Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দিন মজুরের মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৬৩ পড়তে চায় নার্সিং

রাখী রানা– স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেদিন মজুরের মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৬৩, পড়তে চায় নার্সিংবাবা দিনমজুর,কোনরকমে সংসার চলে।মেয়ের পড়াশোনার জন্য ঠিক মতো টিউশন টুকু দিতে পারেননি।উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশ…

 

রাখী রানা– স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে

দিন মজুরের মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৬৩, পড়তে চায় নার্সিং

বাবা দিনমজুর,কোনরকমে সংসার চলে।মেয়ের পড়াশোনার জন্য ঠিক মতো টিউশন টুকু দিতে পারেননি।উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে ৪৬৩ নম্বর পেয়েছে হলদিয়ার গেঁওয়াডাব পঞ্চানন স্মৃতি মিলন বিদ্যাভবনের ছাত্রী রাখী রানা।  মোট পরীক্ষার্থী:- ১০১পাশ:- ১০১ সর্বোচ্চ নম্বর:- রাখী রানা– স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ৪৬৩

তাই এই সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষক,শিক্ষকা থেকে তার বন্ধুরাও।

হলদিয়া পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শোলাট গ্ৰামের বাসিন্দা শীতল রানা পাড়া গাঁয়ে দিন মজুরের কাজ করে‌ন।সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকে সংসারে।শীতল বাবুর স্ত্রী নিয়তীদেবী বাড়িতে ছাগল ও মুরগী পালন করে স্বামীকে সাহায্য করে‌ন।এক ছেলে এক মেয়ে।ছেলে কলেজে স্নাতক বিভাগে পড়তে পড়তে আর্থিক সঙ্কটের জন্য পড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।বর্তমানে গ্ৰামে টিউশন পড়িয়ে নিজের হাত খরচের জোগাড় করে।একমাত্র মেয়ে ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী।পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী ক্রমাগত ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে।মাধ্যমিকে ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল।উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।তার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে গ্ৰামের বাসিন্দারা।

রাখীর প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৩,অঙ্কে ৯৯,কেমেস্ট্রিতে ৯৯, বায়োলজিতে ৯১,ফিজিক্সে ৯০,বাংলায় ৮৪ ও ইংরেজিতে ৮২ পেয়েছে।আগামীদিনে সে চিকিৎসক হতে চায়।কিন্তু পরিবারের অবস্থার কথা ভেবে পিছিয়ে যাচ্ছে।তার কথায় মাধ্যমিকের পর কোভিড পরিস্থিতিতে বাবার কাজ বন্ধ হয়ে গেছিল।সেই সময় দুবেলা খাওয়ার ঠিক মতো খেতে পেতাম না,পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছিল। কিন্তু স্কুলের স্যারেরা পাশে দাঁড়িয়েছিল,উঁচু ক্লাসের দাদা,দিদিদের থেকে বই জোগাড় করে পড়াশোনা করেছি‌।স্কুলের স্যারেরা ভর্তিতে ছাড় দিতেন,বিজ্ঞান বিষয়ের প্র্যাকটিক্যাল খাতা সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে দিতেন।ছয়টি বিষয়ের অর্ধেক বিষয়ে টিউশন নিতে পারিনি।স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস হতো,কিন্তু সেই ক্লাসে যোগদানের জন্য স্মার্টফোন কেনার অর্থ ছিল না।তাই ঠিকমতো ক্লাসটুকু করতে পারিনি।টিউশন গিয়ে যতটুকু পড়তাম সেটাই বাড়িতে একাধিকবার অনুশীলন করতাম।

ওই ছাত্রীর বাবা শীতল বাবু বলেন মেয়ে প্রথম থেকেই ভালো পড়াশোনা করে,কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য অর্থের অভাবে আমি মেয়েকে ঠিক মতো পড়াতে পারিনি। অনেক কষ্টে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছিলাম। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে অনেক খরচ,তাই পড়া বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম।সংসার টানতেই হিমসিম খেতে হয়।তাই মাঝে মাঝে ধার দেনা করতে হয়।মেয়ের বিয়ের চিন্তায় রয়েছি। কিন্তু মেয়ে ডাক্তারি পড়ে চিকিৎসা হতে চায়,যেদিন উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ হয়,মেয়ের ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে শুনে বাবা কেঁদে ফেলেছিলে।

মেয়েকে বুঝিয়েছিলেন এতো টাকা পাবো কোথায়.? আমার পক্ষে পড়ানো কোনমতেই সম্ভব নয়।মেয়ে বাবাকে অনুরোধ করে বলেছিল অত্যন্ত আমাকে নার্সিং কলেজে পড়ার জন্য সুযোগ করে দাও।

নিয়তী দেবী বলেন মেয়ে পড়াশোনার ফাঁকে আমাকে সাহায্য করতো,বছরে ঠিক মতো ভালো জামা পর্যন্ত কিনে দিতে পারিনি।সরকারি সাহায্য পেলে মেয়েকে পড়াবো,নাহলে আর পড়াতে পারবো না।

রাখী বলেন বাবা,মা বলেই দিয়েছে পড়াতে পারবে না।বাকি বন্ধুরা ভালো ভালো কলেজে ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু আমি হতে পারবো না জেনে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক জলধর মহাপাত্র বলেন আমার স্কুলের ছাত্রী নয় ওকে মেয়ের মতো ভালোবাসতাম,ওর বাড়ির অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল,স্কুলের ড্রেস টুকুও কিনে দিতে পারেনি।আমাদের স্কুল থেকে ওর পড়াশোনার সমস্ত রকম দায়িত্ব নিয়েছিলাম।ভবিষ্যতেও ওর পাশে থাকবো।চাই ও ভালো মানুষ হোক, মানুষের পাশে দাঁড়াক।

No comments