Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

১৯৫৪ সাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অন্যতম প্রিয় ছাত্র জ্ঞানচন্দ্রকে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ গ্রহন করতে অনুরোধ করলেন৷ আই.আই.টি'র ছাত্ররা তাঁকে ছাড়বে না,তারা অনশন শুরু…

 




১৯৫৪ সাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অন্যতম প্রিয় ছাত্র জ্ঞানচন্দ্রকে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ গ্রহন করতে অনুরোধ করলেন৷ আই.আই.টি'র ছাত্ররা তাঁকে ছাড়বে না,তারা অনশন শুরু করে দিলেন,রেল লাইনে বসে পড়ে ছাত্ররা তাঁর পথ আটকে দেয়৷ পড়ুয়াদের অনেক বুঝিয়ে তিনি কলকাতায় আসতে পেরেছিলেন৷ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় যাদের নিজের ছেলের মত মানুষ করেছেন জ্ঞানেন্দ্রচন্দ্র (জ্ঞানচন্দ্র)ঘোষ তাদের অন্যতম৷ পৃথিবীর যেখানে থাকুন জ্ঞানচন্দ্র কে চিঠি লিখেছেন আচার্য৷ খোঁজখবর নিয়েছেন কাজের,কখনও বা উপদেশ দিয়েছেন৷ জ্ঞানচন্দ্র তাঁর কাছে 'বড় জ্ঞান' আর ছোট জ্ঞান নতুন করে বলার নেই,তিনি জ্ঞানেন্দ্রনাথ৷ আমাদের দেশে পলিটেকনিক শিক্ষা প্রচলন করেছিলেন জ্ঞানচন্দ্র৷ তাঁকে এই কারিগরি বিভাগ পত্তনের জনক বলা যেতে পারে৷


প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় 'বড় জ্ঞান' ছাত্র হিসেবে ছিলেন অসম্ভব মেধাবী৷ পুরুলিয়া,গিরিডির পর জ্ঞানচন্দ্র ও তাঁর মেজদা একসাথে ভর্তি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে৷ আইএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েছিলেন৷ ভর্তি হলেন বিএসসি ক্লাসে৷ মেঘনাদ,সত্যেন্দ্রনাথ গেলেন অন্যদিকে,জ্ঞানচন্দ্র,জ্ঞানেন্দ্রনাথ গেলেন আর এক দিকে৷ ১৯১৬সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র যখন বিজ্ঞান কলেজে যোগ দিলেন জ্ঞানচন্দ্র তাঁর গবেষণা সহকারী হিসাবে এসেছিলেন৷ বাংলা জুড়ে তখন স্বাধীনতার লড়াই৷ জ্ঞানচন্দ্র নিজেও ছাত্রদের মিছিলে একাধিকবার যোগ দিয়েছেন৷


১৯১৯ তারকনাথ পালিত স্কলারশিপ নিয়ে জ্ঞানচন্দ্র লন্ডন গিয়েছেন৷ ছবি কী করে ওঠে! এই বিষয় জানবার একটা ইচ্ছা তাঁর ছিল৷ সেইজন্য তিনি আলোকরসায়ন নিয়ে লন্ডনে কাজ করেছেন৷  বহুকাল ইচ্ছে জার্মানি যাবেন৷ তড়িৎ-বিশ্লেষণ তত্ত্ব নিয়ে যারা কাজ করেছেন দুনিয়া জোড়া নাম কিনেছেন তাদের সাথে দেখা করবেন৷ একেবারে শুরুতে যে গবেষণার কাজ করেছেন জ্ঞানচন্দ্র সেটা তাঁর জীবনের মনে হয় সর্বশ্রেষ্ঠ ৷ তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্যদের নিয়ে মৌলিক তত্ত্ব প্রণয়ন করেন৷ দেশে ফেরার পথে গেলেন জার্মানি৷ একে একে নার্নস্ট,প্ল্যাঙ্ক,হারার-সবার সঙ্গে দেখা হল৷ সবাই তাঁর কাজের উচ্চ প্রশংসা করলেন৷ শিক্ষক প্রফুল্লচন্দ্র তাঁর এই কাজকে 'ঘোষের নিয়ম' হিসেবে চিহ্নিত করেন৷ পরে আমরা দেখেছি জ্ঞানচন্দ্রের কাজের ওপর ভিত্তি করে পল ডিবাই,ও হুকেল তড়িৎ বিশ্লেষ্যর দ্রবণের ধর্মকে আরও স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন৷


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবে তৈরি হচ্ছে ফিলিপ হ্যার্টগ জ্ঞানচন্দ্র কে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হবার আমন্ত্রন জানান৷ খুশি মনে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহন করেছিলেন৷

জ্ঞানচন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন ১৯২১সালে,ছিলেন ১৫বছর৷ রসায়ন বিভাগটি সাজিয়েছিলেন মনের মত করে,কৃষি রসায়ন ও জৈব রসায়ন বিভাগ চালু হয়েছিল৷তাঁর গবেষণার উৎকর্ষ বহু ছাত্র কে সেই সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনে নিয়ে যায়৷


 ওদিকে ব্যাঙ্গালোরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স রমনের পর যোগ্য অধিকর্তা খুঁজছে৷ যোগ দিলেন জ্ঞানচন্দ্র৷ অনেক বিভাগ তিনি খুলেছিলেন৷ পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং,ফার্মানটেশন টেকনোলজি,হাই প্রেসার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস রিএকশন৷ প্রশাসন দেখেছেন,তবে কখনও গবেষণার কাজ অবহেলা করেন নি৷


একজন মানুষ মাত্র ২৭বছরে বিভাগীয় প্রধান!মাত্র ৪২বছর বয়সে তিনি আই.আই.এসসি'র অধিকর্তা৷ অভাবনীয় পরিশ্রম করতেন৷ দিনে খাটতেন ১৫-১৬ঘন্টা৷ শিল্প ও কারখানা তৈরির জায়গা অনুসন্ধানের জন্য সারা ভারত ঘুরতেন৷


 ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশের নানা প্রান্তে উচ্চমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হবে৷ প্রথমটি হল খড়গপুরে ১৯৫০সালে খড়গপুর আই.আই.টি৷ এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা হয়ে এলেন জ্ঞানচন্দ্র৷ শিক্ষার পাঠক্রম,গবেষণাগার সব নিজের মত করে সাজালেন,কারও প্রভাব মেনে নেন নি,পরামর্শ নিয়েছেন৷ কলকাতাতেও তিনি খুব বেশিদিন থাকতে পারলেন না৷ কর্মোদ্যম মানুষদের কার না চাই! অনুরোধ পাঠালেন নেহেরু,পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হতে৷ দিল্লি আসতে হল৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন৷  ১৯৫৮এর শেষ দিকে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন,আর ১৯৫৯এর ২১ জানুয়ারি আমরা তাঁকে চিরদিনের মত হারাই

No comments