গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য
হুন হুন না ..... হুন হুন না.....
শুনেছেন ছোটবেলায়। তাই তো? কী কৌতূহল থাকত আমাদের মনে। কে বা কারা আছে ওটার ভেতর? কতদূর বা যাবে? কোত্থেকে আসছে? ...... এরকম আরো প্রশ্ন মনের মাঝে ঘুরপাক খেত .......
হ…
গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য
হুন হুন না ..... হুন হুন না.....
শুনেছেন ছোটবেলায়। তাই তো? কী কৌতূহল থাকত আমাদের মনে। কে বা কারা আছে ওটার ভেতর? কতদূর বা যাবে? কোত্থেকে আসছে? ...... এরকম আরো প্রশ্ন মনের মাঝে ঘুরপাক খেত .......
হ্যাঁ ---
ঠিকই ধরেছেন ---
পালকি ......
মানুষ বহনের অতি প্রাচীন বাহন। বাদশাহ আকবর তাঁর রাজত্বে প্রজাদের খবরাখবর জোগাড় করতে পালকি ব্যবহার করতেন।১৭৭৫ এ আঁকা ঔরঙ্গজেবের ব্যবহৃত পালকির ছবি পাওয়া গেছে।অভিজাত মানুষেরা পালকি ব্যবহার করত শৌখিনতা বজায় রাখতে। চিকিৎসা ব্যবস্থা যখন অনেকটাই পিছিয়ে ছিল তখন রোগীদের বহন করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো পালকিতে। পালকি বাহকদের বলা হতো বেহারা বা কাহার।
পালকি হল আয়তাকার কাঠের বাক্স। শিমুল কাঠ, সেগুন কাঠ ইত্যাদি দিয়ে পালকি তৈরি হতো --- বটের ঝুরিতে তৈরি হতো বাঁট। পালকি তিন ধরনের --- সাধারণ পালকি, আয়না পালকি, ময়ূরপঙ্খী পালকি। মাঝে একটা ছোট কাঠের টেবিল, মুখোমুখি দুটো চেয়ার ----- এই হলো পালকির ভিতরের কাঠামো। একদিকে একটি বা দুদিকে দুটো দরজা। ময়ূরপঙ্খীতে আবার পর্দা দেওয়া ছোট একটা বা দুটো জানালা থাকত।থাকত বাহারী কাঠের তৈরি হালকা নক্সা।
স্টিমার ও রেলগাড়ি চালু হওয়ার আগে গভর্নর জেনারেলরা পালকিতে চলাচল করতেন। উনিশশো শতকের গোড়ায় ভারতীয় ডাক বিভাগ ডাকসহ যাত্রী বহনের জন্য স্টেজ পালকি প্রচলন করে। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারি দেখাশোনার সময় পালকি ব্যবহার করতেন। উনিশ শতকের চারের দশকে দাসপ্রথা বিলোপের পর বিহার, উড়িষ্যা,মধ্যপ্রদেশ থেকে পালকি বাহকরা বিপুল সংখ্যায় বাংলায় আসত।তবে, বহু প্রাচীনকাল থেকেই দেবদেবীর বিগ্রহ বহন করা হতো পালকিতে, এখনও হয়।ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে ছয় জন পালকি বহন করে।
তবে ইতিহাস যাই থাক, পালকি নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে আমাদের বেশ ভালই লাগে..... নয় কি?
ছোট মন্থরগতি এই যানের এক ঝলক আজকের এই ছড়ায়......
# গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য #
পর্ব -- ৪
## পালকির কথা ##
লেখা: দেবাশিস পাহাড়ী
পালকির ছবি: সংগৃহীত
হুহুম না হুম না
না না আর ঘুম না,
ঐ আসে পালকি
দুলকি সে চাল কী !
কাঠে ঘেরা ছোট ঘর
এককালে সুনজর
কেড়েছিল পালকি,
এখন সে অগোচরে
কদর যে গেছে পড়ে
বোঝা যায় হাল কী!
বিস্তর দেখা যেত
আমাদের শৈশবে
ধনেমানে এ বাহন
টিঁকে ছিল বৈভবে।
পরিণীত বরকনে
সলজ্জ দুই জনে ---
বিয়ে সেরে চলে বাড়ি
আরো জোরে, তাড়াতাড়ি।
চারজন বেয়ারাতে
কথা বলে সঙ্কেতে
মাঝে মাঝে তোলে সুর
আনন্দে ভরপুর।
গঞ্জের সীমানায়
দিগন্তে মিশে যায়।
পালকি বইত যারা
বলা হতো বেহারা ---
জবজবে ঘামে ভেজা
ছিপছিপে চেহারা।
রামায়ণে পালকির
প্রচলন ছিল বেশ,
রাজা আর বাদশারা
ঘুরেছেন নানা দেশ।
রাজা যদি হন তিনি
পাগড়িতে হীরে মণি,
এক নয় দুই সার
পালোয়ান পেশাদার --
বল্লম সোজা হাতে
চকচকে ধার তাতে ;
উজীর বা কম কিসে
চেনা যায় উষ্ণীষে ---
চলেছেন মাপজোখে
ঢুলু ঢুলু দুই চোখে।
জানেন কি পালকির
দফারফা হলো কিসে?
ইতিহাসে লেখা সেটা
উনিশশো ঊনত্রিশে ......
তিন চাকা রিকশার
শুরু হলো চলাচল
চারিদিক খোলামেলা
কানে ভাসে কোলাহল।
মানুষের অভিরুচি
পাল্টাল অভিমুখ,
অনায়াসে যাতায়াতে
ব্যয় কম, বেশি সুখ।
তীর বেগে চলে ছুটে
পাল্টায় কত কিছু,
চলো চলো এগিয়েই
সময়ের পিছু পিছু।
সভ্যতা গতিশীল
রেলগাড়ি, রকেটে ---
পালকির ইতিহাস
ঘোরে শুধু পকেটে।
No comments