Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ওঙ্কারধ্বনি- তমাল দাশগুপ্ত

ওঙ্কারধ্বনি- তমাল দাশগুপ্ত
ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ও সভ্যতায় সুপ্রাচীন অর্থবাহী ওঁ শব্দটি তন্ত্রে বহুল ব্যবহৃত এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী অথবা অব্রাহ্মণ্য অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহ্যেও যেমন বৌদ্ধধর্মে এ নাদ ব্যবহৃত। এ শব্দটির কি কোনও অর্থ আছে? …

 



ওঙ্কারধ্বনি- তমাল দাশগুপ্ত


ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ও সভ্যতায় সুপ্রাচীন অর্থবাহী ওঁ শব্দটি তন্ত্রে বহুল ব্যবহৃত এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী অথবা অব্রাহ্মণ্য অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহ্যেও যেমন বৌদ্ধধর্মে এ নাদ ব্যবহৃত। এ শব্দটির কি কোনও অর্থ আছে? এর ব্যাপক ব্যবহার কেন, এর সর্বাত্মক প্রচলন কিভাবে? এ শব্দটি কি আদিকাল থেকে, ঊষাকাল থেকেই রয়েছে? ভাষাতত্ত্বে এ শব্দের অর্থ কি? এমন নানা প্রশ্ন মনে উদয় হতেই পারে, হওয়াই উচিত। 

অথচ সাধারণ ভারতীয়দের জন্য তাদের বোঝার সুবিধার মত করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ শব্দর অর্থ নিয়ে আলোচনা একেবারেই হয় না। ওদিকে নাকি নাসার মহাকাশযান অথবা নাসার মানমন্দিরের যন্ত্র খোদ সূর্যের কেন্দ্রস্থলে ওঁ ধ্বনি শুনতে পেয়েছিল, এমন হোয়্যাটস্যাপ ফরোয়ার্ড আপনার কাছেও অবশ্যই এসে থাকবে। সঠিক আলোচনা ও ডিসকোর্স না থাকলে এই হয়। উদারপন্থী বিশ্বমানব, সেকুলার বামজেহাদিরা আগে প্রথমে নিজস্ব ঘন্ট ও গাবজাল পাকান, জাতিকে আত্মবিস্মৃত করান, ইতিহাসবিস্মৃত করেন, শেকড়বিচ্ছিন্ন করেন আমাদের। তারপর সেই বিকট শূন্যস্থানে, সেই অতীতবিস্মৃতির অন্ধকারে বীরদর্পে গেরুয়া পার্টির আঁটি সেল হুপহাপ করতে করতে প্রবেশ করেন। একটু রূঢ়ভাবে বলতে বাধ্য হলাম, কারণ বাঙালিকে শেকড়বিচ্ছিন্ন করে, বাঙালিকে তার আবহমানকালের তন্ত্রধর্ম সম্পর্কে বিমুখ করে তুলেছে যারা, কোনও নিন্দাবাক্য, কোনও কর্কশ বিশেষণই তাদের প্রহারের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নয়। 

তাদের অপকর্মের জন্যই বাঙালি আজ দিশেহারা, বিভ্রান্ত, উদ্ভ্রান্ত। অতএব তাই ধোঁয়াশা ধূম্রজাল কাটিয়ে আজ ওঁ সম্পর্কে সংক্ষেপে দুয়েক কথা বলা কর্তব্য বোধ করলাম। 

ওঁ হল হরপ্পা সভ্যতার ঊষাকালে প্ৰচলিত প্রাচীন দ্রাবিড় ভাষার শব্দ। ঋগ্বেদে এর ব্যবহার নেই, কিন্তু পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে এর প্রভাব সর্বাত্মক। ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরুর সময় পবিত্র জল বহন করে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা হলে তার উত্তরে ওঁ শব্দ উচ্চারণ করতে হত। এর অর্থ হল ইতিবাচকভাবে সম্মতি প্রদান। অর্থাৎ হ্যাঁ, পূজানুষ্ঠান শুরু কর।

ওঁ এসেছে প্রাচীন দ্রাবিড় শব্দ আঁ থেকে। যার অর্থ হল হ্যাঁ। আজও শ্রীলঙ্কার তামিল ডায়ালেক্ট/উপভাষায় ওঁ (ঠিক এভাবেই উচ্চারিত হয়) বললে হ্যাঁ বোঝায়।

চমকে যাবেন শুনলে, কিন্তু যেটা আজকের বাংলা ভাষায় আমরা বলি হ্যাঁ, সেটাও এই প্রাচীন দ্রাবিড় ভাষার আঁ থেকেই এসেছে। উত্তরদেশীয় দ্রাবিড় (বর্তমানে বিলুপ্ত, ভারতের উত্তরে আর দ্রাবিড় ভাষায় কথা বলা হয় না, তবে অবশ্যই একদা হত) ভাষার উচ্চারণপদ্ধতিতে এই আঁ-এর বদলে বলা হত হাঁ। সেখান থেকে বাঙালির হ্যাঁ।

এবং তন্ত্রে ওঁ ধ্বনির সঙ্গেই বহুল ব্যবহৃত হুঁ ধ্বনি। দুয়েরই উৎস ও ব্যুৎপত্তি এক, প্রাচীন দ্রাবিড় শব্দ আঁ/হাঁ। ওঁ এবং হুঁ, এ দুয়েরই অর্থ ইতিবাচক সম্মতি। হ্যাঁ, আমরা মায়ের জয়ধ্বনি দিচ্ছি, হ্যাঁ, আমরা মায়ের পদপ্রান্তে সমবেত হচ্ছি।

আজকের বাংলা কথ্য ভাষায় হ্যাঁ এবং তার সংক্ষিপ্ত ফর্ম হুঁ, দুটোই ধর্মীয় ওঁ এবং হুঁ ধ্বনির দ্যোতনা বহন করে। 

হুঁ। চ্যাট করতে গিয়ে সংক্ষেপে উত্তর। হ্যাঁ বলার থেকেও শর্টে বলা যায় হুঁ। ভাবতে পেরেছিলেন, সেটা ওঙ্কারধ্বনির সমগোত্রীয়? ভাবতে পেরেছিলেন, তন্ত্রমন্ত্রের ওঁ ধ্বনি, হুঁ ধ্বনি এভাবে আপনার প্রতি মুহূর্তের কথোপকথনে জড়িয়ে আছে?

ধর্ম আমাদের নিশ্বাস প্রশ্বাসে আছে, তাকে খুব আলাদা কিছু ভাববেন না। আমরা প্রকৃতিমাতৃকাশক্তির ধর্ম অনুসরণ করি, আমরা যেন ধর্মকে অপ্রাকৃত না ভাবি, তেমন ভাবলে প্রকৃতিমাতৃকার প্রতি দ্রোহিতা হয়। আমাদের ভাষার প্রত্যেক বর্ণে মা কালী আছেন, রামপ্রসাদ বলে গেছেন।

প্রসঙ্গত কালীবীজ হল ক্রীং, এবং ক অক্ষরটি প্রাচীন কাল থেকেই বলাকামাতৃকার দ্যোতনা বহন করে, বাঙালি যে মাতৃকার উপাসনা পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে আজ থেকে চার সহস্র বছর আগেও করত।  

ব্রাহ্মী থেকে আজকের বাংলা বর্ণমালায় অবিচ্ছিন্নভাবে ক বর্ণের আঁকশি হল পক্ষী মাতৃকার চঞ্চুর প্রতীক। কালী এই বলাকা মাতৃকা থেকেই এসেছেন, এ বিষয়ে আমার লেখা প্রবন্ধ আছে। ক শব্দটি মা কালীর প্রতীক।ক আমাদের বর্ণমালার প্রথম বর্ণ, এজন্যই। মায়ের নামেই আমাদের শহর কলকাতা কালীক্ষেত্র।

ওঙ্কার তথ্যঋণ: আস্কো পার্পোলা। মা কালীর মূর্তিটি ইন্টারনেট থেকে।

No comments