হলদিয়া বন্দরে দেড় দশক পর ৪০ হাজার টন পণ্য নিয়ে ঢুকলো বিদেশি জাহাজ
দেড় দশক পর প্রায় ৪০ হাজার টন রেকর্ড পণ্য নিয়ে হলদিয়া বন্দরের ডকে ঢুকতে সক্ষম হল একটি বিদেশি জাহাজ। এমভি ইয়াসা পায়োনিয়ার নামে দক্ষিণ আফ্রিকার জাহাজটি শনিবার টাটা …
হলদিয়া বন্দরে দেড় দশক পর ৪০ হাজার টন পণ্য নিয়ে ঢুকলো বিদেশি জাহাজ
দেড় দশক পর প্রায় ৪০ হাজার টন রেকর্ড পণ্য নিয়ে হলদিয়া বন্দরের ডকে ঢুকতে সক্ষম হল একটি বিদেশি জাহাজ। এমভি ইয়াসা পায়োনিয়ার নামে দক্ষিণ আফ্রিকার জাহাজটি শনিবার টাটা স্টিলের ৩৯ হাজার ৬৯৭ মেট্রিক টন লাইমস্টোন নিয়ে এসেছে।
এর আগে ২০০৫ সালে শেষবার ৪০ হাজার টন পণ্য নিয়ে বন্দরে জাহাজ ভিড়েছিল। ওইসময় ৪০ হাজার ৩২৫ টন নন-কোকিং কোল নিয়ে এসেছিল একটি জাহাজ। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজ চলাচলের পথ অর্থাৎ চ্যানেলের নাব্যতা বেড়ে ৮.৮ মিটার হওয়ায় এবং মেরিন ও ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ নেভিগেশনাল পরিকল্পনার ফলেই সঙ্কটের মধ্যেও বাড়তি পণ্য আনা সম্ভব হয়েছে। তবে নাব্যতার সঙ্কট মোকাবিলা করে পণ্য পরিবহণ বাড়াতে সাগরে সারা বছর ধরে দেড় লক্ষ টনের কেপসাইজ ভেসেল হ্যান্ডেলিংয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে বন্দর। এজন্য জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির পথে এগচ্ছে বন্দর।
বিজ্ঞাপন
রেকর্ড পণ্য নিয়ে জাহাজ ঢুকতে পারায় নাব্যতা বৃদ্ধি নিয়ে আশার আলো দেখছে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইডেন চ্যানেল খননের ফলেই গত চার-পাঁচ বছরে নাব্যতা ০.৫ মিটার বেড়েছে। বন্দরে জাহাজ যাতায়াতের রুট হলদিয়া ডক থেকে নন্দীগ্রামের পাশ দিয়ে ইডেন চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথের গড় নাব্যতা বেড়ে যাওয়ায় জাহাজগুলি বাড়তি পাঁচ-ছ’হাজার টন পণ্য পরিবহণ করতে পারছে। বর্তমানে এই রুটের গড় নাব্যতা ৮.৩-৮.৮ মিটার। তবে নাব্যতা জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল। শীতকাল এলেই নাব্যতা কমে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়ে বন্দর। এদিকে, ব্যাপক পলি পড়ায় নয়াচর ক্রমশ হলদিয়ার দিকে এগিয়ে আসায় নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। হলদিয়া চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং নিয়ে ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছে। জাহাজ মন্ত্রকের কাছে হলদিয়া বাঁচাতে নিয়মিত বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে তদবির করার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বন্দরের শ্রমিক সংগঠনগুলি।
হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(ট্রাফিক) অভয় মহাপাত্র বলেন, নাব্যতা সঙ্কটই এখন বন্দরের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য সাগরে গত বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রান্সলোডিং চালু হয়েছে। মাঝসমুদ্রে একটি অস্থায়ী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। সেখানে ২০ মিটার গভীরতায় সহজে দাঁড়াতে পারছে এক থেকে দেড় লক্ষ টনের বড় আকারের কেপসাইজ ভেসেল। ছোট ছোট বার্জ ভেসেলে করে সেই পণ্য বয়ে আনা হয় হলদিয়ায়। গতবছর সাতটি এই ধরনের জাহাজ হ্যান্ডেলিং করা হয়েছে। একটি গ্যাসের জাহাজও একইভাবে পণ্য খালাস করেছে। এবার সেই প্রক্রিয়া নিয়মিত চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর। তিনি জানান, স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার(সেইল) সঙ্গে এনিয়ে বন্দর জানুয়ারিতে চুক্তি করবে। শনিবার সেইলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার হলদিয়ায় এসে বন্দর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রাথমিক কথাবার্তা বলেছেন।
বিজ্ঞাপন
জিএম ট্রাফিক বলেন, এবার সেইলের কেপসাইজ জাহাজ প্রতিমাসে সাগরে হ্যান্ডেলিং করবে বন্দর। বিশাখাপত্তনমে কিছুটা পণ্য নামিয়ে সাগরে ৭০-৮০ হাজার টন পণ্য আনবে ওই জাহাজ। বছরে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টন অর্থাৎ এক মিলিয়ন টন কার্গো এভাবে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেইল। এনিয়ে শীঘ্রই চুক্তি হবে। পণ্য পরিবহণের জন্য কোন বার্জ কোম্পানিকে কাজে লাগানো হবে তা নিয়ে টেন্ডার ডাকা হবে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, নাব্যতা সমস্যার পাশাপাশি গত ৫-৬ মাস ধরে করোনা সহ একাধিক কারণে বন্দরে জাহাজ আসা কমে গিয়েছে। বন্দরের মূল কার্গো কয়লা ও আয়রন ওর পরিবহণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চিনে করোনার কারণে আয়রন ওরের টন পিছু দাম ১৫০ ডলার থেকে ৫০ ডলারে নেমে আসায় ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। সিমেন্টের ক্লিংকারও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। কয়লার দাম তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেডাররা আমদানি করছে না। তবে ম্যাঙ্গানিজের বাজার ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি বা এলপিজির বাজার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ায় সঙ্কটের মধ্যেও বেঁচে গিয়েছে হলদিয়া বন্দর।
No comments