সুতাহাটার পাথরবেড়িয়া স্পেশাল প্রাইমারি স্কুলের উন্নয়ন, উমপুনের ক্ষতিপূরণ ও পড়ুয়াদের পোশাকের ১০লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শিল্প সংস্কৃতির শহর হলদিয়া সুতাহাটা বিধানসভার অন্তর্গত সুতাহাটা পঞ্চায়েত …
সুতাহাটার পাথরবেড়িয়া স্পেশাল প্রাইমারি স্কুলের উন্নয়ন, উমপুনের ক্ষতিপূরণ ও পড়ুয়াদের পোশাকের ১০লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শিল্প সংস্কৃতির শহর হলদিয়া সুতাহাটা বিধানসভার অন্তর্গত সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি, সুতাহাটার পাথরবেড়িয়া স্পেশাল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল প্রামানিকের বিরুদ্ধে স্কুলের উন্নয়ন, উমপুনের ক্ষতিপূরণ ও পড়ুয়াদের পোশাকের ১০লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্ট থেকে গত দু’বছরে কয়েকদফায় ওই টাকা তুলে নিয়ে তিনি বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন। এই ঘটনার খেসারত দিতে হচ্ছে স্কুলকে। উমপুনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ফলে স্কুল বেহাল দশায় পড়ে রয়েছে। দু’বছর ধরে শ’দেড়েক পড়ুয়া পোশাকের টাকা না পাওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে ।
প্রধান শিক্ষকের এই কুকীর্তির প্রভাব গিয়ে পড়ছে অন্যান্য শিক্ষকদের উপর। স্কুলে মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের কাছে তাঁদের মুচলেকা দিতে হচ্ছে। এদিকে, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের পর ওই প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। সম্প্রতি জেলা শিক্ষা দপ্তরে শুনানির পর প্রধান শিক্ষককে ১৫জানুয়ারির মধ্যে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২০সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ছ’মাসে প্রধান শিক্ষক স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৯বারে মোট ১০লক্ষ ৭হাজার ৫০০টাকা তুলেছেন।
স্কুলের বর্তমান টিচার ইনচার্জ দীপঙ্কর দাসের সই করা একটি একটি ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ডিটেইলস থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৯সালের ২৮জুন প্রথম স্কুল কম্পোজিট গ্র্যান্টের ৫০হাজার টাকা তুলে নেন ওই প্রধান শিক্ষক। এরপর ওই বছরের ২৫সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালনের জন্য ৪হাজার টাকা এবং ২৩ডিসেম্বর স্কুলের উন্নয়নের এসিআর তহবিলের ৭লক্ষ ২৬হাজার ৩০০টাকা তোলেন তিনি। ২০২০সালে করোনা ও লকডাউন পর্বে তিনি কয়েকদফায় কখনও পড়ুয়াদের পোশাকের ৫০হাজার টাকা, উমপুনের ক্ষতিপূরণের ২৭হাজার টাকা, দু’দফায় কম্পোজিট গ্র্যান্টের এক লক্ষ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। শেষবার স্কুলের অ্যাকাউন্ট থেকে উঠেছে পড়ুয়াদের পোশাকের ১লক্ষ ২০০টাকা।
পাথরবেড়িয়া স্কুলের উন্নয়নের টাকা তছরূপের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ২০২১সালের মে মাসে। এনিয়ে শিক্ষা দপ্তরের হলদিয়া সার্কেলের সাব ইন্সপেক্টর অব স্কুলের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। স্কুলের তিন সহকারী শিক্ষক গত ১০মে পূর্ব জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের(ডিপিএসসি) কাছে প্রধান শিক্ষকের নামে অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পোশাকের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতায় কাজ শুরু করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের কাছে মুচলেকা দিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করতে হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরূপের অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে তাঁকে সরিয়ে গত বছর মে মাসে সহকারী শিক্ষক দীপঙ্কর দাসকে ওই প্রাইমারি স্কুলে টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীপঙ্করবাবু বলেন, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট নিয়ে নিয়ে এসআই অফিসে জমা দিয়েছি। ১০লক্ষের বেশি টাকা স্কুলে অ্যাকাউন্ট থেকে প্রধান শিক্ষক তুলেছেন। কিন্তু স্কুলের উন্নয়নে কোনও টাকা খরচ হয়নি। সেই টাকা প্রধান শিক্ষক কী করেছেন জানি না।
স্থানীয় জয়নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ সিরাজ আলি বলেন, সংখ্যালঘু এলাকার একটি স্কুলের উন্নয়নের টাকা, গরীব বাচ্চাদের সরকারি পোশাকের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষক দুলাল প্রামানিক গায়েব করে দিয়েছেন। স্থানীয় মানুষ এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। বিডিও ও স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়েছি। হলদিয়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক আবিরা দিন্দা বলেন, ডিপিএসসির চেয়ারম্যান ও ডিআই অফিসে ওই প্রধান শিক্ষকের শুনানি হয়েছে। উনি টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ডিপিএসসির চেয়ারম্যান হবিবুর রহমানের নির্দেশে গত নভেম্বর মাসে ওই প্রধান শিক্ষকের শুনানি হয়েছে ডিআই অফিসে। চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে উনি শুনানিতে আসছিলেন না। পরে দপ্তরের সচিবের কাছে শুনানির পর টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এরপর রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।
No comments