চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন স্কুল রাজ্যের দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় মনের আলো জ্বেলে বাজিমাত করলেন হলদিয়ার ১৫ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়াা হার না মানা জেদেই তারা এখন স্টার'। মাধ্যমিকের পর এবার উচ্চ মাধ্যমিকেও নজরকা…
চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন স্কুল রাজ্যের দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয়
মনের আলো জ্বেলে বাজিমাত করলেন হলদিয়ার ১৫ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়াা
হার না মানা জেদেই তারা এখন স্টার'। মাধ্যমিকের পর এবার উচ্চ মাধ্যমিকেও নজরকাড়া সাফল্য পেল হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের আবাসিক দৃষ্টিহীন স্কুলের ওই পড়ুয়ারা। এদের মধ্যে দু'জন পার্থ কুণ্ডু এবং সুশান্ত সিং রাজ্যের দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছে। 'স্টার' পেয়েছে স্কুলের মোট ১১ জন দৃষ্টিহীন মেধাবী পড়ুয়া এবং তিনজন প্রথম বিভাগে পাশ করেছে।
মিশন স্কুল থেকে এবার ৪৭৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম হয়েছে পার্থ কুণ্ডু। ৪৬৮ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে সুশান্ত সিংহ। পার্থর বাবা ছোট চাষি। সুশান্তর বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। করোনা ও লকডাউনের মধ্যেই মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরনোর পর মিশন স্কুলেই ভর্তি হন। দু'বছরের মধ্যে মাত্র মাস চারেক কোনও রকমে স্কুল হয়েছে। অনলাইনেই পড়াশোনা করতে হয়েছে। স্যারেরা ক্লাসের অডিও পাঠিয়ে দিতেন হোয়াটসঅ্যাপে। নুন আনতে পান্তা ফুরনো পরিবারের দৃষ্টিহীন এই পড়ুয়ারা পড়েছিল অথৈ জলে। পার্থ ৯০ শতাংশ এবং সুশান্ত ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীনতা নিয়েও কার্যত অসাধ্য সাধন করেছে।
পার্থ ৯৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। মাধ্যমিকেও পার্থ প্রথম হয়েছিল। পার্থ বাংলায় ৯১, ইংরেজিতে ৯৬, এডুকেশানে ৯৩, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৫,ইতিহাসে ৯৭, সংস্কৃতে ৯২ নম্বর পেয়েছে। তার বাড়ি বাঁকুড়ার কোতলপুরের দেপাড়ায়। ক্লাস টু থেকেই মিশন স্কুলে পড়াশোনা করছে পার্থ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও বক্তৃতায় পটু পার্থ গানেও মাতিয়ে দেয় স্কুলের অনুষ্ঠান। দাবার চালেও মাত করে সবাইকে। ইংরেজি নিয়ে কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে পার্থর। অন্যদিকে, সুশান্ত পেয়েছে ৯৩.৬ শতাংশ নম্বর। ইংরেজি ছাড়া সুশান্ত সব বিষয়েই ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। তাঁর বাড়িও বাঁকুড়ার ইন্দা মহকুমায়। ক্লাস ওয়ান থেকে মিশন স্কুলে পড়াশোনা করছে। ইতিহাস নিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার। মিশনের সফল কৃতীদের বাড়ি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। অত্যন্ত গরিব পরিবারের এই ছাত্রছাত্রীরা দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে প্রি প্রাইমারি থেকেই বিবেকানন্দ মিশন স্কুলে পড়াশোনা করেছে। পার্থ, সুশান্ত ছাড়াও বাকি সফল দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা হল শুভজিৎ ভূঁইয়া (প্রাপ্ত নম্বর ৪৫০), বিশ্বজিৎ বেরা (৪৩২), শক্তিপদ পাল (৪২৫), বাবলু কৈবর্ত (৪২০), মন্টু ঘোষ (৪১৯), পার্থধবল দেব (৪১৩), অরুণ বাগ (৪১১) দিপালী শিট (৪১০), শুকদেব ভাল্লা (৪০৮) স্বাতী বেরা (৪০০), বন্দনা কৈবর্ত (৩৬৭), রবীন মান্ডি (৩২৮), হপন হেমব্রম (৩২০)। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের তারিফ করে অভিনন্দন জানিয়েছেন মিশন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার পণ্ডা। আজ কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে স্কুলের সার্টিফিকেট মার্কশীট তুলে দিলেন।
No comments