চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম স্কুলের পরীক্ষার্থীরা দৃষ্টিহীনদের মধ্যে রাজ্যের সেরা
অদম্য মনের জোর, নিয়মানুবর্তিতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবারও মাধ্যমিকে নজরকাড়া সাফল্য পেল সুতাহাটার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম আবাসিক দৃষ্ট…
চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম স্কুলের পরীক্ষার্থীরা দৃষ্টিহীনদের মধ্যে রাজ্যের সেরা
অদম্য মনের জোর, নিয়মানুবর্তিতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে এবারও মাধ্যমিকে নজরকাড়া সাফল্য পেল সুতাহাটার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম আবাসিক দৃষ্টিহীন স্কুলের পড়ুয়ারা। স্কুলের ১৩ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছিল। দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের মধ্যে রাজ্যের প্রথম পাঁচে স্থান পেয়েছে পাঁচজন। আটজন ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। এদের মধ্যে আনন্দ মণ্ডল ৯৪.৮৬শতাংশ নম্বর পেয়েছে। রাজ্যে দৃষ্টিহীনদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম সে। আনন্দর প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৪। জয়দেব মাহাত ৯৪.৭১শতাংশ ও করণ বাউড়ি ৯৪.৫৭শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে। টানা তিন বছর ধরে এই স্কুলের পড়ুয়ারা রাজ্যে দৃষ্টিহীনদের মধ্যে সেরার স্থান দখল করছে।
দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের প্রায় সকলেই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে। এদের মধ্যে দশজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রী। মনের আলোয় দু’চোখের অন্ধকার দূর করে ওরা এখন মাধ্যমিকের উজ্জ্বল ‘তারকা’। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা শুধু নন, এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে বিডিও সকলেই দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের কঠিন লড়াই ও সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।
আনন্দ মণ্ডলের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের ভোগপুর বাঙালপুর গ্রামে। তার বাবা চাষবাস করে সংসার চালান। জন্মগত ছানির কারণে একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন ছোট্ট আনন্দকে তার পরিবার প্রিপ্রাইমারিতে এনে মিশনে ভর্তি করেছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দ দারুণ রবীন্দ্র সঙ্গীত ও ভক্তিগীতি গায়। আনন্দ বাংলায় ৮৭, ইংরেজিতে ৯৬, অঙ্কে৯৬, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৪, ইতিহাসে ৯৪ ও ভূগোলে ১০০ পেয়েছে। ভবিষ্যতে আনন্দর ইচ্ছা শিক্ষক হওয়া ও দৃষ্টিহীনদের জন্য কাজ করা। আনন্দ ছাড়াও জয়দেব মাহাত(৬৬৩), করণ বাউড়ি(৬৬২), সন্দীপ ভকত(৬৫৭), সঞ্জয় গোয়ালা(৬৫৭), অভিরূপ সামন্ত(৬৫২), শিবা চক্রবর্তী(৬৪৭), অর্পিতা গিরি(৬৩৬), আদিত্য মুর্মু(৬১৯), স্বপ্না রাই(৬১৯), রুমানা গোপ(৫৯৯), বাবু পাত্র(৫৬৪), সূর্য হেমব্রম(৫৩৩) নম্বর পেয়েছে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস পন্ডা ও ব্রেইল কম্পিউটার শিক্ষক শান্তনু মাইতি বলেন, দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েগুলির মনের জোর আমাদের প্রেরণা জোগায়। ওদের এই সাফল্য আমাদের স্কুলকে গর্বিত করেছে।
চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন দৃষ্টিহীন আবাসিক স্কুলের পড়ুয়া রাজ্যে দৃষ্টিহীনদের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী আনন্দ মণ্ডলের হাতে মার্কসিট তুলেদিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক আশিস পণ্ডা।
No comments