Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ব্রেকিং!!স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দর থেকে ৩০০জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিল এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গো প্লেন

স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দর থেকে  ৩০০জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিল এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গো প্লেনস্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দর থেকে  ৩০০জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিল এয়ার ইন্ডিয়ার …

 


স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দর থেকে  ৩০০জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিল এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গো প্লেন

স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দর থেকে  ৩০০জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিল এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গো প্লেন


 দেবজিৎ বর্মন,স্লোভাকিয়াঃ শুক্রবার কাঁটায় কাঁটায় বিকেল ৩টে। স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দর থেকে  ৩০০জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিল এয়ার ইন্ডিয়ার কার্গো প্লেন। ভারতীয় সময় তখন সন্ধে ৭টা। ভারতীয় পড়ুয়ারা তখন দেশের নামে জয়োধ্বনি দিচ্ছেন। কারও কারও চোখে যুদ্ধ জয়ের আনন্দাশ্রু। মহিষাদলের তেরপেখিয়ার দীপা বর্মনের কাছে ফোন এল, মা প্লেনে উঠেছি। এবার প্লেন ছাড়ছে। মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। তুমি চিন্তা কোরো না। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ুয়া দেবজিতের মা দীপা বর্মন ইউক্রেনে যুদ্ধ লাগার পর থেকে ঘুমোতে পারেননি ছেলের চিন্তায়। নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কথা বলতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠছেন। ছেলে প্লেনে ওঠার খবর পেয়ে স্বস্তি পেলেন। তিনি জানান, দুপুর নাগাদ ছেলে ফোন করে জানায়, দূতাবাস প্লেনের ব্যবস্থা করেছে। স্লোভাকিয়ার সমস্ত ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে প্লেন এদিনই রওনা দেবে।

এদিন স্লোভাকিয়ার হুমেননে শহরের শিবির থেকে সমস্ত ভারতীয় পড়ুয়াকে গাড়িতে করে পাঁচ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্লোভাকিয়ার আর একপ্রান্তে ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দরে। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তারা রওনা দেয়। দেড়টা নাগাদ সেখানে পৌঁছনোর পর দুপুর ২টো নাগাদ সমস্ত পড়ুয়াকে প্লেনের টিকিট দেওয়া হয়। মহিষাদলের বিডিও যোগেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, স্লোভাকিয়া থেকে দিল্লি পৌঁছতে ৯ঘণ্টা সময় লাগবে। দিল্লিতে ভোরে পৌঁছনোর পর সেখান থেকে দুপুর নাগাদ দেবজিতের কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। দেবজিতকে বিমানবন্দর থেকে আনার জন্য বিডিও অফিস থেকে গাড়ি পাঠানো হবে। সেই গাড়িতে ওনার পরিবারের লোকজন থাকবে। এদিকে, হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের শিবিরে থাকা রাজ্যের পড়ুয়ারা এদিন দূতাবাসে গিয়ে দেখা করে। এক পড়ুয়া সব্যসাচী মৌলিক জানান, তাঁরা দূতাবাসে নাম লিখিয়েছেন, কিন্তু এখনও প্লেন কবে মিলবে তার নিশ্চয়তা নেই। হাঙ্গেরিতে ভারতীয় পড়ুয়াদের খুব ভিড় থাকায় সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিনই দূতাবাসের সামনে ভিড় বাড়ছে।

 স্লোভাকিয়ার আগ্নেয়গিরির শহর হুমেননেতে তখন কাঁটায় কাঁটায় দুপুর ১২টা। আস্ত একটি শরণার্থী শিবির হয়ে উঠেছে আটতলা আলিবাবা হোটেল। খিদে তেষ্টা  মেটাতে একটু ভাত ও রুটির জন্য চলছে পড়ুয়াদের কাড়কাড়ি। ভারতীয় দূতাবাসের সৌজন্যে দেশের পড়ুয়াদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয় শিবির। যুদ্ধ আক্রান্ত ইউক্রেন থেকে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের তিনশো জনের বেশি পড়ুয়া কোনও রকমে মাথা গুঁজেছেন শিবিরে। প্রতিদিনই সেখানে ভিড় বাড়ছে। তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও আতঙ্কের ছাপ। ক্ষুধার্ত পড়ুয়াদের কাছে হাত জড়ো শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করছেন আর এক বাঙালি ডাক্তারি পড়ুয়া দেবজিৎ বর্মন। লিডারশিপ দিয়ে দুই পাঞ্জাবী বন্ধুকে নিয়ে মহিষাদলের দেবজিৎ নেমে পড়েছেন খাবার পরিবেশনে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এক সপ্তাহ পর সবাই লাঞ্চ করছে তো, তাই এতো হুড়োহুড়ি, জানালেন দেবজিৎ।

একই ছবি ধরা পড়েছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ভারতীয় পড়ুয়াদের একটি আশ্রয় শিবিরে। ভারতীয় সময় তখন বুধবার রাত প্রায় ১টা। চার ঘণ্টা সময়ের ফারাক। রাত ৯টা নাগাদ সবাই ডিনারের জন্য জন্য লাইন দিয়েছে, জানালেন সোনারপুরের সব্যসাচী মৌলিক। গত পাঁচ দিন প্রায় না খেয়েই কাটিয়েছেন সব্যসাচীর ছয় বন্ধু। ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাঁরা পৌঁচেছেন বুদাপেস্টে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন হলদিয়ার দীপাঞ্জলি বেরা, ডেবরার অনিন্দিতা মাইতি, শুভদীপ হ্যান্ডেল, সোনারপুরের সম্রাট মৌলিক, সৌম্যদীপ সিনহা ও ছত্তিশগড়ের এক বন্ধু। ডাক্তারির চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া সব্যসাচী কিয়েভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। তিনদিন বাঙ্কারে কাটানোর পর বন্ধুরা মিলে কিয়েভ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিয়েভ থেকে রোমানিয়ার লিভিভে যাওয়ার ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইউক্রেনীয় ছাড়া অন্য কাউকে সেই ট্রেনে উঠতে দেওয়া হয়নি। 

সব্যসাচী হোয়াটসঅ্যাপ কলে যখন কথা বলছিলেন তখনও ভয়ে তাঁর গলা কাঁপছিল। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। বললেন, পর পর ট্রেন না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলাম। হঠাৎ দূরে দেখতে পাই ভিনিৎসিয়াগামী একটি ট্রেন ছাড়ছে। সবাই ছুটে গিয়ে উঠে পড়ি ফাঁকা ট্রেনে। ভিনিৎসিয়া থেকে বাসে চেপে বুধবার ভোরে পৌঁছই হাঙ্গেরি সীমান্তে। বেশিরভাগ ভারতীয় হাঙ্গেরি ও রোমানিয়া দিয়ে যাওয়ার কারণে প্রচণ্ড ভিড়। পরে ট্রেনে ৬ঘণ্টার জার্নি করে বুদাপেস্টে পৌঁছই বিকেল চারটে নাগাদ। ভারতীয় দূতাবাস থেকে সব্যসাচীদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকার ব্যবস্থা করেছে। সেখানে মেঝেতে শোয়ার জন্য কম্বল দিয়েছে। কিন্তু ঠাণ্ডায় ঘুম আসছে না। তবে কিয়েভের থেকে ঠাণ্ডা অনেকটা কম। আপাতত পাঁউরুটি ও ডিম সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটছে। ভিড় থাকায় কবে প্লেন পাবেন তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই। একই কথা জানান মহিষাদলের দেবজিৎ বর্মন। তিনি বলেন, দুপুরে মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি আর অনেকগুলো ছবি পাঠিয়েছি। তাতে মা খানিকটা আশ্বস্ত হয়েছেন।

ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে এলেও এখনও বোমার গগনবিদারি শব্দ কানে বাজছে সব্যসাচী, দেবজিতের। আশ্রয় শিবিরে তাই ঘুম আসছে না। এদিকে বাড়িতে আশ্রয় শিবিরের ছবি পাঠিয়েছেন তাঁরা অভিভাবকদের উদ্বেগ কাটাতে। মহিষাদলের দেবজিতের মা এদিন ছেলের ফেরার বিষয়ে জানার জন্য বিডিও যোগেশচন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, উদ্বেগ সামান্য কাটলেও ছেলে যাতক্ষণ না বাড়ি ফিরছে ততক্ষণ স্বস্তি নেই। এদিন ফোনে কিয়েভ থেকে বাঙালি চিকিৎসক পৃথ্বিরাজ ঘোষ বলেন, প্রায় আড়াই হাজার মতো ডাক্তারি পড়ুয়া খারকিভে আটকে রয়েছে। তাদের অনেকের কাছে খাবার নেই, জল নেই। ফোনে সকাল থেকে অনেকেই যোগাযোগ করলেও দুপুর গড়াতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।


No comments