Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পশ্চিমবঙ্গের পৌষসংক্রান্তি প্রাচীন লোকাচারসমূহ ও আউনি বাউনি চাউনি- কাবেরি দাস মহাপাত্র

পশ্চিমবঙ্গের পৌষসংক্রান্তি প্রাচীন লোকাচারসমূহ ও আউনি বাউনি চাউনি

কেন_পৌষসংক্রান্তি 🌾সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ও ভারতীয় সংস্কৃতির সমতুল্য রীতি মানা কিছু বিদেশেও পৌষসংক্রান্তি একটি বিশেষ দিন।শুধুমাত্র শস্যোৎসব কিম্বা দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস …

 




পশ্চিমবঙ্গের পৌষসংক্রান্তি প্রাচীন লোকাচারসমূহ ও আউনি বাউনি চাউনি



কেন_পৌষসংক্রান্তি 🌾

সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ও ভারতীয় সংস্কৃতির সমতুল্য রীতি মানা কিছু বিদেশেও পৌষসংক্রান্তি একটি বিশেষ দিন।শুধুমাত্র শস্যোৎসব কিম্বা দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস সমাপনে উত্তরায়ণ বা ভাগীরথির আগমন নয়।রাশিধিপতি গ্রহরাজ শনির সাথে পিতা সূর্যের সমস্ত মান-অভিমান ভুলে মিলিত হবারও দিন।মিথোলজিমতে একমাস দিবাকরদেব পুত্রের গৃহের আথিত্য গ্রহণ করেন এসময়;যার মধ্যে পিতা-পুত্রের স্নেহের আজন্ম বন্ধনের গূঢ় রূপকের আভাস পান হিন্দুরা।প্রতিটি সংক্রান্তিই "সঞ্চার" তথা "গমন"কে বোঝায়;"সং" অর্থ "রাস্তা" তথা "পথ" ও "ক্রান্তি" মানে "অতিক্রম করা"।হেমন্তের নূতন আমন ধান যা বাঙালি চিরকালীন প্রিয় খাদ্যের উৎস তাকে সম্মানদানের দিন।লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে সারা বছরের জন্য ধান তোলার দিন,যা সমৃদ্ধি তথা ঐশ্বর্যেরও প্রতীক।আপামর দেশে নামভেদ বা কিছুটা সংস্কৃতিগত মিল-অমিল থাকলেও এই মকরসংক্রান্তি উৎসব এইসকল বার্তার বাহক।গোলায় বা মরাইতে নতুন ধান ওঠার খুশিতে এ উৎসব সত্যিই ঐতিহ্যের প্রতীক।


পশ্চিমবঙ্গের_প্রাচীন_লোকাচার🌾

প্রধানত কৃষকশ্রেণীর উৎসব এটি হলেও দিন পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্তত সুস্বাদু খাদ্যসংস্কৃতি ধরে রাখতে বঙ্গবাসী পৌষপাবর্ণ ধুমধাম করেই পালন করে।নানা ধরনের পিঠা ও মিষ্টি (পাটিসাপটা,সরু চাকলী,দইপিঠা,ভাজাপিঠা,গুড়পিঠা,দুধপুলি,মালপোয়া,চিতু বা চিতইপিঠে,চুলি পিঠে,ভাপা পিঠে,রসবড়া,ক্ষীরের পায়েস,পানিফলের পায়েস,নলেন গুড়ের পায়েস,নানান নাড়ু,তিলের মিষ্টি ও তিলগুল,শুকনো পিঠে,খই,মোয়া,কদমা) বানানো ও খাবার রেওয়াজ আছে।লক্ষ্মী ঠাকুরের পুজো,মরাই পুজো,ক্ষেতের খোলা মাঠে যা খোলা বাহির বলা হয় গ্রামীণ আঞ্চলিক নামে সেখানে বিশেষ পুজো হয়।পুজোর স্থান গোবর ও মাটি দিয়ে ভালো করে নিকোনো হয়,আলপনা দেওয়া হয়।নতুন তোলা ধানের গুচ্ছ বিনুনীর মতো বাঁধা হয়,কখনো সংখ্যায় একাধিক।তা বাক্স,সিন্ধুক,ঘরের দোরের মাথায়,পুজোর ঘরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।সব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুতে(চালা-কুলো-কাস্তে-গোলা) চালবাটার ছিটে ও বিজোড় সংখ্যায় সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়।এটিকেই আউনি-বাউনি-চাউনি বলে।"আউনি" মানে "মা লক্ষ্মীর আগমন","বাউনি" মানে "মা লক্ষ্মীর বন্ধন",আর "চাউনি" মানে "মায়ের কাছে বর চাওয়া সৌভাগ্য-সমৃদ্ধি-সম্পদ"।একটি প্রচলিত ছড়াও আছে-

"আউনি বাউনি চাউনি/তিনদিন কোথাও যাওনি/দূর না যেও,গাঙ না পার হয়ে/তিনদিন খাবে বসে পিঠেভাত খেয়ে।।"

অন্য_মকর_খোলা_বাহির_পুজো🌾

নিকোনো ও উপরোক্ত নিয়মসহ আর একটি মকরের ঐতিহ্য জানাই।(আমাদের বাড়িতে হতো একসময় জ্যেঠিমারা করতেন;হয়তো ১৬প্রজন্ম আগে ওড়িশায় জগন্নাথদেবের সেবাইতদের বংশধর ছিলাম বলে নিয়মটি ভিন্ন,যেখানে ধান তুলে ঝাড়াই-মাড়াই হয়,তাকে চলতি ওড়িয়া মেশানো বাংলায় এই নামে ডাকা হয়) ক্ষেত্রে গোলার অভাবে বা কেউ কেউ গোলা ওই স্থানে থাকলেও একটি বাঁশের খুঁটি পোঁতেন।এরপর সেই খুঁটির গোড়া থেকে পূর্বমূখী একটি টানা চালবাটার ধানসিঁড়ি আলপনা দেওয়া হয়;১-২ ফুট মতো।এর ঠিক শেষ যেখানে হয় সেখানে শুধু গোবর দিয়ে একটি ইঁদুর আকৃতি "মকর" বানানো হয় যা খুঁটির দিকে মুখ করে থাকে;তার সামনে ছোট একটি প্লেট বানানো হয় গোবর দিয়ে যাতে সেই মকরদেবকে খাবার পরিবেশন করা হয়।এবার ঠিক দক্ষিণমূখী ফাঁকাস্থানে আঁকা হয় নানা সুমঙ্গলী এয়ো বস্তু;যেমন আয়না-দপর্ণ-শঙ্খ-লক্ষ্মীর পা-ধানের গোছা-কুলো-চালা এসব।এক সের ধান কিংবা যে যার সামর্থমতো ধান সেই খুঁটির নীচে ঢালেন সাথে থাকে অনান্য মরশুমি সবজি(মূলো-সরষা-আলু),মান কচুর পাতা-দূর্বাঘাস সহ নবপল্লব বা ৫-৭ বিজোড় পল্লব,একটি সিঁদুরমাখা বেল।এইদিন ভোরে সব জঞ্জাল তথা খড় জড়ো করে ছোট ছোট স্তুুপ করে পোড়ানো,হলুদ মেখে স্নান ও কাকভোরে নতুন ধানের গুচ্ছ গৃহলক্ষ্মীর বেদীর সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়;কেউ কেউ সদর দরজাও রাখেন।চাল-আলু-কলা-হলুদ সিঁধের সামগ্রীগুলি ছাড়াও ভোগ দেওয়া হয় নানা ফলমূল,আদা,শাঁখালু,নারকেল-গুড়-তিল-রাঙালু must প্রয়োজন হয়।এবার এই প্রধান পুজোটির মজার গল্প হলো;সন্ধ্যাবেলায় এটি without ব্রাহ্মণ ও মন্ত্রে শেয়ালের ডাক শুনে তুলে রাখা যায়;একঘটি শুদ্ধ জলে হরিতকী বা কষাফল-বাতাসা-গোবর দেওয়া জল তিনবার বা পাঁচবার একশ্বাসে ফেলতে ফেলতে পুরো বাঁশের খুঁটিটিকে প্রদক্ষিণ করতে হবে।প্রথাটির প্রধানই হলো শেয়ালের ডাক শুনতে হবে।যতক্ষণ না শুনছেন পুজো হবে না।সেই বসে থাকা রোমাঞ্চকর।এবার পুজো তোলার সময় ব্রাহ্মণ উপস্থিত থাকলে খুব ভালো নইলে গৃহকর্ত্রী বা যিনি আচার জানেন তিনি পুজা সমাপ্ত করবেন জল-ফুল-চন্দন-ভোগ এসব লাগিয়ে।পরে মকর উৎসবের সমস্ত প্রসাদ ফলমূল একসাথে মাখিয়ে সবাই একটু হলেও খাবে আর পিঠে-পুলি-পায়েসতো আছেই।গরুকেও পুজো করা হয় এদিন বিশেষ করে হাল টানা বা বলদ গরুকে এসব খেতে দেওয়া হয়।

গীতগোবিন্দের_স্রষ্টা_জয়দেবের_কেন্দুলী গ্রাম তথা বীরভূমেও প্রাচীন এই পৌষপাবর্ণের মেলা বসে।

No comments