Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দাঁড়িয়ে আছি ২৩.৩০' ডিগ্রি উত্তর কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে, মধ্যপ্রদেশের ভূপাল বিদিশা রাজ্য সড়কের ওপর, সাঁচি যাওয়ার রাস্তায়--শুচিস্মিতা মিশ্র

দাঁড়িয়ে আছি ২৩.৩০' ডিগ্রি উত্তর কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে, মধ্যপ্রদেশের ভূপাল বিদিশা রাজ্য সড়কের ওপর, সাঁচি যাওয়ার রাস্তায়--শুচিস্মিতা মিশ্র  
আজ ২১ জুন। দাঁড়িয়ে আছি 23°30' উত্তর কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে। এটি একটি বৃ…

 



দাঁড়িয়ে আছি ২৩.৩০' ডিগ্রি উত্তর কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে, মধ্যপ্রদেশের ভূপাল বিদিশা রাজ্য সড়কের ওপর, সাঁচি যাওয়ার রাস্তায়--শুচিস্মিতা মিশ্র  


আজ ২১ জুন। দাঁড়িয়ে আছি 23°30' উত্তর কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে। এটি একটি বৃত্তাকার কাল্পনিক রেখা, যা উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং পৃথিবীকে পূর্ব পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে। আজ সূর্যরশ্মি এই রেখার ওপর লম্বভাবে পড়বে। ফলস্বরূপ উত্তর গোলার্ধের সর্বত্র সবচেয়ে বড়  (১৪ ঘণ্টা) দিন আর সবচেয়ে ছোট (১০ ঘণ্টা) রাত্রি হবে। 


আপাত দৃষ্টিতে আমাদের মনে হয় সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে মকরক্রান্তি রেখা পর্যন্ত সারা বছর ঘোরাফেরা করে। তাই বিষুবরেখা,কর্কটক্রান্তি রেখা,মকরক্রান্তি রেখার ওপর সূর্যকিরণ বিভিন্ন সময়ে লম্বভাবে পড়ে। আসলে সূর্য ঘোরাফেরা করে না,সূর্য স্থির। পৃথিবীর বার্ষিক গতি, তার কক্ষতলের সঙ্গে মেরুরেখার 66°30'কোনে হেলে থাকার জন্য সারা বছর সূর্যরশ্মির পতন কোন সমান হয়না। সৌরকিরণ কর্কটক্রান্তি থেকে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে ঘোরাফেরা করে এবং পৃথিবীর জলবায়ু নির্ধারিত হয় এই অক্ষরেখাগুলির দ্বারাই। ২১জুন সূর্যরশ্মির উত্তর দিকে গমনের শেষ সীমা বলে এই দিনকে উত্তর অয়নান্ত দিবসও বলে। মাসের শেষ দিন যেমন আমরা সংক্রান্তি বলি তেমনি ২১ জুন সূর্যরশ্মি কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে এবং উত্তরায়নের (উত্তর দিকে গমনের)শেষ সীমা বলে এই দিনটি কর্কট সংক্রান্তি নামে পরিচিত। মকর সংক্রান্তি আমাদের কাছে ভীষনভাবে পরিচিত একটি দিন, কিন্তু কর্কট সংক্রান্তির পরিচিতি তেমন নেই। আমরা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বাস করি উত্তর গোলার্ধে,আমাদের জীবন জীবিকার নির্ধারণে এই রেখার অবদান আছে ,তাই এই রেখাটি ও এই দিনটি সম্পর্কেও জানতে হবে আমাদের। ভারতের মধ্যে রেখাটির বিস্তৃতি ২৬৭৮ কিলোমিটার,এটি ভারতের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থান করে ভারতবর্ষকে দুটি তাপমন্ডলে বিভক্ত করেছে। উত্তর অংশটি উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল ও দক্ষিণ অংশটি উষ্ণমণ্ডলের অন্তর্গত। এইসময় সূর্যরস্মি উত্তর গোলার্ধে লম্বভাবে পড়ে বলে এখানে গ্রীষ্মকাল ও প্রচণ্ড তাপ প্রবাহ চলতে থাকে ২১ জুনের দেড় মাস আগে থেকেই। উষ্ণতার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে বায়ুচাপ নির্ধারিত হয়। লম্ব রশ্মি ও প্রচণ্ড উত্তাপের দরুণ বায়ু উর্ধমুখী হয় ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। ওই সময় আবার দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে বলে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও উচ্চচাপ বিরাজ করে।। শূন্যস্থান পুরনের জন্য উচ্চচাপের বায়ু দক্ষিণের সমুদ্র অতিক্রম করে আসার সময় জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে ও ভারতীয় উপমহাদেশ সহ কয়েকটি দেশে বর্ষাকালের সূচনা হয়। কৃষিপ্রধান এই দেশগুলিকে শস্যশ্যামলা করে তোলে বারিধারা। বর্ষারানীর আগমনে প্রচণ্ড দাবদাহের শেষে শীতল হয় ধরা। প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত হয়ে ওঠে সবুজ গ্রহ। তাই কর্কটিয় এই রেখাটির গুরুত্ব অপরিসীম।


পৃথিবীর ১৭ টি দেশের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে  কর্কটক্রান্তি রেখা। আমাদের ভারতবর্ষের ৮ টি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে এই রেখা। ভারতবর্ষের মাঝামাঝি গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের মধ্য দিয়ে এই রেখার বিস্তার ঘটেছে।

ছবিটিতে আমি দাঁড়িয়ে আছি ২৩.৩০' ডিগ্রি উত্তর কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে, মধ্যপ্রদেশের ভূপাল বিদিশা রাজ্য সড়কের ওপর, সাঁচি যাওয়ার রাস্তায়... ভূপাল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সাজাপুরের কাছে চোলা তে।এখানে বড় রাস্তাটির দুদিকে দুটি পয়েন্ট করা আছে। রাস্তাটির ওপর দিয়ে কল্পিত হয়েছে এই রেখা। ভূগোলের ছাত্রী ও শিক্ষিকা হিসেবে এই রেখার ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় এক অপরিসীম আনন্দ ও  রোমাঞ্চ অনুভব করেছি যা মনে রাখব আজীবন।



No comments