Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ইতিহাস ফিসফিস কথা কয়. ‌স্বপন সেন ‌

ইতিহাস ফিসফিস কথা কয়. ‌স্বপন সেন ‌
সেদিন ছিল ২২শে এপ্রিল ১৯৩০, বিকেল পাঁচটা। পশ্চিম আকাশে বিদায়ী সূর্যের অস্তরাগ। জালালাবাদ পাহাড়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিশ্রাম করছেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির প্রায় সত্তর জন যুবা। সর্বাধিনায়…

 




ইতিহাস ফিসফিস কথা কয়. ‌স্বপন সেন ‌


সেদিন ছিল ২২শে এপ্রিল ১৯৩০, বিকেল পাঁচটা। পশ্চিম আকাশে বিদায়ী সূর্যের অস্তরাগ। জালালাবাদ পাহাড়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিশ্রাম করছেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির প্রায় সত্তর জন যুবা। সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী আর লোকনাথ বলের সাথে আলোচনায় মগ্ন পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। অনন্ত সিং আর গণেশ ঘোষ সেই যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো, আর তাদের কোন খবর নেই। নীচে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একেবেকে চলে গেছে রেললাইন। যেতে যেতে একটা ট্রেন হঠাৎ ওখানে দাঁড়িয়ে গেলো। ওটা তো কোন স্টেশন নয়, তবে ? একি! ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামছে অগুন্তি বৃটিশ সেনা । হাতে ধরা অস্ত্র নিয়ে তারা যে এগিয়ে আসছে এদিকেই !‌


ঝটিতি উঠে দাঁড়ালেন সূর্য সেন। গলা চড়িয়ে বললেন বন্ধুগন, সামরিক শক্তির সাথে আজ স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী শক্তির লড়াই। দেখা যাক কে জেতে ! আজকের এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবে লোকনাথ বল । সবাই পজিশন নাও।

ইস্টার্ন রাইফেলস এর দুই কোম্পানি সেনা ততক্ষনে বন্দুক উঁচিয়ে পৌঁছে গেছে সামনের খোলা ধানক্ষেতে। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জেনারেল বলের হুঙ্কার শোনা গেল.....হলট্।

আর তারপরেই আদেশ দিলেন......ফায়ার ! একসাথে গর্জে উঠলো সবকটা রাইফেল। পড়িমড়ি করে পালাতে লাগলো ইংরেজ সেনা। আনন্দে ফেটে পড়লো যুব বিদ্রোহের সৈনিকরা।


বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা অবশ্য তাদের আনন্দ। দক্ষিণ পূর্ব কোণের একটা উঁচু টিলা থেকে ভেসে এলো ভাইকার মেশিনগানের শব্দ। বৃটিশ সেনা উচ্চতার সুবিধা নিয়ে টানা গুলিবর্ষণ করতে লাগলো বিপ্লবী দের ওপর। তাতে অবশ্য ঘাবড়ে গেলোনা মৃত্যু পাগল যুবারা কিন্তু সমস্যা এলো অন্যদিক থেকে। টানা গুলিবর্ষণের ফলে তাদের মাস্কেট অসম্ভব গরম তো হচ্ছিলোই সাথে কার্তুজ গুলোও ঠিকমতো চেম্বারে ঢোকানো যাচ্ছিলো না। তা সত্বেও জেনারেল বল হুকুম দিলেন যে করে হোক মেশিনগান টাকে থামাতে হবে !‌


এদিকে একনাগাড়ে গুলি চলছে তাদের লক্ষ্য করে,লায়িং পজিশন থেকে মাথা উঁচু করাই মুস্কিল। তারমধ্যে এক দুরন্ত কিশোর মাঝে মাঝেই লাফ দিয়ে উঠে গুলি চালাচ্ছে মেশিনগান লক্ষ্য করে। শেষপর্যন্ত পারলো না তাঁর অনিবার্য পরিণতি কে ফাঁকি দিতে। পাহাড় কাঁপিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো সে, ‘সোনা দা আমি চললাম। তোমরা কিন্তু থেমোনা।' একটা গুলি এসে বিঁধেছে ঠিক তার পাঁজরের নিচে ।

পাহাড়ের বুকে ঢলে পড়লো জালালাবাদ যুদ্ধের প্রথম এবং কনিষ্ঠতম শহীদ, হরিগোপাল বল।‌‌ পনেরো বছর বয়স হতে তখনো কিছুদিন বাকি।


হরিগোপাল বললে অবশ্য অনেকেই চিনতে পারবেন না। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ক্লাস নাইনের এই ছেলেটি ছিল লোকনাথ বলের ছোটভাই। ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের প্রতিরোধ বাঘের মতো ছিন্ন করে গোল করতো বলে মাস্টার মশাইরা আদর করে বলতেন টাইগার। বন্ধুদের মুখে সেটাই হয়ে গেল #টেগরা, আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই নামেই অমর হয়ে রইলেন তিনি।‌


গুলি বিদ্ধ টেগরা কে বুকে তুলে নিলেন দাদা লোকনাথ বল । একটা ঝোপের পিছনে নিয়ে গিয়ে নাকের নিচে হাত দিয়ে দেখলেন সব শেষ । আর কোন দিন সোনা দা বলে ডাকবে না তাঁর আদরের ছোট ভাইটি । তার কপালে একটা চুম্বন দিয়ে থামালেন উদগত চোখের জল। তারপর বলেছিলেন, "কে সোনা দা ? যুদ্ধক্ষেত্রে দাদা বলে কেউ নেই। আমরা সৈনিক, আমাদের একটাই কর্তব্য.....হয় মারো নয় মরো ! "

এবার রুষ্ট বাঘের মতো গর্জে উঠে বললেন, ফায়ার আনটিল দি এনিমি মেশিনগান ইজ কমপ্লিটলি সাইলেন্সড । ‌


সত্যিই সেদিন মেশিনগান কে হার মানতে হয়েছিল সামান্য মাস্কেট রাইফেলের তেজের কাছে। তবে তারজন্য মূল্য দিতে হয়েছিল বারোটি তাজা প্রাণ।

এবার শহীদদের সম্মান জানানোর পালা। সবকটি দেহকে সারিবদ্ধভাবে রেখে জেনারেল বল হাঁক দিলেন, Comrades in close column of groups, in single rank. Fall in ! শ্রেণীবদ্ধ ভাবে দাঁড়ালেন তারা রাইফেলের নল নীচের দিক করে। অভিনন্দন জানালেন গোটা পাহাড় কাঁপিয়ে। বিদায় বন্ধু, তোমাদের কথা আমরা ভুলবো না !


শুরু হলো এবার এক অনিশ্চিত পথে যাত্রা..... বাদুড়ের ডানায় ততক্ষনে অন্ধকার নেমেছে জালালাবাদ পাহাড়ের বুকে। ‌


No comments