Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ধর্ম যদি স্পর্ধা বোঝায়, ধর্মযাজক মারাদোনা! শুভ জন্মদিন, ঈশ্বর!

ধর্ম যদি স্পর্ধা বোঝায়, ধর্মযাজক মারাদোনা! শুভ জন্মদিন, ঈশ্বর!
সময়টা ২৯ জুন ১৯৮৬, ভাষ্যকার ভিক্টর হুগো মরেলসের কমেন্ট্রিতে ফেটে পড়ছে মেক্সিকোর ইস্তাদিও অ্যাজতেকায় স্টেডিয়াম। গোলের আশায় সেদিন ময়দানে ছুটেছিল নীল-সাদার বিপক্ষে সবুজ …

 




ধর্ম যদি স্পর্ধা বোঝায়, ধর্মযাজক মারাদোনা! শুভ জন্মদিন, ঈশ্বর!


সময়টা ২৯ জুন ১৯৮৬, ভাষ্যকার ভিক্টর হুগো মরেলসের কমেন্ট্রিতে ফেটে পড়ছে মেক্সিকোর ইস্তাদিও অ্যাজতেকায় স্টেডিয়াম। গোলের আশায় সেদিন ময়দানে ছুটেছিল নীল-সাদার বিপক্ষে সবুজ জার্সি। তারই মাঝে সবাইকে পাশ কাটিয়ে ধুরন্ধর এক গতিতে বল নিয়ে ছুটে চলছে ছোটোখাটো চেহারার একটি ছেলে।


সবাইকে পিছনে ফেলে সেদিন এক অসামান্য গোল দেখেছিল পশ্চিম জার্মান ও আর্জেন্টিনার ভক্তরা। মেক্সিকোর ময়দানে ৩-২ গোলে জয় হয়েছিল আর্জেন্টিনার, সেই ছোটে ওস্তাদের অধিনায়কত্বেই সেই বছর আর্জেন্টিনার হাতে এসেছিল বিশ্বকাপের সম্মান। আর ছোটে ওস্তাদ হরফে দিয়াগো মারাদোনা পেয়েছিলেন “হ্যান্ড অফ গড” আখ্যা। আবারও সেদিন হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীদের মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্ব দরবারের কাছে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন “মারাদোনা-দ্যা গোল্ডেন বয়” নামে। সেই ধ্রুবতারার মতন উজ্জ্বলতম ফুটবলার ২৩ বছর আগে আজকের দিনেই শেষ করেছিলেন তাঁর ফুটবল ময়দানের দৌড়।


দশ বছর বয়সে প্রথম ক্রীড়া ময়দানে যাত্রা শুরু তাঁর। প্রথমে এস্ত্রেয়া রোজার ও পরে বুয়ন্স আয়ার্সের জুনিয়ার টিম লস সেবোলিটিয়াসের হয়ে খেলেন তিনি। তাঁর চোখে ছিল এক অদ্ভূত দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন। ৩৬ টা ম্যাচ খেলার পর মাত্র ১২ বছর বয়সে “বল-বয়” খেতাবের শিরোপা হন তিনি। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে ১৬তম জন্মদিনে প্রথম আর্জেন্টিনার জুনিয়ার দলে অভিষেক হয় তাঁর। পেশাদার ফুটবলার হিসাবে ওই দলের হয়ে পাঁচ বছর খেলে ১৬৭ টি ম্যাচ খেলে ১১৫টি গোলের রের্কড করেন তিনি। বছর না ঘুরতেই ১৯৭৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে অভিষেক হয়েছিল দিয়াগো মারাদোনার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ময়দানে গোল করতে নামেন তিনি, এবং সেখানেও আসে এক অভুতপূর্ব জয়।

সেই সময় এক দুর্দান্ত ফর্মে মারাদোনা। একের পর এক ম্যাচ জিতে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্ব ময়দানে। কিন্তু অভিজ্ঞতা বাড়লেও থেমেছিল তাঁর বয়স। তাই ১৯৭৮-এর ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ থেকে পিছিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু বয়স আটকাতে পরেনি তাঁর পায়ের গতিকে। ১৯৭৯ সালে ফিফা অনুর্ধ-২০ বিশ্বকাপে দেখা মেলে ১৮ বছরের মারাদোনার। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে সেই বছর অনুর্ধ-২০-র বিশ্বকাপ জিতেছিল জুনিয়ার আর্জেন্টিনা। সেসবছরই ২ জুন স্কটল্যান্ডকে বিপক্ষে রেখে প্রথম সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তাঁর। সেই বিশ্বকাপকে তিনি দিয়েছিলেন তাঁর অসাধারণ এক পারফর্ম্যান্স এবং তার ফলে তিনি সম্মানিত হন “গোল্ডেন বলে”।

এর পরবর্তীকালে ১৯৮১ সালে বোকা জুনিয়ার্স নামে একটি দলে তিনি মনোনীত হন এবং সেখানেও ১৯৮২তে জয় করেন চ্যামপিয়ান্স লিগ। তার কয়েক মাস বাদেই সূচনা হয় বিশ্ব ফুটবলের। আর্জেন্টিনার হট ফেভারিট খেলোয়াড় তখন যোগ দেন বার্সেলোনায়। আবারও বার্সায় আসার পর জ্বলে ওঠেন তিনি। ৫৮টি ম্যাচ খেলে ৩৮টি গোল হাঁকান বার্সার মারাদোনা। ১৯৮৩ সালের কোপা দোল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ অর্জন করেছিলেন তিনি।

বার্সার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিবাদ থেকে শুরু করে নিজের অসুস্থতা সব মিলিয়ে একাধিক ঝঞ্ঝাটের জেরে বার্সা ছাড়েন তিনি। ১৯৮৪ সালে আবার যোগ দেন নেপোলিতে, ইতিহাস গড়েন ১০ নম্বর জার্সি গায়ে। বলা হয় ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সময়টি ছিল নেপোলির ফুটবল জগতে স্বর্ণযুগ।

এরই মাঝে আসে সেই অবিস্মরণীয় বিশ্বকাপ। খেলার ৫১তম মিনিটে একটি হাত বল দিয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিয়ে যায় আর্জেন্টিনার অধিনায়ক দিয়াগো মারাদোনা। এবং সেই গোলের পরে পাঁচ ইংরেজ ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে কাটিয়ে করেন ওই ইনিংসের আরেকটি গোল। বিখ্যাত হাত বল প্রসঙ্গে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হলেও, মারাদোনা নিজে বলেন, “ওই সময় আমার হাতে এক ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা এসে পড়েছিল, যার জেরেই ওই দিন আমরা রক্ষে পাই। গোলটি হওয়ার পরেও আমি বিশ্বাস করিনি সেটি মেনে নেওয়া হবে বলে। তারপর যখন ওই বল বিশ্বসেরা হয়ে ওঠে তাতে আমি নিজেই অবাক।"

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে তাঁর ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবল জীবন থেকে ইতি ঘটে। ৯১টি ম্যাচে তিনি মোট ৩৪টি গোল করেছিলেন। এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে তিনি বিদায় নিয়ে ফিরে আসেন বোকা জুনিয়ার্সে, সেখানে দু-বছর খেলার পর ১৯৯৭ সালে আজকের দিনেই তিনি অবসর নেন সমস্ত ফুটবলের ময়দান থেকে। এরপর ২০১০ সালে আর্জেন্টিনার কোচ হিসাবে আবার ক্রীড়া জগতে ফিরে আসেন তিনি। ২০১৩ সালে সেখান থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর আর্জেন্টিনার একটি ছোটো দলের কোচ হয়ে ওঠেন তিনি। নিজের হাতে আবার তৈরি করতে থাকেন জুনিয়ার মারাদোনাদের। ফুটবলের জগতে জ্বালিয়ে রাখেন এক চিরস্মরনীয় রেকর্ডের বাতি। শুধুই হ্যন্ড অফ গড নয়, ফুটবলপ্রেমীদের মনের মাঝে ফুটবলের ভগবান হয়ে থেকে যাবেন দিয়াগো মারাদোনা।

No comments