Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত ছাত্রের হাতে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত ছাত্রের হাতে
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত ছাত্রের হাতে
হলদিয়া…

 


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত ছাত্রের হাতে


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত ছাত্রের হাতে


হলদিয়ার কিসমত শিবরামনগর ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত সঞ্জীব সিংহকে।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্রের বাঁ পা বাদ গিয়েছে। ক্ষত সারেনি। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে তার গরিব বাবা-মায়ের প্রায় নিঃস্ব অবস্থা। ছেলেকে সু্স্থ করতে আরও অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু কে দেবে টাকা। ক্রাচে ভর দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সেই ছাত্র বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণপণে। 

মাস্টারমশাইয়ের কাছে এই কাহিনি শুনেছিল স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা। শিক্ষকের উৎসাহে তারা শপথ নেয়, তাদের মাটির ভাঁড়ে জমানো টাকা ওই ছাত্রের চিকিৎসার জন্য তুলে দেবে। বুধবার সন্ধেয় স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেই প্রাক্তন ছাত্র সঞ্জীব সিংহের পরিবারের হাতে খুদে পড়ুয়ারা তুলে দিল তাদের জমানো কয়েক হাজার টাকা। হলদিয়ার দেভোগের কিসমত শিবরামনগর ২ নম্বর প্রাথমিক স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের এমন অভিনব প্রয়াস সবাইকে চমকে দিয়েছে। 

পড়ুয়াদের মধ্যে ছোট থেকে মানুষের জন্য সেবার মানসিকতা গড়ে তুলতে কয়েক মাস আগে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোভন দাস ‘মানবিক’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন। এজন্য স্কুলেই পড়ুয়াদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার অর্থাৎ মাটির ভাঁড় দেওয়া হয়। কেউ টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে রোজ এক টাকা বা দু’টাকা ফেলে ভাণ্ডারে। কেউ আবার বাড়িতে বড়দের থেকে টাকা পেলে তা জমিয়ে রাখে স্কুলেই। স্কুলে কোনও অতিথি এলেও তাঁকে জমানোর জন্য অনুরোধ করে। এভাবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে জমা হয় কয়েক হাজার টাকা। প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকরা পড়ুয়াদের পরামর্শ দেন, গ্রামের কোনও পড়ুয়া সমস্যায় পড়লে, কেউ বই কিনতে না পারলে তাকে এই জমানো টাকা থেকে সাহায্য করা হবে। এমন সময় প্রধান শিক্ষক তাদের কাছে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে সঞ্জীবের পা হারানোর গল্প শোনান। পড়ুয়ারা মাস্টারমশাইকে বলে, স্যার আমরা তো দাদার পাশে দাঁড়াতে পারি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে। পড়ুয়াদের এই মানসিকতায় খুশি হন শিক্ষকরা। তাঁরাও এদিন সহযোগী হয়েছেন পড়ুয়াদের। পড়ুয়া ও শিক্ষকরা মিলিতভাবে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন আর এক পড়ুয়ার পাশে।

সঞ্জীব ওই স্কুলে প্রাইমারিতে পড়াশোনা করেছে। ২০১৯ সালে বাড়িতে কাজের সময় বাম পায়ের উরুর পেশিতে লোহার শাবলের আঘাত লাগে। প্রথমে পায়ে সামান্য ব্যথা হয়। কিন্তু বকুনির ভয়ে বাড়িতে কিছুই জানায়নি। ২০২১ সালে বাড়িতে খেতে বসার সময় হঠাৎ তার মায়ের নজরে আসে। ততদিনে আঘাত স্থানে রক্ত জমে টিউমার হয়ে গিয়েছে। তার মা নমিতা সিংহ বলেন, গতবছর ডিসেম্বর মাসে ছেলের পায়ের পেশিতে ডিমের মতো ফুলে থাকতে দেখতে পাই। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারি ক্যান্সার। একমাত্র সন্তানের ক্যান্সার হয়েছে শুনে চোখে অন্ধকার নেমে আসে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে দু’বার কলকাতায় অপারেশন করা হয়। প্রায় দেড় মাস রেডিয়েশন দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুতেই ব্যথা কমে না। শেষে ডাক্তার পা কেটে বাদ দেওয়ার নিদান দেন। না হলে বাঁচানো যাবে না সঞ্জীবকে। দক্ষিণ ভারতে গিয়ে একটি পা কেটে বাদ দেওয়া হয় ছেলের। তিন মাস হাসপাতালে থাকার পর এবছর মে মাসে বাড়ি ফিরে আসি। সাত মাস ধরে বাড়িতে চিকিৎসা চলছে। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ঋণের চাপে দিশেহারা পরিবার। এদিন খুদে পড়ুয়াদের সহযোগিতায় এত কষ্টের মধ্যেও সঞ্জীবের মা বাবা অভিভূত। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোভন দাস বলেন, ওর বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। পুরো পরিবার ছেলেকে নিয়ে লড়াই করছে। সঞ্জীবের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা আমরা খুশি।  খুদে পড়ুয়াদের এভাবে অনুপ্রাণিত করতে পেরে ভাল লাগছে। সঞ্জীবের পরিবার ওর কৃত্রিম পা লাগানোর চেষ্টা করছে। এজন্য অনেক টাকা লাগবে। আমরা সহৃদয় মানুষের সহায়তা চাই। সঞ্জীব জানায়, মনোহরপুর হাইস্কুল থেকে সে এবার মাধ্যমিক দেবেই। মনের জোর নিয়ে প্রস্তুতি চালাচ্ছে।


No comments