রাজ্যে থাবা বসাল ওমিক্রন। বিদেশ ফেরত মুর্শিদাবাদের সাত বছরের এক শিশু করোনার ওমিক্রন স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছে। আবুধাবি থেকে ফেরার পর হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে তার টেস্ট করা হয়েছিল। সেখানে আরটিপিসিআরের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরও কেন তা…
রাজ্যে থাবা বসাল ওমিক্রন। বিদেশ ফেরত মুর্শিদাবাদের সাত বছরের এক শিশু করোনার ওমিক্রন স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছে। আবুধাবি থেকে ফেরার পর হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে তার টেস্ট করা হয়েছিল। সেখানে আরটিপিসিআরের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরও কেন তাকে বিমানে উঠতে দেওয়া হল, তা নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর প্রশ্ন তুলেছে। তাদের ভুলের জন্যই রাজ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ওমিক্রন ছোঁয়াচে, তবে মৃত্যুর ভয় কম। আবুধাবি থেকে হায়দরাবাদ হয়ে একজন কলকাতায় এসেছে। তার ওমিক্রন ধরা পড়েছে। কিন্তু, বিমানে আসার সময় ৩০০ জন যাত্রীর সংস্পর্শে এসেছে সে। আবার বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে মিশেছে। ফলে আরও অনেকের সঙ্গে সংস্পর্শ হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, হায়দরাবাদ থেকে কেন তাকে প্লেনে চড়তে দেওয়া হল, সেটা তারাই বলতে পারবে। কলকাতায় নামার পরও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কল্যাণী থেকে জিনোমিক টেস্টে নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারি। ওর সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশু, তার বাবা, মা ও ১০ বছরের দিদি আবুধাবি থেকে ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে নামে। সেখানেই নিয়ম অনুযায়ী আরটিপিসিআর টেস্ট করা হয়। পরিবারের সকলের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শিশুটির রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপরও বিমানে উঠে তারা দমদমে আসে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে তারা আত্মীয়ের বাড়ি মালদহের কালিয়াচকে ১১ ডিসেম্বর দুপুরে চলে আসে। সেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছে। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ স্বাস্থ্যভবন থেকে ওই শিশুর ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খবর জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরকে জানানো হয়। তাকে খুঁজে বের করতে প্রথমে আধিকারিকদের বেগ পেতে হয়। তারপর জানা যায়, ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তার বাড়ি হলেও সে মালদহের কালিয়াচকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে রয়েছে। ইতিমধ্যেই তার সংস্পর্শে অনেকেই এসেছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে এদিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সি পট্টভি।
মুশিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, ওমিক্রন টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ জানার পরই আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। আক্রান্ত শিশু ফরাক্কায় ওর নিজের বাড়িতে আসেনি। মালদহে কালিয়াচকে আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিল। তবে ওই শিশুর বাবা ফরাক্কায় বেনিয়াগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাড়িতে এসেছিলেন বলে শুনেছি। ওদের বাড়িটি ঘিরে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শিশুটির কোথায় চিকিৎসা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ও যেখানে রয়েছে সেখানে কন্টেইনমেন্ট জোন করে দেওয়া হয়েছে।
আক্রান্তের পরিবারের এক সদস্যা বলেন, ওর পরিবার প্রায় ২০ বছর ধরে আবুধাবিতে রয়েছে। বাবা ইঞ্জিনিয়ার। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। দু’বছর পর সকলে বাড়ি ফিরেছেন। এখনও পর্যন্ত শিশুটির মধ্যে কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। সে সুস্থ রয়েছে। তবে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তার সংস্পর্শে অনেকেই এসেছেন। তাঁদের মধ্যেও কেউ অসুস্থ হননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরিবারের লোকজনও উদ্বেগে রয়েছেন।
মালদহ জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত শিশু ও তার মাকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হবে। শিশুর সংস্পর্শে আসা পরিবারের পাঁচজনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পাপড়ি নায়েক বলেন, খবর পাওয়ার পরই এদিন এলাকায় মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই পরিবারটির সঙ্গে হায়দরাবাদ থেকে কারা ফিরেছিল সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কালিয়াচকে তার সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন, তাঁদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। -ফাইল চিত্র
No comments