Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মুন্ডা বিদ্রোহের মহাপুরুষ-বীরসা মুন্ডা

মুন্ডা বিদ্রোহের মহাপুরুষ-বীরসা মুন্ডা
ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতের নাগপুরে বেজে উঠেছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দামামা। নাগফেনি, ফালকোট এবং ছোট নাগপুরের বনে-জঙ্গলে দুর্গ গড়ে প্রায় নিরস্ত্র হাতেই অস্ত্র-সজ্জিত ব্রিটিশ বেনিয়াদের সঙ্গে, …

 



মুন্ডা বিদ্রোহের মহাপুরুষ-বীরসা মুন্ডা


ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতের নাগপুরে বেজে উঠেছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দামামা। নাগফেনি, ফালকোট এবং ছোট নাগপুরের বনে-জঙ্গলে দুর্গ গড়ে প্রায় নিরস্ত্র হাতেই অস্ত্র-সজ্জিত ব্রিটিশ বেনিয়াদের সঙ্গে, লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিপাগল মানুষরা। আর এই আন্দোলনটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুন্ডা সমপ্রদায়েরই এক যুবক বীরসা। আদিবাসীদের মধ্যে সেই প্রথম শোষিতের পক্ষ নিয়ে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

নাগফেনি, ফালকোট এবং ছোট নাগপুর এলাকায় মুন্ডা আদিবাসীদের ঘন-বসতি গড়ে ওঠে। সেই এলাকায় আদিবাসী সমপ্রদায় বহু পরিশ্রমের বিনিময়ে সমতলভূমি, উবর্র ভূমি ও কৃষি কাজের জন্য উপযোগী মাঠ করে তোলে। সেখানকার আদিবাসী জনগণ ভূমিতে ফসল ফলাত এবং জঙ্গল থেকে কাঠ, ফলমূল, বন আলু, পশুপাখি শিকার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত। ব্রিটিশ সরকারের নজর পড়ে ওই এলাকায়। ব্রিটিশ সরকার স্থানীয় জমিদার ধনকুবের শ্রেণীর লোকজনকে হাত করে নিয়ে, আদিবাসী অধ্যুষিত ও বসবাসরত বন-জঙ্গল এলাকাটি জমিদার বরাবর লিজ প্রদান করে। জমিদাররা লিজ গ্রহণ করার পর অন্যায়-অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। যে বন-জঙ্গল আদিবাসীদের প্রাণ, সেই জঙ্গলে ঢুকলেই নিরীহ সহজ-সরল আদিবাসী সমপ্রদায়কে ধরে কঠিন সাজা প্রদান করা হতো। তাই বেঁচে থাকার তাড়নায় ক্ষোভের সঞ্চার হয় অনাহারী মানুষের মাঝে। সেই ক্ষোভকে প্রশমিত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার এক অভিনব কায়দায় ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করে। আদিবাসী মানুষকে নিয়ে গবেষণা করার জন্য গবেষক ড. বার্লিকে নিয়ে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। বিভিন্ন জায়গাতে খ্রিস্টান চার্চ স্থাপন করা হয়। খ্রিস্টান মিশনারিরা প্রথমেই দরিদ্র_ অসুস্থ আদিবাসীদের টার্গেট করে এবং সেবা করার নামে ধর্ম-প্রচার চালাতে থাকে। তাই বহু আদিবাসী নিজ ধর্ম, সংস্কৃতি ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু তাতেও আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন কমেনি। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকল। প্রথমে ধর্মান্তরিত কিছু শোষিত ও নির্যাতিত আদিবাসী মুন্ডা সমপ্রদায়ের লোকজন চার্চের ফাদারের কাছে অভিযোগ জানান। কিন্তু কোন প্রতিকার পান না। উল্টো চার্চের ফাদার ধর্মের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখে ধর্মভীরু নিরীহ আদিবাসী মানুষদের। এ পরিস্থিতিতে বীরসা মুন্ডা নীরব থাকতে পারল না। বীরসা বিদ্রোহী হয়ে চার্চ থেকে স্বজাতিদের বের করে এনে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘোষণা প্রদান করেন। এই ঘোষণা আদিবাসীদের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল এবং দলে দলে শোষিত বঞ্চিত ও নির্যাতিত আদিবাসী জনগণ বীরসার মন্ত্রে দীক্ষিত হতে থাকল। বীরসা মুন্ডার আহ্বানে কোল, মুন্ডা, ওরাং, হো, সাঁওতালসহ বিভিন্ন সমপ্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথম আঘাত হিসেবে স্থানীয় খ্রিস্টান মিশনগুলোতে হামলা এবং অগি্নসংযোগ করে। এ সময় কিছু ইংরেজ, মিশনারি, পুলিশ, চৌকিদার আহত হয়। সেই সময় অনেক আদিবাসী জনগণ বীরসা মুন্ডাকে ভগবান বীরসা মুন্ডা বলে আখ্যায়িত করতে থাকে। অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, অবিচার ইত্যাদির বিরুদ্ধে এবং মেহনতি নিরীহ সহজ-সরল, খেটে-খাওয়া আদিবাসী সমপ্রদায়ের মুক্তির লক্ষ্যে ভগবান বীরসা মুন্ডার আবির্ভাব হয়েছিল বলে মনে করতে শুরু করল। তাই বীরসা মুন্ডা ভগবান বীরসা মুন্ডা নামেই পরিচিত হলেন।

বীরসা মুন্ডা আদিবাসীদের উদ্দেশে বলেন, ইংরেজ ও খ্রিস্টান মিশনারি আলাদা নয়। সাদারা কখনো গরিব দুঃখী আদিবাসীদের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। মিশনারি এবং অফিসার সবাই এক জাত। বীরসা মুন্ডা যুদ্ধের আগে গড়ে তোলে খাদ্যের মজুদ। বিভিন্নভাবে সে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। জমিদারদের জমিতে সবাই হাল চাষ বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে সরকারি খাজনাও বন্ধ করে দেয়। এ খবর ব্রিটিশ সরকারের কাছে গেলে ইংরেজ সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। ব্রিটিশ সরকার বিশাল সৈন্য বহর নিয়ে অমানবিক নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের আশ্রয়স্থল জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে আদিবাসীদের ধরপাকড় ও গ্রেফতার করতে থাকে। ১৯০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে বীরসা মুন্ডাকে ধরে অন্ধকারের কুঠরিতে নিক্ষেপ করে, তথা রাচির কারাগারের মধ্যে। বীরসা মুন্ডাকে পেয়ে অন্য আটককৃত আসামিদের মধ্যে আরও তাদের উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কারাবাসীরা বীরসা মুন্ডাকে পেয়ে যারপরনাই খুশি হয় এবং বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে তারা অর্থাৎ কারাবন্দীরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পায়। বীরসা মুন্ডার তেজোদীপ্ত কথায় উজ্জীবিত হন সব কারাবন্দী। ইংরেজ সরকার অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে কারা অভ্যন্তরে এক ডাক্তারকে পাঠিয়ে চিকিৎসার নামে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে এই মহাপুরুষ বীরসা মুন্ডাকে ১৯০০ সালের জুন মাসের ৯ তারিখে হত্যা করে। বীরসা মুন্ডার মৃত্যুকে জেল কর্তৃপক্ষ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মর্মে প্রকাশ করে।

এই বিদ্রোহের মহানায়কের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখান থেকে প্রেরণা নেয় গোটা ভারতবাসী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিকামী বৃহত্তর জনগোষ্ঠী একে একে স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে পারে। আদিবাসীদের মধ্যে এই ঘটনাই প্রেরণার উৎস হয়ে তাদের উৎসাহিত করে তোলে। সব আদিবাসী ওই মহান পুরুষ মুন্ডা বিদ্রোহের মহানায়ক বীরসা মুন্ডাকে আজও ভগবান বীরসা মুন্ডা বলে অন্তরে ধারণ করে।

No comments