" জন্মাষ্টমী ব্রত " আগামী ২রা ভাদ্র , ১৯শে আগস্ট , ৭ হৃষিকেশ , শুক্রবার শ্রী শ্রী কৃষ্ণাবির্ভাব (জন্মাষ্টমী) ব্রতের উপবাস ।পারণ (ব্রত সমাপন) সূর্যোদয় ৫/১৮ গতে …
" জন্মাষ্টমী ব্রত " আগামী ২রা ভাদ্র , ১৯শে আগস্ট , ৭ হৃষিকেশ , শুক্রবার শ্রী শ্রী কৃষ্ণাবির্ভাব (জন্মাষ্টমী) ব্রতের উপবাস ।পারণ (ব্রত সমাপন) সূর্যোদয় ৫/১৮ গতে পূর্বাহ্ন ৯/৩৩ এর মধ্যে । সূর্য সিংহ রাশিগত হইলে আকাশে মেঘোদয়ে ভাদ্রমাসীয় কৃষ্ণাষ্টমীর অর্ধনিশায় বৃষরাশিস্থ চন্দ্রে রোহিনী নক্ষত্রে বসুদেব হইতে দেবকীর পুত্র রূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয় ।
বিষ্ণুরহস্যে , যথা -- ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমীতে যদি রোহিনী নক্ষত্র মিলিত হয় , তাহা হইলে ঐ তিথিকে শ্রী কৃষ্ণ জন্মভুমি জয়ন্তী বলা হয় । জন্মাষ্টমীতে উপবাস করিয়া ভক্তিসহকারে গোবিন্দের পূজা করিলে তিনি বাল্যে ,কৌমারে , যৌবনে ও বৃদ্ধকালে সঞ্চিত পাপ ও সপ্তজন্মার্জিত পাপসমূহ বিনষ্ট হয় । জয়ন্তীতে উপবাসপূর্বক হরি পূজা করিলে শত জন্মকৃত পাপ বিনষ্ট হয় । কৃষ্ণভক্তিদায়িনী শুভা জয়ন্তীতে যত্নপূর্বক উপবাস করিলে ঐ তিথি উপবাসীকে ধন , ধান্য ও পুণ্য প্রদান এবং নিখিল পাপ সংহার করেন ।
ব্রহ্মপুরাণে সুতোক্তিতে, যথা-- কৃষ্ণাষ্টমী বৈষ্ণবী তিথি বলিয়া অভিহিত ।কলিকালে যে সমস্ত ব্যক্তি ঐ বিষ্ণু তিথিতে উপবাসী ও জাগ্রত থাকিয়া হরিকে পূজা করেন, তাহাদিগকে কদাপি ভীষণ সংসারভয়ে ভীত হইতে হয় না । তাঁহারা যে স্থানে বাস করেন , কলি কলি সেখানে থাকিতে সক্ষম নহে ।যখন প্রত্যক্ষ সনাতন পুরুষ হরি ঐ তিথিতে ভূতলে অবতীর্ণ হইয়াছেন , তখন ঐ তিথি যে মুক্তিদা হইবে , ইহাতে আর আশ্চর্য কি ?
পদ্মপুরাণে , যথা -- সম্পূর্ণা অষ্টমী যদি মূহুর্তমাত্র রোহিনীর সঙ্গে সংযুক্তা হয় , আর যদি উহা নবমীর সহিত মিলিয়া হয় , তবে উহা কোটিকুলের মুক্তিদায়ীনী তিথি । কিন্তু সপ্তমীসংযুক্তা অষ্টমীতে উপবাস হইবে না । সেইদিন রোহিনী নক্ষত্র থাকিলেও ব্রত বিধেয় নহে । সূর্যোদয়ের পরে যদি সপ্তমী থাকে এবং পরে যদি অষ্টমী শুরু হয় , তবে উহা সপ্তমী বিদ্ধা অষ্টমী ,ঐ অষ্টমী তিথি ব্রতযোগ্যা নহে ।সপ্তমীবিদ্ধা না হইলে পরবর্তীনী নবমীর সহিত সংযুক্তা হইলে ঐ অষ্টমীকে শুদ্ধাষ্টমী বলা হয় । শুদ্ধাষ্টমীতে অহোরাত্র মধ্যে যে কোন সময়ে যদি মূহুর্তমাত্র রোহিনী নক্ষত্র থাকে, তবে সেই দিনেই উপবাস করিতে হইবে ।রোহিনীসংযুক্তা অষ্টমী যদি , সপ্তমীবিদ্ধা হয় তাহা ব্রতযোগ্যা হইতে পারে না ; পরের দিন যদি অষ্টমী থাকে, অথচ রোহিণী নক্ষত্র না থাকে ,তথাপি কেবল অষ্টমীতে ই উপবাস বিধেয় । পদ্মপুরাণে স্বর্গখণ্ডে মহারাজ দিলিপের প্রশ্নের উত্তরে বশিষ্ঠ মুনি বললেন-পুরা কালে চিত্রসেন নামে এক মহাপাপ পরায়ন রাজা ছিলেন ।এমন কোন পাপ নেই যা তার করা হয় নাই ।একদা সেই রাজা মৃগয়ার জন্য অরণ্যে প্রবেশ করিয়া ব্যাঘ্রকে সৈন্য দ্বারা বেষ্টন করিয়া বলিলেন! অসাবধানতা বশতঃ যাহার সন্মুখ দিয়া ব্যাঘ্র পলায়ন করিবে তাকে অবশ্যই হত্যা করা হইবে । রাজার বাক্যে সৈন্যগন প্রাণভয়ে অতি সাবধানতা অবলম্বন করিলে উক্ত ব্যাঘ্র হঠাৎ রাজার সন্মুখ দিয়াই পলায়ন করিল ।রাজা তাহাতে লজ্জিত হইয়া ব্যাঘ্রের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইল । কিন্তু ব্যাঘ্র হননে অসমর্থ হইয়া বনের মধ্যে অনেক দুঃখ ভোগ জনিত ক্ষু পিপাসায় কাতর হইয়া সন্ধ্যাকালে যমুনাতটে উপস্থিত হইল । সেই দিন রোহিনী নক্ষত্র সংযুক্ত জন্মাষ্টমী তিথি বাসর ছিল ।হে নরাধীপ ! উক্ত দিবসে স্বর্গকন্যাগন সুশোভন ধূপ , দীপ , উপহার ,গন্ধ ,পুষ্প ,মনোহর কুমকুমাদি দ্রব্য , নানাবিধ উপহার এবং বহুগুণ অন্য ভক্ত দ্বারা যমুনাতটে ব্রত করিতেছিলেন ।তাহা দেখিয়া রাজার মন আকৃষ্ট হইল এবং তথায় গমনপূর্বক কহিল ! হে কামিনীগন ! অন্নাভাবে আজ আমার প্রাণ নিশ্চয়ই চলিয়া যাইবে ,এই ক্ষুধার্তকে তোমরা অন্ন দান কর । রাজার বাক্য শুনিয়া কন্যাগন কহিল,হে অনঘ ! আজ জন্মাষ্টমী পুণ্যতিথি ,এই তিথিতে আপনার অন্নাদি ভোজন কর্তব্য নহে ।অদ্য অন্ন ভোজন করিলে তাহা গৃধ্র,খর (গর্দভ) ,কাক ও গোমাংস ভক্ষণ তুল্য , ইহাতে সন্দেহ নাই ।যে ব্যক্তি জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করে নাই তৎকর্তৃ যথাবিধি দত্ত দ্রব্যাদিও পিতৃগন গ্রহন করেন না । জন্মাষ্টমীতে ভোজন করিলে সমস্ত পিতৃগন পাতিত হন ।
দেবকন্যাগন মুখে এরূপ কথা শুনিয়া রাজা তখন কিঞ্চিৎ গন্ধ ,পুষ্প , ও উপহার আনিয়া হর্ষমনে তাহাদের সহিত ব্রত উদযাপন করিল ।এই ব্রতের প্রভাবে সেই রাজা চিত্রসেন পিতৃগসহ হরিধামে গমন করিলেন ।
অতএব সকল কল্যাণকামী জনগনের কাছে অনুরোধ আপনারা এই ব্রত পালন করে নিজ কল্যাণ সাধন করে এবং ইহা সবাইকে জানিয়ে তাদেরকেও ব্রত পালন করিয়ে জগতপিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সুখবিধান করুন ।
No comments