Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

জলখাবারে চিড়ে মুড়ি নাকি ওটস মুসলি লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়

জলখাবারে চিড়ে মুড়ি নাকি ওটস মুসলিলিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়বাঙালির রান্নাঘরে একদা চিড়ে মুড়ির কদর ছিল। অধুনা সেসব অতীত। প্যাকেটবন্দি ওটস ও মুসলিতে মজেছেন বহু বাঙালি। ঠিক করছেন কি? জানাচ্ছেন পিজি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটেশিয়ান…

 


জলখাবারে চিড়ে মুড়ি নাকি ওটস মুসলি

লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়

বাঙালির রান্নাঘরে একদা চিড়ে মুড়ির কদর ছিল। অধুনা সেসব অতীত। প্যাকেটবন্দি ওটস ও মুসলিতে মজেছেন বহু বাঙালি। ঠিক করছেন কি? জানাচ্ছেন পিজি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটেশিয়ান সায়ন্তনী চট্টোপাধ্যায়।


একসময় সকাল-সন্ধ্যা জলখাবার বলতেই বোঝাত মুড়ি-তরকারি, নারকেল মুড়ি, মুড়ি-বাদাম বা জলমুড়ি। স্বাদ বদল বলতে চিড়ের পোলাও বা দইচিড়ে। বদলানো সময়ে বদলেছে বাঙালি বাড়ির জলখাবারও। চিড়ে ও মুড়ির জায়গায় বহু বাড়িতে জাঁকিয়ে বসেছে ওটস ও মুসলি। ওটসের খিচুড়ি, ওটস চিল্লা বা দই বা দুধের সঙ্গে ওটস কিংবা ফল মিশিয়ে দই বা দুধের সঙ্গে মুসলি মিশিয়েই আট থেকে আশি সেরে ফেলছে পেট ভরানো জলখাবার। অনেকে অফিসের লাঞ্চেও ছোট্ট টিফিনকৌটোয় ভরে নিয়ে চলে আসেন ওটস বা মুসলি। খাবারের এই বিবর্তন কি শুধুই বিশ্বায়নের হাওয়ায়, নাকি এর সত্যিই কোনও গুণমান আছে? দেখা যাক কোন খাবারে কতটুকু পুষ্টিগুণ আছে। 

 মুড়ি: ১০০ গ্রাম মুড়িতে মেলে ৭৩.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৭.৫ গ্রাম প্রোটিন।  ০.১ গ্রাম ফ্যাট। ক্যালশিয়ামের পরিমাণ ২৩ মিলিগ্রাম। এছাড়া আয়রন মেলে ৬.৬ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম মুড়িতে ৩২৫ ক্যালোরি মেলে। 

 চিড়ে: ১০০ গ্রাম ঢেঁকি ছাঁটা চিড়েতে মেলে ৭৭.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৬ গ্রাম প্রোটিন, ২০ মিগ্রা ক্যালশিয়াম ও ২০ গ্রাম আয়রন ও ৩৪৬ ক্যালোরি শক্তি। 

 ওটস: ১০০ গ্রাম ওটসে কোলেস্টেরল পাবেন ৬৭.৩ গ্রাম। প্রোটিন ১৩.৬ গ্রাম। আয়রন ৫ গ্রাম এবং ৪০৭ ক্যালোরি শক্তি। 

 মুসলি: ১০০ গ্রাম মুসলি থেকে ৬৬.১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ৮.২৪ গ্রাম প্রোটিন। ৪.১৭ গ্রাম ফ্যাট মেলে। রয়েছে ২৮৯ ক্যালোরি শক্তিও। তবে মুসলিতে সুগার থাকে ২৬.৩৫ গ্রাম। যেসব মুসলির প্যাকেটে জিরো অ্যাডেড সুগার থাকে। তাতে আবার সোডিয়ামের মাত্রা অনেকটা বেশি হয়। অর্থাৎ নুন বেশি পরিমাণে থাকে। 

মুড়ি-চিড়ে নাকি ওটস মুসলি এই দ্বন্দ্বে যাওয়ার আগে নিশ্চিত করতে হবে, তা যেন শরীরের প্রয়োজন ও ওজন বুঝে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সুন্দর সমাহার হয়।

 মুড়ি-চিড়ের লাভ-ক্ষতি?

মুড়ি বা চিড়ে এই দুই খাবারে মূলত তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়। মুড়ির সঙ্গে একটু দুধ বা দই বা তরকারি মেখে খেলে পেটও অনেকক্ষণ ভরা থাকে। মুড়ি সহজলভ্য ও আর্থিক দিক থেকেও পকেটসই। চিড়ের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধিতে চিড়ের জুড়ি নেই। চিড়েতে আয়রন বেশি থাকায় রক্তাল্পতায় উপকারী। মুড়ি বা চিড়ে যা-ই খান না কেন, খেয়াল রাখতে হবে এতে যা মিশিয়ে খাচ্ছেন, তা যেন স্বাস্থ্যকর হয়। মুড়ির সঙ্গে চানাচুর, ঝুরিভাজা বা চপ মিশিয়ে খেলে কিন্তু উপকার পাওয়া যাবে না। অনেকে চিড়েকে তেলে ভেজে, সঙ্গে নানা মশলা ও চানাচুর, কারিপাতা যোগ করে স্ন্যাক্স হিসেবে খান। এইভাবে খেলে কোনও নেই। বরং চিড়ে দই, নানা সব্জি দিয়ে চিড়ের পোলাও অনেক উপকারী। পেটের অসুখে চিড়ে সেদ্ধও কার্যকর। ক্ষতির অঙ্ক বিচার করতে বসলে মুড়ি-চিড়েয় ওজন কমানোর বা লাইফস্টাইল ডিজিজের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতাও কম। দুই খাবারই তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে দড়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখার মতো ফাইবার নেই। তবে শর্করা বেশি থাকায় ডায়াবেটিকদের মুড়ি ও চিড়ে খাওয়ায় লাগাম টানতে হবে।

 ওটস-মুসলির সুবিধা-অসুবিধা

ওটস বা মুসলি হালে খাবারের পাতে যোগ হলেও এদের পুষ্টিগুণ মারাত্মক। বিশেষ করে লাইফস্টাইল ডিজিজের সঙ্গে লড়তে ওটস বা মুসলিকে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে বলেন পুষ্টিবিদরা। এদের ফাইবার যেমন দার্ঘক্ষণ পেট ভরায়, তেমন হজমশক্তি বাড়ায় ও ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। দু’-তিন চামচ ওটসের সঙ্গে দুধ, বা দই মিশিয়ে খেলে বা ওটসের খিচুড়ি ও চিল্লা খেলে কম করেও দু’-তিন ঘণ্টা পেট ভরে থাকে। আজেবাজে খাবারের প্রতি আসক্তি কমে। ওটসে ক্যালোরিও মেলে অনেকটা। তাই কর্মক্ষমতায় বাড়ে। আর মুসলিতে কিন্তু ক্যালোরি অত বেশি থাকে না। তাছাড়া মুসলির প্যাকেটে অনেকটা সুগার যোগ করা থাকে। জিরো অ্যাডেড হলে আবার তাতে নুনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মুসলি সুগার, হার্টের অসুখ বা ওবেসিটিতে খুব আদর্শ নয়। 

পকেটের প্রশ্ন

শুধু খাবারের গুণ দেখলেই চলবে না। সেই খাবারই পাতে রাখতে হবে, যা এককথায় সস্তায় পুষ্টিকর হবে। মুড়ি-চিড়ের যা দাম, ওটস বা মুসলির দাম তার চেয়ে অনেক বেশি। 

তাই পকেটে কুলোলে ওটসকে রাখুন পাতে। আর বাজেটে না পোষালে অবশ্যই চিড়ে বা মুড়িকে আপন করুন। সেক্ষেত্রে মুড়ি বা চিড়ের সঙ্গী খাবারটি যেন স্বাস্থ্যকর খাবার হয়।

No comments