলত’সমূহের ‘এলাকাধীন অধিকার’ (Jurisdiction) - নদীয়া ও হুগলী জেলার ওপরে ন্যস্ত হয়েছিল। ১৮০৬ সালে, ২৪ পরগণার ‘দাওয়ানী আদালত’সমূহ আবার পুনর্গঠিত করা হয়েছিল। ১৮০৮ সালের ‘দশ আইন’ অনুযায়ী, ২৪ পরগণার ‘ম্যাজিস্ট্রেট’কে ‘সুপারিনটেণ্ডেণ্ট অফ পুলিশ’ নিযুক্ত করা হয়েছিল ও ১৮১১ সালে, ‘জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট’ ও ‘জেলা জজের’ পদদ্বয়কে একত্রিত করা হয়েছিল। ১৮১৪ সালের ‘১৪ নং রেগুলেশন’ অনুযায়ী, ২৪ পরগণাকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল - (১) কলকাতা শহরতলীর অন্তর্ভুক্ত ‘চিৎপুর’, ‘মানিকতলা’, ‘তেজেরহাট’, ‘নৌহাজরি’ ও ‘সালকিয়া’ (বর্তমান হাওড়া জেলায় অবস্থিত) ও (২) ২৪ পরগণার অবশিষ্টাংশ। ১৮৩২ সালের ‘৮নং রেগুলেশন’ অনুযায়ী ওই দুই ভাগকে আবার পুনর্মিলিত করা হয়েছিল। ১৮৩৪ সালে, নদীয়া ও যশোহরের কিয়দংশকে ২৪ পরগণার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল, এবং ২৪ পরগণাকে দুটি ভিন্ন ‘মেজেস্ট্রিরিয়াল’ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল - (১) আলিপুর ও (২) বারাসাত। ১৮৬১ সালে, ওই দুই বিভাগকে আবার পুনর্মিলিত করা হয়েছিল ও আটটি ‘মহকুমা’য় বিভক্ত করা হয়েছিল, যথা - (১) আলিপুর, (২) বারাসাত, (৩) বারাকপুর, (৪) বারুইপুর, (৫) বসিরহাট, (৬) ডায়মণ্ডহারবার, (৭) দমদম ও (৮) সাতক্ষীরা। ১৯০৪ সালে, বারাকপুর ও বারাসাতের কিছু অংশকে আলিপুর সদরের অধীনস্থ করা হয়েছিল। বর্তমানে শিয়ালদহের ‘দাওয়ানী আদালত’ দুই অংশে বিভক্ত - (১) একজন সাবজজের অধীনস্থ ‘স্মল কজেস্ কোর্ট’ ও (২) ‘৫ জন মুন্সেফের কোর্ট’। খুব সম্ভবতঃ, ১৮৮৭ সালের ‘নয় নম্বর আইন’ অনুযায়ী শিয়ালদহের বর্তমান ‘স্মল কজেস কোর্ট’ গঠিত হয়েছিল, যদিও এর আগে থেকেই যে সেটির অস্তিত্ব ছিল, তা আইনের নজীর থেকে অবগত হওয়া যায়। অবশ্য ১৮৪০ সালের আগে সেটির নাম ছিল - ‘শিয়ালদহ ও হাওড়া দাওয়ানী আদলত’। ১৮৪৩ সালে হাওড়ায় একটি ‘মুন্সেফ কোর্ট’ স্থাপিত হয়েছিল, এবং সেটাকে হুগলী জেলা জজের অধীনস্থ করা হয়েছিল। ‘শিয়ালদহ স্মল কজেস্ কোর্টের’ বর্তমান এলাকা (jurisdiction) হল - কাশীপুর, চিৎপুর, মানিকতিলা, বেলিয়াঘাটা, এণ্টালী, বেনিয়াপুকুর, বালীগঞ্জ, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ, আলিপুর, ওয়াটগঞ্জ, গার্ডেনরীচ, করেয়া, একবালপুর, সাউথ পয়েন্ট ও নিউ আলিপুর প্রভৃতি অঞ্চলসমূহ। ‘শিয়ালদহ কোর্টের’ স্বনামধন্য আইনজীবিদের মধ্যে উল্লেখনীয় হলেন - ‘যতীন্দ্রনাথ রায়’, ‘তারাপদ ঘোষ’, ‘খগেন্দ্রনাথ দে’, ‘দেবব্রত মৈত্ৰ’, ‘সুধাংশু হোর’, ‘শশধর চক্রবর্তী’, ‘শরৎচন্দ্র মুখার্জি’, ‘মনমোহন মৈত্র’, ‘রমেশচন্দ্র গাঙ্গুলী’, ‘গিরিজা প্রসন্ন ব্যানার্জি’, ‘প্রমোদকুমার ব্যানার্জি’, ‘ধীরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি’, ‘দুলালচন্দ্র মুখার্জি’, ‘বীরেশচন্দ্র চক্রবর্তী’, ‘নারায়ণ চন্দ্র রায়’, ‘উপেন্দ্রনাথ রায়’ প্রমুখ। শিয়ালদহে একটি পুলিশ কোর্টও আছে, কিন্তু সেটা সন্নিহিত স্বতন্ত্র ভবনে অবস্থিত। সেখানে মাত্র ‘ফৌজদারী মামলা’র বিচার করা হয়। বর্তমান কলকাতা শহরের ফৌজদারী মামলার বিচার হয় - ‘প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে’। ১৯১৪ সাল পর্যন্ত, ‘লালবাজার’ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পূর্বাংশে, ‘প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্ট’ ও ‘মিউনিসিপ্যাল কোর্ট’ - এই দুটি আদালত অবস্থিত ছিল। ১৯১৪ সালের পরে, কলকাতায় তিনটি ‘প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্ট’ স্থাপিত হয়েছিল - প্রথমটি ‘ব্যাঙ্কশাল ষ্ট্ৰীটে’, দ্বিতীয়টি ‘কিড ষ্ট্রীটে’ ও তৃতীয়টি ‘জোড়াবাগানে’ ‘ডাফ্ কলেজের প্রাক্তন ভবনে’। ১৯১৭ সালে, ‘কিড স্ট্রীটের’ আদালতটি তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং ওই আদালতের তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট, ‘মিঃ B. Keys’-কে ‘জোড়াবাগান আদালতে’ স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। প্রথমে, তাঁর পদের নাম দেওয়া হয়েছিল - ‘সেকেণ্ড প্রেসিডেন্সী ম্যাজিষ্টেট’, কিন্তু পরে সেটা পরিবর্তন করে করা হয়েছিল - ‘অ্যাডিশন্যাল চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিষ্ট্রেট’। ১৯৩৪ সালে, ‘জোড়াবাগান আদালত’ তুলে দিয়ে, ওই আদালতকে ‘ব্যাঙ্কশাল ষ্ট্রীটের আদালতের’ সঙ্গে মিলিত করা হয়েছিল। তখন থেকেই কলকাতায় একটাই ‘প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্ট’ আছে। বর্তমানে ‘প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের’ নাম ‘মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট’ করা হয়েছে। অতীতকালে যে সব লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী, কলকাতার ‘প্রেসিডেন্সী ম্যাজিষ্ট্রেটের কোর্টে’ প্র্যাকটিস করে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখনীয় হলেন - ‘মিঃ ম্যানূয়েল’, ‘মিঃ ক্র্যাসেনবরো’, ‘মিঃ এফ. একস্ ডি. সিলভা’, ‘কালী পালিত’, ‘তারকনাথ সাধু’, ‘যতীন মোহন ঘোষ’, ‘সুরেশচন্দ্র মিত্র’, ‘কৃষ্ণলাল দত্ত’, ‘জ্ঞানচন্দ্র গুহ’, ‘পশুপতি ভট্টাচার্য’, ‘কেশবচন্দ্র গুপ্ত’, ‘দেবেন্দ্রনাথ দাস’, ‘মনোজমোহন বোস’, ‘সুরেন্দ্রনাথ দত্ত’, ‘ললিত মোহন দে’, ‘মহেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি’, ‘সুরেশচন্দ্র পালিত’, ‘যোগেন্দ্রনাথ মিত্র’ প্রমুখ।

                                  

(তথ্যসূত্র:

১- Early History of the Calcutta High Court, P. Thankappan Nair.

২- ৩০০ বছরের কলকাতার পটভূমি ও ইতিকথা, ড.অতুল সুর।

৩- E-Library - Calcutta High Court.)

                                

No comments