এফআইআর, ক্ষতিপূরণের টাকা না ফেরালে১৪০০ জনকে নোটিসকঠোর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন উমপুন সাইক্লোনে ‘ডবল পেমেন্ট’ পাওয়া ১৪০০ উপভোক্তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরানোর জন্য নোটিস ইস্যু করা হল। জেলায় ১৭টি ব্লকের বিডিও অফিস থেকে …
এফআইআর, ক্ষতিপূরণের টাকা না ফেরালে১৪০০ জনকে নোটিস
কঠোর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন উমপুন সাইক্লোনে ‘ডবল পেমেন্ট’ পাওয়া ১৪০০ উপভোক্তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরানোর জন্য নোটিস ইস্যু করা হল। জেলায় ১৭টি ব্লকের বিডিও অফিস থেকে ডাকযোগে ওই উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি নোটিস পৌঁছে দেওয়া হল। এভাবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা আদায়ের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। মহিষাদল, নন্দকুমার, নন্দীগ্রাম-১ ও ২ সহ মোট ১৭টি ব্লকে এই ঘটনা ঘটেছে। ৯তারিখের মধ্যে টাকা না ফেরালে এফআইআর করা হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। উম-পুন সাইক্লোনের পর প্রায় দেড় বছর কেটে গিয়েছে। এখন টাকা ফেরানোর নোটিস পেয়ে মাথায় হাত উপভোক্তাদের।
নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ৩০১ জনের বাড়িতে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ৭৯ জনের বাড়িতে নোটিস পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এখনও পর্যন্ত ছ’জনের বাড়িতে পৌঁছেছে। মহিষাদল ব্লকে ২০ জনের বাড়িতে ডাকযোগে নোটিস পাঠানো হয়েছে। নন্দকুমার ব্লকে ৩০জনকে চিহ্নিত করে বাড়িতে নোটিস পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গোটা জেলায় এরকম ১৪০০ জনের বাড়িতে নোটিস যাবে বলে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন।
২০২০ সালে মে মাসে উমপুন সাইক্লোনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। জেলা প্রশাসন সাড়ে চার লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নবান্নে রিপোর্ট দিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি সারানোর জন্য ধাপে ধাপে প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। আড়াই লক্ষ মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্ষতিপূরণ বিলির কাজে বিস্তর অনিয়ম হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে সিএজি(ক্যাগ) উমপুন সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি প্রাপকদের তালিকা খতিয়ে দেখে। তাতে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক উপভোক্তাকে দু’বার করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। গোড়ার দিকে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তকেই ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তারপর ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনের পাহাড় জমে যাওয়ায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ২০ হাজার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, ডবল পেমেন্ট পাওয়া বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত একবার ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয়বার তাঁরা পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিছু উপভোক্তা দু’বার ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা অপচয়ের হিসেব পাওয়া গিয়েছে। সিএজি ‘ডবল পেমেন্ট’ পাওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দফায় দফায় জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছে। এনিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তাতেই অস্বস্তি বেড়েছে। তাই তড়িঘড়ি টাকা ফেরত নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের নোটিস ইস্যু করার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এনেছে জেলা প্রশাসন। এখন কত সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত টাকা ফেরান, সেটাই দেখার বিষয়। টাকা না ফেরালে ওইসব ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিল করার পথে হাঁটতে চাইছে প্রশাসন। আপাতত সাতদিনের সময়সীমা দেখে এনিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য নয়, উমপুনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষি, পানচাষিদের একটা অংশও ডবল পেমেন্ট পেয়েছেন। উমপুন সাইক্লোনে ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া সত্ত্বেও অনেকের বিরুদ্ধে অনুদানের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছিল। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে এনিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, সদস্য মিলিয়ে মোট ২০০ জনকে শোকজ করেছিল তৃণমূল। ভুয়ো উপভোক্তাদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকা ফেরত এসেছে। নন্দীগ্রাম-২এর বিডিও অখিলেশ সাহা বলেন, মোট ৩০১ জন ডবল পেমেন্ট পেয়েছেন বলে তালিকা পেয়েছি। তাঁদের বাড়ি বাড়ি নোটিস দেওয়া হচ্ছে। নন্দীগ্রাম-১এর বিডিও সুমিতা সেনগুপ্ত বলেন, জেলা থেকে ৭৯ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আমরা ১৯ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। জেলাশাসক বলেন, মোট ১৪০০ জনের বাড়ি বাড়ি নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে ডবল পেমেন্টের মধ্যে একটি ফেরানো হবে। না ফেরালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments