Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

রামমোহন, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলনে এগিয়ে এলেন সুতাহাটার পুলকার চালক নকুল ঘাটি। নিজের কন্যার মতো সম্প্রদান করলেন বৌমাকে

রামমোহন, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলনে এগিয়ে এলেন সুতাহাটার পুলকার চালক নকুল ঘাটি। নিজের কন্যার মতো সম্প্রদান করলেন বৌমাকেসুতাহাটার পুলকার চালক নকুল ঘাটি। নিজের মেয়ের মতো সম্প্রদান করলেন বৌমাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে বসল নহবত, বা…

 



রামমোহন, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলনে এগিয়ে এলেন সুতাহাটার পুলকার চালক নকুল ঘাটি। নিজের কন্যার মতো সম্প্রদান করলেন বৌমাকে

সুতাহাটার পুলকার চালক নকুল ঘাটি। নিজের মেয়ের মতো সম্প্রদান করলেন বৌমাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে বসল নহবত, বাজল সানাই। ফুলের তোরণে সেজে উঠল ঘাটি পরিবারের উঠোন। অগ্নিসাক্ষী করে ‘যদিদং হৃদয় তব, তদিং হৃদয়ং মম’ মন্ত্রোচ্চারণ, সিঁদুরদান, মালাবদল, উলুধ্বনিতে মুখরিত ছাদনাতলা। বিয়ের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের পর সোমবার সন্ধ্যায় বর কনেকে বরণ করে নেওয়ার জন্য সুতাহাটার অনন্তপুরে বসল ‘রিসেপশান’র আসর। বিজ্ঞানমনস্ক নকুলবাবু অবশ্য এদিন কোভিডের বিধি-নিষেধ মেনেই অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী এবং অতিথিরা নবদম্পতিকে আশীর্বাদের পর খাওয়াদাওয়া করলেন রীতিমত কব্জি ডুবিয়ে। প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে সমস্ত সামাজিক সংস্কার ভেঙে এমন সাড়ম্বরে বিধবা বিবাহের আয়োজন প্রশংসা কুড়িয়েছে। গ্রামের গরীব পুলকার চালকের আধুনিকমনস্কতায় গর্বিত প্রতিবেশীরাও। 

পেশায় পুলকার চালক নকুলবাবু আদতে একজন বিজ্ঞানকর্মী। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে দু’দশকের বেশি সময় ধরে যুক্ত। স্থায়ী কাজকর্ম না থাকায় চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। কয়েক বছর আগে ধারদেনা করে একটি সেকেন্ডহ্যান্ড মারুতি গাড়ি কেনেন পুলকার হিসেবে চালানোর জন্য। কিন্তু করোনার জন্য দু’বছর ধরে গাড়ির ভাড়া নেই। একমাত্র ছেলে অর্ণব হলদিয়ার ইলেকট্রস্টিল কারখানায় অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ পাওয়ার পর খানিকটা হাল ফেরে সংসারের। সুতাহাটার বরদা গ্রামের শুভ্রার সঙ্গে অর্ণবের বিয়ে দেন নকুলবাবল। বিয়ের বছর দেড়েকের মধ্যেই ঘটে মর্মান্তিক ঘটনা। ২০২০সালের ১৮অক্টোবর পুজোর ঠিক আগেই বাইক দুর্ঘটনায় বছর তেইশের অর্ণবের মৃত্যু হয়। কারখানায় ডিউটি শেষে মহিষাদলের কালিকাকুণ্ডুতে বন্ধুকে পৌঁছে দিয়ে সেদিন বাড়ি ফেরার পথেই ঘটে দুর্ঘটনা। 

স্বামীর মৃত্যুর পর ছ’মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান অর্ণবের স্ত্রী শুভ্রা। স্বামী হারানোর যন্ত্রণা, একাকীত্ব নিয়ে তীব্র লড়াই শুরু হয় শুভ্রার জীবনে। ছেলে মৈনাককে আঁকড়ে ধরে রোজ রাতে একা কাঁদতে থাকেন শুভ্রা। বৌমার কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েন নকুলবাবু ও তাঁর স্ত্রী নন্দিতা ঘাটি। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে বৌমার একাকীত্ব তাঁদের প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাবিদ্ধ করে। লকডাউনের মধ্যেই বৌমার জন্য কাজের সন্ধান শুরু করেন। বছরখানেক আগে দুর্গাচকের একটি সোনার বিপণীতে সেলস গার্লের কাজ শুরু করেন শুভ্রা। এরপর বৌমা শুভ্রাকে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার জন্য গত ছ’মাস ধরে হন্যে হয়ে পাত্রের খোঁজ শুরু হয়। নকুলবাবু বলেন, শুভ্রা বৌমা হয়ে আমাদের বাড়ি এসেছিল ঠিকই, এখন ও আমার মেয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই মেয়ের কষ্ট চোখের সামনে দেখতে পারিনি। ওর একাকীত্ব কাটাতে এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমদিকে বৌমা বিয়েতে রাজি ছিল না। ছ’মাস ধরে ওকে বোঝানোর পর রাজি হয়। হলদিয়ার রামগোপালচকের মধু সাঁতরার সঙ্গে শুভ্রার বিয়ে হয়েছে। 

সন্ধেয় বিয়ের আসরে শুভ্রা ও মধুকে ঘিরে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হল। সালাংকরা কনের সাজে চেয়ারে বসে শুভ্রা। তার পাশেই শুভ্রার দু’বছরের ছেলে মৈনাককে নিয়ে দাঁড়িয়ে বরবেশে মধু। বছর পঁচিশের মধু পেশায় একজন কম্পিউটার এক্সপার্ট। হলদিয়ার একটি সংস্থায় কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করেন। নবদম্পতিকে আর্শীবাদ করে নকুল ও নন্দিতা বলেন, মধুর ভেতর দিয়েই আমরা অর্ণবকে খুঁজে নেব। আর শুভ্রাতো আমাদের মেয়ে। এদিন বিয়েবাড়িতে স্টার্টার হিসেবে ছিল ফুচকার দোকান। মেনুতে ছিল ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন, সাদা ভাত, মুড়ি ঘণ্ট, পটলের দোরমা, চিকেন কালিয়া, দই ফিশ, পায়েশ। শেষপাতে আনারসের চাটনি, পাপর, আইসক্রিম এবং নলেনগুড়ের রসগোল্লা। হলদিয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্রনাথ গায়েন বলেন, নকুলবাবু সংস্কারমুক্ত মানুষ শুধু নন, এই বিয়ে মাধ্যমে তিনি সামাজিক সংস্কারেও হলদিয়ার একজন পথিকৃৎ হয়ে উঠলেন।

No comments