Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

টাকার কদর- অশোক কুমার আচার্য্য

টাকার কদর অশোক কুমার আচার্য্য
গতকাল আমি আর শশধর দুজনেই ইভিনিং শিফটে চাকরি করে মেসে ফিরেছি।ওর হাতে একখানি কাগজের ঠোঙা। বললাম কি এনেছিস।--- বিলেতি বয়ের কুল।--- দুপুরেই তো ডিউটি যাওয়ার আগে খেয়ে গেলাম।আবার এনেছিস।এদিকে পেটের রোগ আর এস…

 



টাকার কদর অশোক কুমার আচার্য্য


গতকাল আমি আর শশধর দুজনেই ইভিনিং শিফটে চাকরি করে মেসে ফিরেছি।ওর হাতে একখানি কাগজের ঠোঙা। বললাম কি এনেছিস।

--- বিলেতি বয়ের কুল।

--- দুপুরেই তো ডিউটি যাওয়ার আগে খেয়ে গেলাম।আবার এনেছিস।এদিকে পেটের রোগ আর এসব কুলটুল খেলে পেট কামড়ায়।অ্যাসিডিটি হলে নানান সমস্যা। বয়স হচ্ছে এটা খেয়াল রাখতে হবে। 

--- এখন বারোমাস পাওয়া যায় বলে কত সুবিধা। আগে সরস্বতী পূজোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো।পাড়ায় কাদের গাছের বয়ের কুল মিষ্টি আর কাদের গাছের  টক সব নখদর্পনে। আকশি দিয়ে কুল পাড়ার সময় ছেকনি জাল নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে থাকতো গাছের তলায়। কুল গুলো মাটিতে কোন নোংরা জায়গায় যাতে না পড়ে। এই কুল আম খেজুর নারকেল তালগাছ গুলো বেশির ভাগই পুকুর পাড়ে হবে আর এমন ভাবে বেঁকে থাকবে গাছ থেকে ফলগুলো পাড়তে গেলেই নিশ্চিত পুকুরের জলে পড়বে।

এই বয়ের কুল খেজুর কুল পাড়তে গিয়ে কত গা-হাত পা ছোঁড়েছে।ছোটো ছোট কাঁটাগুলো পায়ে ঢুকে গিয়ে বিপদ ডেকে আনতো। খেজুর গাছের কাঁটাতো আরও মারাত্মক। নুরুন দিয়ে কেটে সূচ কে লম্ফের আগুনে পুড়িয়ে কাঁটা বের করা। গ্রামে তখন এতো ডিসপেনসারি বা ডাক্তার ছিল না।বুড়ো বুড়ি দাদু ঠাকুমা কাকিমা বৌদি সম্পর্কের ভালোবাসারজনেরা নিজের বুদ্ধি দিয়ে কাজগুলো সুনিপুণ ভাবে করতো।প্রচন্ড যন্ত্রণা হতো কিন্তু তাদের ভালোবাসা আর আদরে সে সব কষ্ট কিছু সময় পরে উধাও হয়ে যেত।

     হাত মুখ ধুয়ে দু'জনে একসঙ্গে রাতের খাবার খেলাম।অনেকগুলো পদ রান্না হয়েছে কিন্তু কোনটাই সুস্বাদু হয়নি।কোনরকমে উদরপূর্তি করে বিছানায় এসে বসেছি।এবার নিজের নিজের প্রতিদিনের ওষুধ খাওয়া তারপর কিছুটা সময় গল্প আর রেডিওতে গান শুনতে শুনতে নিদ্রাদেবীর কোলে আশ্রয় নেওয়া।ইদানীং আবার আর একটা রোগ আমাদের ধরেছে।এখন কম পয়সায় ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় বলে ফোনে কারেন্ট সংবাদগুলোর আপডেট দেখে নেওয়া যায়।সেজন্য সকালে আর খবরের কাগজের প্রতি কোন আকর্ষণ থাকে না।

     সবে মাত্র ওষুধের কৌটোটা খুলে একে একে ওষুধগুলো বের করা শুরু করেছি। শশধর বয়ের কুলগুলো ধুয়ে এনে আমার হাতে কয়েকটা দিল।

---- আগে কুলগুলো খেয়ে নে।তারপর ওষুধ খাবি।

---- সকালে খাবো রেখে দে।রাত্রে হজম হবেনা। আবার ওষুধের সংখ্যা বেড়ে যাবে। 

---- সকাল পর্যন্ত বাঁচবো তার কোন নিশ্চয়তা আছে

যা জুটছে খেয়ে নে।ওর কথামতো একটা কুল নিয়ে কামড় দিয়ে হাতের অবশিষ্টাংসটা দেখেই আমার পেট গুলোতে লাগলো।থুঃথুঃ করে মুখ থেকে কুলের কাটা অংশটা ফেলে বেসিনে মুখ ধুয়ে এসে শশধর কে দেখালাম কুলের ভেতরে সাদা সাদা পোকা কিলবিল করছে।ওর তখন অর্দ্ধেকটা কুল সাবাড় হয়ে গেছে। 

--- তুই কি ভাবলি আমি দেখিনি। তুই তো পয়সা দিয়ে কিনিসনি সেই জন্য ফেলে দিলি আর আমি পয়সা দিয়ে কিনেছি সেই জন্য পোকা অংশটা বাদ দিয়ে কেটে কেটে খাচ্ছি। আরে দুএকটা যদি পেটে যায় ক্ষতি কি?

No comments