মা মেলাইচণ্ডী, হাওড়ার আমতার অধিষ্ঠাত্রী মাতৃকা- তমাল দাশগুপ্ত
স্থানটি শক্তিপীঠ হিসেবে খ্যাত, এখানে সতীর মালাইচাকি প্রোথিত আছে বলা হয়, যদিও তন্ত্রসার অনুযায়ী যে একান্ন পীঠের তালিকা পাওয়া যায় সেখানে এর উল্লেখ নেই। কিন্তু কয়েকটি কার…
মা মেলাইচণ্ডী, হাওড়ার আমতার অধিষ্ঠাত্রী মাতৃকা- তমাল দাশগুপ্ত
স্থানটি শক্তিপীঠ হিসেবে খ্যাত, এখানে সতীর মালাইচাকি প্রোথিত আছে বলা হয়, যদিও তন্ত্রসার অনুযায়ী যে একান্ন পীঠের তালিকা পাওয়া যায় সেখানে এর উল্লেখ নেই। কিন্তু কয়েকটি কারণে আমরা এই মায়ের প্রাচীনত্বের ইঙ্গিত পাই।
আমতা স্থাননামটির উৎস 'আম্রপত্র' থেকে, সুকুমার সেন বলেন। এখানে শশাঙ্কের সময়ে সম্রাটের আরোগ্যকামনা যজ্ঞে আনীত শাকদ্বীপীদের একজন বসতি করেছিলেন।
স্থানটি হাওড়ার প্রাচীন ইতিহাসে উল্লেখের দাবি রাখে। দামোদরের পূর্ব তীরে এই আমতা অঞ্চলে আগে বিরাট বন্দর ছিল, এবং নানা পণ্য যাতায়াতের একটি বড় কেন্দ্র ছিল। সেই পণ্যমেলা থেকে মা মেলাইচণ্ডীর নাম, এরকম মত আছে। বস্তুত এই বাণিজ্য সার্কিটে একদিকে আমতা অন্যদিকে বেতাই: এবং আমতায় মা মেলাইচণ্ডী ও বেতাইয়ে মা বেতাইচণ্ডী পূজিত ছিলেন প্রাচীনকাল থেকেই।
আবার মায়ের নামের শেষে -আই দেখে সুপ্রাচীন কালে আমাদের ভূমিতে প্ৰচলিত একটি প্রাচীন দ্রাবিড়ভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আগে বাংলা ভাষায় অন্তর্লীন আদিম দ্রাবিড় স্তর হিসেবে আই-অন্তনাম নিয়ে লিখেছি আমার পেজে।
কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের কাব্যে এই তল্লাটের স্থানেশ্বরী অধিষ্ঠাত্রী মাতৃকাদের মধ্যে "আমতার মেলাই" পূজিত হয়েছেন।
বর্তমান পীঠস্থানে মায়ের প্রস্তরমূর্তি স্থাপনার কিংবদন্তী জটাধর চক্রবর্তীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মা মেলাইচণ্ডীর অধিষ্ঠানমন্দির মেলাইবাড়ি বলে খ্যাত, বর্তমান মন্দিরটি কলকাতার হাটখোলা অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ধনী কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত স্বপ্নাদেশ পেয়ে নির্মাণ করেন বলে প্রসিদ্ধ।
আমতার অধিষ্ঠাত্রী মা মেলাইচণ্ডীর জয়জয়কার হোক। আমাদের এই ভূখণ্ড কেবলমাত্র মায়ের নামে শাসিত হয়, আমাদের এই জাতির ধ্রুব অস্তিত্ব কেবলমাত্র আমাদের আবহমানকালের মাতৃধর্মে সংজ্ঞায়িত হয়: আজকে চতুর্দিকে দাপাদাপি করে বেড়ানো বিজাতীয় বলয়ের দালাল ও শেকড়বিচ্ছিন্ন বিশ্বমানবদের আমরা মনে করিয়ে দেব। আমরা চিরকাল চণ্ডীচরণপরায়ণ ছিলাম, আছি, থাকব।
জয় জয় মা
(মায়ের চিত্রটি উইকিমিডিয়া থেকে)
No comments