Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

☞পেঁয়াজ-রসুন কেন নয়...???
(পেঁয়াজ-রসুন আহার সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ!)
অনেকেই প্রশ্ন করে- কেন আপনারা (নিরামিষ/প্রসাদভোজীরা) পেঁয়াজ-রসুন খান না? পেঁয়াজ-রসুনও তো উদ্ভিদ। পেঁয়াজ-রসুনের কী দোষ? 
ঠিক আছে মাছ মাংস খ…

 



☞পেঁয়াজ-রসুন কেন নয়...???


(পেঁয়াজ-রসুন আহার সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ!)


অনেকেই প্রশ্ন করে- কেন আপনারা (নিরামিষ/প্রসাদভোজীরা) পেঁয়াজ-রসুন খান না? পেঁয়াজ-রসুনও তো উদ্ভিদ। পেঁয়াজ-রসুনের কী দোষ? 


ঠিক আছে মাছ মাংস খেলে নৃশংসতা হয়, একটা পেঁয়াজ বা রসুনের সাথে আলু বা অন্য কোনো সবজি কাটার ক্ষেত্রে তো নৃশংসতার কিছু নেই; তবুও আপনারা কেন তা আহার করেন না। এরকম অনেকেই এ বিষয় নিয়ে সংশয় পোষণ করে। এ সংশয় নিরসনের জন্য কিছু শাস্ত্রীয় ও বিজ্ঞানভিত্তিক দিক নিম্নে তুলে ধরা হলো।


★☞যৌক্তিক দিক:


পেঁয়াজ-রসুন তো সবজি, তাছাড়া মাছ-মাংস, পেঁয়াজ-রসুন যে, রজো-তমোগুণ সম্পন্ন তা তো গীতায় উল্লেখ নেই, তাহলে আপনারা এগুলো খান না কেন?


চুতরা-ধুতুরা পাতাও তো পাতা, তাহলে তা খান না কেন? শেয়াল কুকুরের দুধও তো দুধ, খান না কেন? অ্যালকোহল আঙুর বা অন্য কোনো খাদ্য থেকে তৈরি, সকলে তা খায় না কেন? 


মূলকথা, এমন অনেক দ্রব্য আছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনুপোযোগী বিধায় আমরা সেগুলো গ্রহণ করি না। যেমন, হেমলক বিষ উদ্ভিজ হলেও তা আহার্য হিসেবে বর্জন করা হয়। একইভাবে, পেঁয়াজ-রসুন শরীরের জন্য অনুপোযোগী, তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি তা বর্জন করেন। 


পেঁয়াজ-রসুন যে, রজো-তমোগুণ সম্পন্ন তা গীতায় উল্লেখ থাকার প্রয়োজন নেই:


ভগবদ্গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন-

কটুম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্মরুক্ষবিদাহিনঃ। 

আহারা রাজসস্যেষ্টা দুঃখশোকাময়প্ৰদাঃ ॥

যেসমস্ত আহার অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ণ, অতি শুষ্ক, অতি প্রদাহকর এবং দুঃখ শোক ও রোগপ্রদ, সেগুলো রাজসিক ব্যক্তিদের প্রিয়।"


পেঁয়াজ-রসুন এ ধরনের খাদ্যের আওতাভুক্ত-অতি তীক্ষ্ণ বা ঝাঁঝালো, যা আহারের ফলে আমাদের ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। এখানে আলাদা করে খাবারের নাম উল্লেখ না করে খাবারের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে। তাই পরোক্ষভাবে তা পেঁয়াজ-রসুনের মতো রাজসিক খাবারকেই নির্দেশ করছে। 


ডাক্তার রোগীকে বলতে পারেন যে, টক এবং ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না, খেলে ঔষধে ক্রিয়া করবে না। এখন, কোন কোন খাবার টক এবং ঝাল, ডাক্তারকে তার সুবৃৎ তালিকা বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। 


একইভাবে, কৃষ্ণকে রজো-তমোগুণ সম্পন্ন পৃথিবীর সমস্ত খাবারের তালিকা গীতায় বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। বাস্তবিক যারা মাছ-মাংস, পেঁয়াজ-রসুন খাচ্ছে, তাদের কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, পেঁয়াজ-রসুন রজো-তমোগুণ সম্পন্ন ।


হেমলক নামক বিষ খেয়ে সক্রেটিসের মৃত্যু হয়েছিল, সুতরাং বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিশ্চয়ই হেমলক খেয়ে দেখবে না যে, তা খেলে তারও মৃত্যু হয় কি না। হেমলক খেলে যেহেতু মৃত্যু হয়, সুতরাং তা বিষ, একইভাবে পেঁয়াজ-রসুন খেলে কাম-ক্রোধ (কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুণ সমুদ্ভব গীতা ৩/৩৭) বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ তা উত্তেজক । সুতরাং তা রাজষিক ও তামসিক।


★☞চেতনা:


পেঁয়াজ-রসুন আহার আমাদের চেতনার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই জগতের প্রতিটি বস্তুই প্রকৃতির তিন গুণের কোনো না কোনো গুণের অধীন। পেঁয়াজ-রসুনের মধ্যে রজো ও তমোগুণের আধিক্য রয়েছে। তা আমাদের চিত্ত চঞ্চল করে ও উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় (৩/৩৭) বলা হয়েছে যে, রজোগুণ থেকে সমুদ্ভূত কামই মানুষকে পাপে প্রবৃত্ত করে। রজোগুণ থেকে লোভ; তমোগুণ থেকে অজ্ঞান, প্রমাদ, মোহ উৎপন্ন হয় (গীতা-১৪/১৭)। 


তাই যারা রজো-তমোগুণের প্রভাবে পাপে প্রবৃত্ত না হয়ে বরং পরমার্থ লাভের জন্য ইন্দ্রিয় সংযমে আগ্রহী, তাদের পেঁয়াজ-রসুন অবশ্যই পরিত্যজ্য।


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় (১৭/৭) বলা হয়েছে যে, সকল মানুষের আহার তিন প্রকার প্রীতিকর হয়ে থাকে। সকলের শ্রদ্ধা নিজ-নিজ অন্তঃকরণের অনুরূপ। যে যেরকম গুণের প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত, সে সেই রকম বিষয়ের প্রতি শ্রদ্ধাবান (গীতা ১৭/৩)। 


সুতরাং রজো-তমোগুণসম্পন্ন ব্যক্তির পেঁয়াজ-রসুন খাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। একইভাবে, রজো-তমো গুণ থেকে মুক্ত হয়ে সত্ত্বগুণে উন্নীত হতে আগ্রহী ব্যক্তির পেঁয়াজ-রসুন খাওয়ার প্রতি অশ্রদ্ধাযুক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। সেকারণে যারা সত্ত্বগুণ লাভের প্রয়াসী তাঁরা পেঁয়াজ-রসুন আহার বর্জন করে।


★☞ইতিহাস


পেঁয়াজ-রসুনের উৎপত্তি সম্বন্ধে শাস্ত্রে বেশ কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর মধ্যে একটি নিচে তুলে ধরা হলো: 


আয়ুর্বেদ অনুসারে যখন ভগবান বিষ্ণু মোহিনী অবতাররূপে দেবতাদের অমৃত প্রদান করার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন রাহু ও কেতু নামে দুই অসুর লুকিয়ে দেবতাদের সারিতে গিয়ে বসেছিল। কোনোভাবে মোহিনীরূপী ভগবান রাহু-কেতুর মুখেই অমৃত তুলে দিলেন। 


যখন চন্দ্র ও সূর্যদেব এসে খবর দিলেন যে রাহু ও কেতু দুজন অমৃত আহার করে ফেলেছে। তৎক্ষণাৎ ভগবান দুই অসুরের মস্তক ছেদন করেন। ততক্ষণেও অমৃত তাদের গলা দিয়ে তাদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করেনি। অমৃত তখনও তাদের মুখে বর্তমান ছিল।


তাই অমৃত তাদের গলা থেকে ভূমিতে পতিত হয়। ভূমিতে পতিত অমৃতবিন্দু থেকে পেঁয়াজ-রসুনের উৎপত্তি হয়। তাই অসুরদের উচ্ছিষ্ট হওয়ার কারণে সন্তগণ তা আহার করেন না, কেননা তাতে অসুরের গুণাবলী মিশ্রিত আছে। 


আবার, যেহেতু অমৃতবিন্দু থেকে এই দুটি উদ্ভিদের জন্ম, তাই এর মধ্যে কিছু ভেষজ গুণাবলীও বর্তমান আছে, যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে। তবে তা কেবল রোগ নিরাময়ের জন্য, ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য নয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্রীদের মতে, যদি কেউ পেঁয়াজ-রসুন আহার করে, তবে তাদের দেহ অসুরদের মতো শক্তিশালী হলেও মস্তিষ্ক হবে অসুরদের মতো অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, অর্থাৎ তাদের বুদ্ধি কলুষিত হবে।


★☞মন নিয়ন্ত্রণ:


প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই দেখা যায় পেঁয়াজের কামোদ্দীপক বৈশিষ্ট্যের জন্য এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রিস, রোম ও আরবীয় খাদ্য তালিকায় কাম উদ্দীপনের জন্য পেঁয়াজ ব্যবহার করতো। 


গ্রীক নাগরিকদের কাছে রসুনের গন্ধ আভিজাত্যের বিরোধী। তাই রসুনের গন্ধযুক্ত হলে কাউকে তাঁদের মন্দিরগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। বিভিন্ন বৈদিক শাস্ত্রে কামোদ্দীপক খাদ্য হিসেবে পেঁয়াজের কথা উল্লেখ আছে। প্রকৃতিগতভাবে রসুনও কামবর্ধক। 


আমেরিকার এক যৌনবিশেষজ্ঞ ডাক্তার ড. রবিনসন উল্লেখ করেন, “যাদের যৌন ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে তাদের জন্য রসুন অত্যন্ত কার্যকরী।” বিশেষ করে যারা বয়োবৃদ্ধ হতে চলেছেন এবং যৌন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে তাদের জন্য। 


কিন্তু যারা আধ্যাত্মিক মার্গে উন্নতি সাধনে আগ্রহী তাদের জন্য অবশ্যই পেঁয়াজ-রসুন পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ, তা ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে এক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। গর্ভবতী মায়েদের পেঁয়াজ ও রসুন খেতে নিষেধ করা হয়, কেননা এর ঝাঁঝ কোমলমতি শিশুর জন্য অসহনীয় হয়ে পড়ে।


তাওইস্ট (তাও ধর্মানুসারে) হাজার হাজার বছর পূর্বে অনুভব করেছিল যে, এই উত্তেজকপূর্ণ উপদানগুলো (পেঁয়াজ বা রসুনজাতীয়) মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাঁরা বর্ণনা করেছেন যে, এ জাতীয় সবজি আহার করার কারণে আমাদের দেহের পাঁচ প্রকার ক্ষতিসাধিত হয়। 


যেমন লিভার, খিটখিটে রোগ, ফুসফুস, কিডনী এবং হৃদরোগ। Tsang-Tsze বলেছিলেন যে, এই প্রকার ঝাঁঝালো বা উগ্র খাবারে পাঁচ প্রকার জীবানু রয়েছে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্ন, অবস্বাদ বৃদ্ধি করে, দোদুল্যমানতা বৃদ্ধি এবং উত্তেজনা বাড়ায়।


এভাবে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে যে, স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস এবং দেহের দুর্গন্ধ, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা বৃদ্ধির জন্য ঝাল বা উত্তেজকজাতীয় খাবারই দায়ী। এর দ্বারা মানুষের শারীরিক, আবেগীয়, মানসিক এবং পারমার্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 


বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এলিয়াম পরিবারভুক্ত জীব প্রজাতি আহার করে না। কারণ তা সাধনার পথে প্রতিবন্ধক।


শেক্সপিয়রের ‘মিডসামার নাইট ড্রিম’-এ বোটম অন্য একটি চরিত্রকে পেঁয়াজ-রসুন না খাওয়ার জন্য বলছে, কারণ আমরা মিষ্ট শ্বাস নিতে চাই, কটু নয়। যখন ইংরেজি সাহিত্যিক পি. বি. শেলী তার বন্ধু লর্ড বাইরনের সাথে ইতালি ভ্রমণে গিয়েছিলেন, তিনি তাঁর বন্ধুদের জনসমক্ষে রসুন খেতে দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। 


বৈজ্ঞানিক অভিমত


পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে। যখন আমরা পেঁয়াজ কাটি, তখন দুটি প্রতিক্রিয়া হয়। ১. এর থেকে নির্গত এনজাইমগুলো প্রচণ্ড গন্ধ ছড়ায় এবং এলিসিন নামক এক প্রকার মারাত্মক সালফার ত্যাগ করে যা চোখ জ্বালা করায়। নেক্সস ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, Garlic-a brain Poison! From "Garlic - Toxicshock!” (Feb-mar' 11 )




মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে-

লশুনং গৃঞ্জনঞ্চৈব পলাণ্ডুং কবকানি চ । 

অভক্ষ্যাণি দ্বিজাতীনামমেধ্য প্রভবানি চ ॥ 

(৫.৫) 

রসুন, গৃঞ্জন, পলাণ্ডু (পেঁয়াজ), বক অর্থাৎ ছত্রাক (ব্যাঙের ছাতা), এবং মলমূত্রাদিপরিপূর্ণ দূষিত স্থানে উৎপন্ন শাক প্রভৃতি দ্রব্য ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই বর্ণত্রয়ের পক্ষে অভক্ষ্য।

ছত্রাকং বিডবরাহঞ্চ লণ্ডনং গ্রাম্যকুক্কুটম্৷৷ 

পলাণ্ডুং গৃঞ্জনঞ্চৈব মত্যা জগ্ধা পতেদ্দ্বিজঃ ॥ 

(৫.১৯) 

ছত্রাক (ব্যাঙের ছাতা), গ্রাম্য শূকর, রসুন, গ্রাম্য কুক্কুট, পেঁয়াজ, গৃঞ্জন এগুলো জ্ঞানপূর্বক ভক্ষণ করলে দ্বিজাতি পতিত হন। 

গড়ুর পুরাণে (১.৯৬.৭২) বলা হয়েছে-

“পলাণ্ডুলশুনাদীনি জগ্ধা চান্দ্রায়ণপঞ্চরেৎ।”

- পেঁয়াজ ও রসুন ভোজন করলে চন্দ্রায়ণ করতে হয়।

কূর্ম পুরাণে বলা হয়েছে- (হ.ভ.বি-৮-১৫৮)- পলাণ্ডুং লশুনং শুক্লং নিৰ্যাসঞ্চের বর্জ্জয়েৎ । 

অর্থাৎ পেঁয়াজ ও রসুন বর্জনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও পদ্মপুরাণ, স্কন্ধপুরাণসহ বিভিন্ন শাস্ত্রে পেঁয়াজ-রসুন বর্জনের কথা বলা হয়েছে।

তাই শাস্ত্রীয় দিক বা বৈজ্ঞানিক দিক সকল দিক থেকেই পেঁয়াজ রসুন বর্জনের কথা বলা হয়েছে। তবুও পেঁয়াজ-রসুনের কিছু ওষধি গুণও আছে। তাই কেবল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার ব্যতীত পেঁয়াজ-রসুন আহার বর্জনীয়।


                                                ....হরেকৃষ্ণ....

No comments