বাবা ইটভাটার শ্রমিক,ছেলে ভূগোলে ১০০
উচ্চমাধ্যমিকে ভূগোলে একশোয় ১০০।ভালো রেজাল্ট করার পর শুভেন্দুর স্বপ্ন ভূগোলের গবেষক হয়ে দেশের নানাপ্রান্তে পাহাড়,পর্বত, নদী, মরুভূমি, মানুষের জীবনযাপন ঘুরে ঘুরে দেখা,তাঁদের নিয়ে বই লেখা। কিন্তু…
বাবা ইটভাটার শ্রমিক,ছেলে ভূগোলে ১০০
উচ্চমাধ্যমিকে ভূগোলে একশোয় ১০০।ভালো রেজাল্ট করার পর শুভেন্দুর স্বপ্ন ভূগোলের গবেষক হয়ে দেশের নানাপ্রান্তে পাহাড়,পর্বত, নদী, মরুভূমি, মানুষের জীবনযাপন ঘুরে ঘুরে দেখা,তাঁদের নিয়ে বই লেখা। কিন্তু কঠিন বাস্তবের নিষ্পেষণে শুভেন্দুর সেই স্বপ্ন যেন দিশাহারা। ৪৬৫ নম্বর পেয়েও হলদিয়ায় ইটভাটার শ্রমিকের ছেলে শুভেন্দু দাস আদৌ কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। বাবার স্নায়ুর রোগ থাকায় বড় ছেলে হিসেবে এবার তাঁকেই সংসারের হাল ধরতে হয়তো একটা কাজ খুঁজে নিতে হবে। সেজন্য মেধাবী ছাত্রটি ৯৩ শতাংশ নম্বর পেলেও হতদরিদ্র পরিবারে উচ্ছ্বাসের লেশমাত্র নেই। এই অবস্থায় হলদিয়ার রামগোপালচক ভারতী বিদ্যামন্দিরের এই পড়ুয়ার পাশের দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত শাসমল ও শিক্ষক দুর্গাপদ জানা।
হলদিয়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে রায়রাঞ্যাচক এলাকায় শুভেন্দুদের বাড়ি। বাড়ি ঠিক বলা চলে না। হলদিয়া পেট্রকেমের আবাসন এইচআরইএলের প্রাচীর ও সরকারি রাস্তার পাশে একচিলতে জায়গায় টালি চাপানো ইটের দু’কামরার ঘর। সরকারি জমিতে ৮ ফুট বাই ১৫ ফুটের অস্থায়ী ঘরই শুভেন্দুর পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই। আদি বাড়ি এখান থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে হলদিয়ার ঈশ্বরদহ জালপাই গ্রামে। তাঁর বাবা অর্জুন দাস বছর কুড়ি আগে কাজের খোঁজে হলদিয়া শহরে চলে আসেন। রাস্তার পাশে ঠাঁই গড়ে কোনও রকমে কাজ খুঁজে নেন ইটভাটায়। দিনে ২৫০ টাকা মজুরি আর রেশনের চালে কোনও রকমে সংসার চলে। স্নায়ুর রোগ থাকায় মাঝে মাঝে ভারী কাজ করতে গিয়ে হাত অবশ হয়ে যায় তাঁর। ফলে মাসের শেষে মজুরি কমে যায়। তাছাড়া বর্ষা নামলেই আবার ৬ মাস কাজ থাকে না।
সংসারের কষ্ট দেখে উপার্জন করার জন্য মনস্থির করে ফেলেছেন শুভেন্দু। দিনে ১০ ঘণ্টা পড়ার ফাঁকেই ইটভাটায় গিয়ে কখনও মাটি কাটার জেসিবি মেশিন, কখনও মোটর কীভাবে সারাতে হয়, শিখে ফেলেছেন। তাঁর নম্বর ভূগোলে ১০০, এডুকেশনে ৯৩, ইতিহাসে ৯২, দর্শনে ৯৪, বাংলায় ৮৬ এবং ইংরেজিতে ৫৭। শুভেন্দু বলেন, ইচ্ছে ছিল ভূগোল নিয়ে কলেজে পড়ে শিক্ষক হব। লকডাউনে স্কুলের স্যারেরা সাহায্য করেছেন বলেই ভূগোলে এত নম্বর পেয়েছি। মোবাইল না থাকায় অনলাইন ক্লাস ঠিক মতো করতে পারতাম না। এখন খোঁজ করছি মেকানিক হওয়ার জন্য কোথায় ট্রেনিং নেওয়া যায়। মেকানিকের সার্টিফিকেট থাকলে হলদিয়া বা রাজ্যের বাইরে কাজ পেতে সুবিধে হবে।
No comments