বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসু
“ একবার বিদায় দে মা , ঘুরে আসি ”
এই গান আজও পথে পথে বাউল ভিক্ষুক তার একতারাতে বিষণ্ণতার সুর তুলে গানটি গেয়ে থাকে ।
দেশপ্রেমের এই গান যখনই স্মরণে আসে, কিম্বা গাওয়া হয় তখনই যেন অবচেতন মনে চোখের সামনে …
বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসু
“ একবার বিদায় দে মা , ঘুরে আসি ”
এই গান আজও পথে পথে বাউল ভিক্ষুক তার একতারাতে বিষণ্ণতার সুর তুলে গানটি গেয়ে থাকে ।
দেশপ্রেমের এই গান যখনই স্মরণে আসে, কিম্বা গাওয়া হয় তখনই যেন অবচেতন মনে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ১৮ বছরের এক তরতাজা যুবকের এক হাসি মুখ । হাসি মুখ নিয়ে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ।
তিনিই প্রথম বাঙালি ও দেশের সর্ব কনিষ্ঠ বিপ্লবী যাকে ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশরা । দিনটা ছিল ১৯০৮ সালের ১১ ই আগস্ট । ক্ষুদিরাম বসুর বয়স তখন ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন । হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি । যা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছিল ইংরেজ সরকার সহ সারা দেশবাসীকে ।
ভাবতে অবাক লাগে , আঠারো বছরের এই যুবক স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন । তরতাজা যুবক হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন । শত প্রলোভনেও ব্রিটিশ রাজশক্তির সঙ্গে আপোষ করেননি ।
ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম হয়েছিল যে জেলায় যে মাটিতে , সেই জেলার মাটি আন্দোলনের পিঠস্থান,বিপ্লবের আতুড়ঘর বলেই পরিচিত । জেলাটি হল মেদিনীপুর জেলা । এই জেলাতেই একদা ইংরেজদের সমান্তরাল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো । এই জেলারই বীর বীরাঙ্গনা ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা , বন্দেমাতরম্ মন্ত্র উচ্চারণ করে যিনি শহিদ হয়েছিলেন । এই জেলার আর এক বীর বিপ্লবী,জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার হেমচন্দ্র কানুনগো সহ অগণিত বিপ্লবীর জন্মদিয়েছে এই জেলার মাটি , আমাদের কাছে আজও তাঁরা শ্রদ্ধেয় ও প্রণম্য ।
জন্ম:
৩ রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ সাল, কেশপুর,মেদিনীপুর ।
পিতা :- ত্রৈলোক্যনাথ বসু
মাতা :- লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী
আত্মবলিদান:
১১ ই আগস্ট ১৯০৮ সাল, মুজফফপুর সংশোধনাগারে।
১৮৮৯ সালের ৩ রা ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার । তার মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী ।
তিন কন্যার পর ক্ষুদিরামের জন্ম দেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী । কিন্তু আগে লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর আরও দুই পুত্র সন্তান অকালে মারা যান । ক্ষুদিরামের জন্মের খবরের আনন্দে জন্মদাত্রী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠল । দশ মাস দশদিন ধরে তাঁকে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে । পরিশেষে ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে তাঁর । অপরূপা , সরোজিনী , আর ননীবালার চোখে মুখেও আনন্দের ঝিলিক ঝরে পড়ল । এরা হলেন এই ছোট্ট শিশু ক্ষুদিরামের তিন দিদি ।
তবুও কোথায় যেন সংশয়ের চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে তাদের মনে । এর কারণ হলো আগে পরপর দুই পুত্র সন্তান মারা গেছে । সকলের মনে সংশয় ছিল পুত্রসন্তান জন্মালে বেশি দিন বাঁচবে তো ! অবিলম্বে এই বিপদের সম্ভাবনা কে নির্মূল করতে হবে । তাই প্রচলিত কুসংস্কার মেনে লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবী সদ্যজাত পুত্রের ওপর থেকে তার সমস্ত অধিকার প্রত্যাহার করলেন । মাত্র তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ )বিনিময়ে বড়ো মেয়ে অপরূপাদেবীর হাতে তুলে দিলেন এই নবজাতকের দায়িত্বভার । তখনকার দিনে এভাবেই ভাগ্যের লিখনকে খণ্ডন করার চেষ্টা করা হত । খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে নবজাতকের নামকরণ করা হল ক্ষুদিরাম ।
ছোটো থেকেই ক্ষুদিরাম ছিলেন পরোপকারী । কারো দুঃখ - কষ্ট দেখতে পারতেন না । অভাব অনটনের সংসারে তিনি বড় হচ্ছেন তা সত্ত্বেও ক্ষুদিরাম দুহাত তুলে একাতরে দান করতে ভালোবাসতেন । গ্রামের লোকজন আলোচনা করতেন , বড়ো হয়ে এই শিশুটি নিশ্চয়ই এক মহান মানুষে পরিণত হবে । ভাবতে ভালো লাগে , তাদের সেদিনের ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তী কালে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছিল ।
ক্ষুদিরামের জন্য আজ কেশপুরের মৌবনী এক জাতীয় তীর্থ হয়ে উঠেছে ।
কিন্তু হঠাৎ ফুরিয়ে গেল ক্ষুদিরামের সোনালি শৈশবের আনন্দঘন মুহূর্ত । মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মা -আর পরের বছর ছয় বছর বয়সে বাবা দুজনকে প্রায় একসঙ্গে হারালেন ক্ষুদিরাম । সহায় সম্বল হীন হয়ে পড়লেন তিনি । শোক কী , তা হয়তো উপলব্ধি করতে পারেননি সেদিনের শিশু । কিন্তু এত সমস্যার মধ্যে পথ চলবেন কী করে ? অনেকে বলে থাকেন , এ হল ঈশ্বরের অমোঘ নির্দেশ । এইভাবে মা বাবাকে না হারালে ক্ষুদিরাম এক দুরন্ত কিশোরে পরিণত হতে পারতেন না ।
ক্ষুদিরামের জীবনে যখন ঘন আশঙ্কার ঘনঘটা , তখন তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন তাঁর বড়দিদি অপরূপাদেবী । ভাইকে তিনি খুব ভালোবাসতেন । সবসময় মায়ের আদর যত্ন দিয়ে ভাইকে আগলে রাখতেন । স্বামীর কাছ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছিলেন অপরূপাদেবী । তার স্বামী অমৃতলাল রায় । তিনি ঘাটাল দেওয়ানি আদালতে কাজ করতেন । তিনি খুব সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন ।
ক্ষুদিরাম এবং তাঁর ছোড়দি ননীবালাকে অপরূপা নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন । তিনি থাকতেন দাশপুর থানার হাটগেছ্যা গ্রামে । এই গ্রামেরই শিক্ষক গিরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হল ক্ষুদিরামের শিক্ষাজীবন । নতুন পরিবেশে ক্ষুদিরাম নিজেকে মানাতে পারছেন না । পাঠশালার প্রচলিত পাঠক্রম কখনও তাকে আকর্ষণ করতে পারেনি । তাঁর ভালো লাগত সহপাঠীদের নিয়ে গাছে চড়তে, নদীতে সাঁতার কাটতে, পাখির বাসায় ঢিল ছুঁড়তেন ।
মাঝে মাঝে শিক্ষক মশাইয়ের বেত লুকিয়ে রাখা সহ নানা ধরনের দুরন্তপনা করে সকলকে মাতিয়ে রাখতেন সারাক্ষন । কখনও কখনও তাঁকে নিলডাউন করে রাখা হত । বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হত , তবুও ক্ষুদিরামের দস্যিপনা এতটুকু কমেনি ।
ছোটো থেকেই ক্ষুদিরামের মধ্যে নেতৃত্বদানের একটা সহজাত ক্ষমতা চোখে পড়ে সকলের । শিশু কাল থেকেই শাস্তির মুখে দাঁড়িয়ে কখনও সহপাঠীদের নাম প্রকাশ করতেন না । সকল বন্ধু বান্ধব সাহপাঠিদের দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিতেন শুধু বলতেন— ‘ গুরুমশাই , সমস্ত দোষ আমার , আমি অপরাধ করেছি , আমাকে শাস্তি দিন । দোহাই , আমার কোনো বন্ধুকে শাস্তি দেবেন না ’ । ক্ষুদিরামের এই সাহসী মনোভাব দেখে শিক্ষক মহাশয়রা অবাক হয়ে যেতেন ।
তখনকার সময় পাঠশালার উন্নতির জন্যে বিভিন্ন ভাবে চাঁদা চাইবার বা আদায় করবার একটা রেওয়াজ ছিল । বিভিন্ন ভাবে পথ আটকে অনেকের কাছে চাঁদা আদায় করত, আর স্কুলের উন্নতি প্রকল্পে শিক্ষকদের সাথে সাথে ছাত্ররাও চাঁদা আদায় করতে পথে নামত । এমন কি বর - বধূর গাড়ি ঘিরেও রাস্তায় চাঁদা আদায় করা হত । একদিন পাঠশালার সামনে দিয়ে নব - দম্পতি পালকিতে করে যাচ্ছিল । শিক্ষক মশাইয়ের নির্দেশে ছাত্ররা রাস্তায় ছুটল চাঁদা আদায় করবার জন্য । বরের নির্দেশে ধমকানিতে বাহকরা ছাত্রদের দূরেসরিয়ে পালকি নিয়ে এগিয়ে গেল । ছাত্রদের দল কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল । এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি । প্রতিবার তারা পালকি ঘিরে কিছু না কিছু টাকা আদায় করেতে পারত কিন্তু ক্ষুদিরাম ছিলেন সেই দলে তাই হেরে যাওয়ার পাত্র ক্ষুদিরাম নয় যে ভাবেই হোক এই উদ্দেশ্য তাঁকে সাধন করতেই হবে । এই অভিযানে শেষ পর্যন্ত ক্ষুদিরাম জয়ী হয়েছিলেন । তিনি তাঁর বন্ধুদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সকলে পালকি ধরে ঝুলে পড়তে । তার নির্দেশে ছাত্ররা পালকি ধরে ঝুলে পড়ল । বরপক্ষ শেষ পর্যন্ত চাঁদা দিতে বাধ্য হয়ে ছিলেন ।
ইতিমধ্যে অমৃতলাল বাবু বদলি হয়েছেন তমলুকের সেরেস্তা দারিতে । জামাইবাবুর সঙ্গে ক্ষুদিরামকে তমলুকে চলে আসতে হল । আবার নতুন পরিবেশ , নতুন স্কুল জীবন শুরু হবে । ক্ষুদিরামের চরিত্রে , একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যে কোনো পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন ।
তমলুকে এসে হ্যামিলটন উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন ক্ষুদিরাম । তখন থেকেই ক্ষুদিরামের চরিত্রে কিছু স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায় । আগের থেকে অনেক গম্ভীর হয়ে গেলেন । সবসময় কিছু না কিছু চিন্তায় মগ্ন থাকতেন ।
একবার স্কুলের এক শিক্ষক ক্ষুদিরামের ক্লাসের ছাত্রদের ডেকে পাঠালেন, তিনি একটি অদ্ভুত প্রতিযোগিতার কথা বললেন ছাত্রদের । তিনি বললেন - ‘ কে একবারে টেবিলের ওপর সবথেকে বেশি ঘুষি মারতে পারবে । একনাগাড়ে মারতে হবে কিন্তু কোনো ভাবেই থামা যাবে না কোনোরকম সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা থাকবে না । ’
ক্ষুদিরাম এই প্রস্তাব শুনে সবার আগে এসে দাঁড়ালেন । তাঁর সঙ্গে আরও ঊনিশজন ছাত্র চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন । শুরু হল ঘুষি মারার প্রতিযোগিতা । সমস্ত বিদ্যালয় জুড়ে সে কী উন্মাদনা ! গ্রামবাসীদের অনেকে লড়াই দেখতে এসেছেন । কোনো ছাত্রই সাত - আটটির বেশি ঘুষি মারতে পারল না এবার এলো ক্ষুদিরামের পালা । ক্ষুদিরাম টেবিলের ওপর একনাগাড়ে ঘুষি মেরেই চলেছেন হাত ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে তবু ঘুষি মারা বন্ধ হচ্ছেনা । মুখে লেগে রয়েছে তার বিশ্বজয়ের হাসি । শেষপর্যন্ত শিক্ষক এগিয়ে এসে ক্ষুদিরামকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন । ছোটবেলার এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই ক্ষুদিরামকে ভবিষ্যতের উত্তরনের পথ দেখিয়েছিলা, সম্ভাবনাময় জীবন প্রকাশিত হয়েছিলো ।
এই সময় ক্ষুদিরাম শরীরচর্চার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে ছিলেন । শরীরচর্চার জন্যে তখন গড়া হয়েছে আত্মোন্নতি সমিতি, তার আড়ালে এখানে বিপ্লবীদের গোপন অনুশীলন চলত । সকল সভ্যদের হাতে হাতে ঘুরত বিবেকানন্দের রচনা , যে রচনাবলীর মাধ্যমে বিবেকানন্দ মানুষকে সুশিক্ষিত এবং সচেতন হবার ডাক দিয়েছেন । তিনি বলেছিলেন , ধর্ম শুধু মন্দির মসজিদের চার দেওয়ালের মধ্যে লুকিয়ে নেই । ধর্মকে পরিব্যাপ্ত করতে হবে । ভারতবাসী হিসেবে নিজেকে গৌরববোধ করতে হবে । মনে রাখতে হবে , একদা এই ভারতের বুকেই উন্নত সভ্যতার জন্ম হয়েছে । যদি আমরা সবাই একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারি । তাহলে ব্রিটিশদের কী সাধ্য ভারতকে পদানত করে রাখবে ।
পরিবর্তনের ছোঁয়া এসে লাগল মেদিনীপুরের বুকে ।
মেদিনীপুরে ক্ষুদিরামের বিপ্লবী জীবনের অভিষেক হয় । তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন । ১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল । সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র কানুনগো এবং সত্যন্দ্রনাথ বসু । সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী ।
১৯০২ সালে মেদিনীপুরে এলেন অরবিন্দ ঘোষ । তিনি সবেমাত্র বরোদা থেকে বঙ্গদেশে এসেছেন । যোগ দিয়েছেন সশস্ত্র সংগ্রামে । ১৯০৩ সালে এলেন ভগিনী নিবেদিতা । তিনি মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি পরিদর্শন করলেন । প্রকাশ্য সভায় ইংরেজের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন । তিনি ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী । তার সভায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেন । ব্রিটিশরা বুঝতে পারল এবার কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে । ক্ষুদিরামের মন এই সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে জড়িয়ে গেল । কিশোর ক্ষুদিরাম বুঝলেন , এবার আর আত্মোন্নতির জন্য ব্যস্ত থাকলে চলবে না । দেশমাতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য চেষ্টা করতে হবে । যে মায়ের এত কষ্ট , তার সন্তান কি সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে ?
কিন্তু কে হবেন আমার রাজনৈতিক গুরু ? কার পদতলে আমি আমার সর্বস্ব নিবেদন করব ?
১৯০৩ সাল চোদ্দো বছরের ক্ষুদিরাম তখন স্কুলের ছাত্র । তাঁর ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ফণিভূষণ ঘোষ একদিন বোম্বাই মিলের একটি কোরা নতুন ধুতি পরে স্কুলে এলেন । ফণিভূষণের এমন পোশাক দেখে সহপাঠীরা বিদ্রূপ করতে শুরু করল । ক্ষুদিরামের মনে অন্য ধরনের ভাবনার প্রকাশ ঘটে গেল । তিনি স্থির করলেন , এখন থেকে আমি স্বদেশি মিলের কাপড় পরব । আমরা কেন বিদেশি বস্ত্র ধারণ করব । ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একটি তাৎক্ষণিক ভাষণ দিয়েছিলেন । সেই ভাষণের মাধ্যমে স্বদেশি কাপড় পরার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলেছিলেন । ক্ষুদিরাম বলেছিলেন - ‘ মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় যত পুরোনো বা ছেঁড়া হোক না কেন , তা আমাদের দেশের সম্পদ । তা পরতে অপমান বা লজ্জার কী কারণ থাকতে পারে ? দিশি কাপড় আমাদের গোলামির চিহ্ন নয় , যদি আমি ফণির কাপড়ের মতো একটি দিশি কাপড় পেতাম , তাহলে সেই দিশি কাপড় খানা কোমরে জড়িয়ে সকলের সামনে ছুটে যেতাম এবং তাতে যে আমার কী আনন্দ হত , তা আর কী বলব ! ’
এই কথা বলে তিনি ফণিভূষণকে সকলের সামনে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । বোঝা গেল তিনি অন্তরের অন্তস্থল থেকে এই কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন । ক্ষুদিরামের স্বদেশপ্রীতি অন্যান্যদেরও প্রভাবিত করল । তারা সকলে একসঙ্গে হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করলেন , সুযোগ পেলে ফণিভূষণের মতো দিশি কাপড় পরিধান করবেন । এইভাবে ক্ষুদিরাম তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের মাধ্যমে সকলের মনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটালেন ।
কিছু দিন বাদে তমলুক শহরের আশেপাশের গ্রামগুলিতে মহামারীর আকারে কলেরার পাদুর্ভাব দেখা দিল । এই রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল সেই সময় , দলে দলে গ্রামবাসীরা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে, গ্রাম ছাড়ছে সকলে, গ্রামের পর গ্রাম খালি হয়ে যাচ্ছে সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরী হলো । ক্ষুদিরাম কোনোভাবেই দমলেন না তিনি কলেরা প্রকোপিত অঞ্চলে গিয়ে ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ।
দিদি জামাইবাবু শাসন করতে এসেছিলেন বার বার বারণ করল । পাড়া প্রতিবেশীরাও ক্ষুদিরামকে বাধা দেবার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু নিজ প্রতিজ্ঞায় সেদিনের কিশোর ক্ষুদিরাম ছিলেন অটল ও অবিচল, যে কাজে একবার করবে বলে মনোস্থির করে ঝাপিয়ে পড়েন , সে কাজ শেষ না করে ছাড়বেন না । আস্তে আস্তে ক্ষুদিরামের অনুগামীর সংখ্যা ক্রমস বাড়তে লাগল । তাদের সকলকে নিয়ে একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করলেন । বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে ভিক্ষে সংগ্রহ করল তারা । সেই সংগ্রহীত ভিক্ষা দিয়ে ওষুধপত্র সহ ত্রাণের জিনিস পত্র কেনা হল । শেষ অব্দি ক্ষুদিরাম এই যুদ্ধেও জয়ী হলেন ।
গ্রামে ফিরে এলে ক্ষুদিরামকে ঘিরে বিজয়ী সংবর্ধনা দেওয়া হল । ক্ষুদিরামের মন তখন অশান্তিতে পরিপূর্ণ । দেশের অবস্থা সত্যি শোচনীয় । স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে সরকার নজর দিচ্ছে না । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া । তখন থেকেই ক্ষুদিরাম ভবিষ্যতের দিনগুলির কথা চিন্তা করতে শুরু করলেন । যে করেই হোক এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতেই হবে এটাই তার আগামীর চিন্তা ।
আমরা সকলেই তমলুকের মা বর্গভীমা মন্দিরের নাম শুনেছ । অনেক বছরের পুরোনো এই মন্দিরটি রূপনারায়ণ নদীর তীরে অবস্থিত । এই মন্দিরের পাশে সুরেন রক্ষিতের বাড়ি । তিনি ছিলেন এক মহান মনের মানুষ । তাঁর বাড়ির দালানে একটি আখড়া গড়ে উঠল বিপ্লবীদের । সেই আখড়ার নাম দেওয়া হয়েছিলো মাতৃসদন । এই আখড়াতে ক্ষুদিরাম ভরতি হলেন । এখানে আসতেন বিশিষ্ট নেতারা আসতেন পূর্ণচন্দ্র সেন এবং গিরিজা অধিকারী সহ আরো অনেকে ।
১৯০৪ সালে ক্ষুদিরামের জীবনধারায় আর একটি পরিবর্তন ঘটে গেল । ভগ্নিপতি অমৃতলালবাবু মেদিনীপুরে বদলি হলেন । ক্ষুদিরাম এলেন মেদিনীপুরে । ভর্তি হলেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে । সেখানকার অবস্থা দেখে তাঁর মন দুঃখে ভরে গেল । পড়াশুনার বাইরে যে একটা আলাদা জগত আছে , সে সম্পর্কে ছাত্ররা মোটেও উৎসাহী নয় । তাঁরা নিজস্ব জগতের মধ্যেই থাকতে ভালোবাসেন । ডিগ্রি অর্জনের মোহে তারা ব্যস্ত থাকতেন সবসময় ।
এখানে এসে ক্ষুদিরাম হাঁপিয়ে উঠলেন ।
শিক্ষকদের মন জয় করার চেষ্টা করলেন । কিন্তু শিক্ষকরা তাঁকে মাথামোটা গবেট হিসেবে চিহ্নিত করলেন ।
মেদিনীপুর জেলা তখন বন্যা কবলিত ছিল প্রত্যেক বছরই বর্ষার সময় বন্যা লেগে থাকত । বন্যার ফলে গ্রামের হাজার হাজার মানুষের জীবনধারা পাল্টে যেতো, অনেক সুখের সংসার ভেঙে যেতো । ক্ষুদিরামের কানে এই ভয়ংকর খবর পৌঁছোলে তিনি আবার ত্রাণের কাজে বেরিয়ে পড়লেন । নিজের হাতে অস্থায়ী চালাঘর বাঁধলেন , বৃদ্ধ এবং অক্ষম মানুষদের পিঠে তুলে নিয়ে গেলেন সেই আশ্রয়ে । সকলে তার নামে জয়ধ্বনি করল । বলা হল তিনি নাকি স্বয়ং ঈশ্বর প্রেরিত ত্রাণকর্তা । এতজনের প্রশংসা ক্ষুদিরামকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করতে পারেনি । তখন থেকেই পরার্থে জীবনদান করে গেছেন । পরিবারের সকলে ক্ষুদিরামের বেপরোয়া স্বভাবে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ এবং বিব্রত হয়েছেন । শীতের এক সকালে লক্ষ্মীনারায়ণ দাস নামে এক ভিক্ষুক এসেছিল ক্ষুদিরামের বাড়ি । গায়ে ছেঁড়া কাপড় , উত্তর দিক থেকে কনকনে হাওয়া আসছে । তাকে দেওয়ার মতো ক্ষুদিরামের কাছে কিছু ছিল না , ছিল পিতার স্মৃতি বিজড়িত একটি শাল ক্ষুদিরাম সেই দামী শালটি ভিক্ষুককে দান করলেন । বললেন- “ তোমাকে দেবার মতো আমার আর কিছু নেই ভাই , এই শাল আমি কখনও গায়ে দিইনি । গায়ে দেবার সুযোগ কখনও পাব কিনা জানি না । বাবার শেষ স্মৃতিটা কাকে আর দেব বলো , আমার মনে হল , তুমি হলে এই শালের যোগ্যব্যক্তি । ”
লোকটি চলে যাবার পর অপরূপাদেবী প্রতিবাদ করেছিলেন- ‘ ভিখারি কি শাল গায়ে দেয় ? ক্ষুদি , তোর মাথায় কী এতটুকু বুদ্ধি নেই ? শালটা বিক্রি করে ফেলবে । ’
ক্ষুদিরাম হাসতে হাসতে বললেন -
‘ দিদি , তা যদি দেয় , দিক না । শালটা বিক্রি করে যা টাকা পাবে , সেই টাকায় কদিন পেটের সংস্থান তো হবে । ’
দিদি বুঝতে পারলেন , ক্ষুদিরাম হলেন অন্য স্বভাবের মানুষ ।
ক্ষুদিরাম নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেন , নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দেন , পীড়িতের সেবা করেন । গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যাবার জন্য দ্রুতগামী রণপা ব্যবহার করতেন । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন , ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে অস্ত্র সংগ্রহ করতে হবে । শুধু সংগ্রহ করলেই চলবে না সেই অস্ত্র চালানোর কৌশলটা তাকে শিখতে হবে রপ্ত করতে হবে বন্দুক চালানো ।
তখন মেদিনীপুরে বেশ কয়েকটি গুপ্ত সমিতি স্থাপিত হয়েছে । একটি গুপ্ত সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাজনারায়ণ বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র জ্ঞানেন্দ্র বসু ও সত্যেন বসু আর হেমচন্দ্র কানুনগো ।
ক্ষুদিরাম হেমচন্দ্রকে সামনা সামনি দেখলেন দেখে তিনি তার প্রতি মোহিত হয়েগেলেন । হেমচন্দ্রও বুঝতে পারলেন , ক্ষুদিরামের মধ্যে জ্বলন্ত এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কাজ করছে শরীরে দীপ্তি আছে । ক্ষুদিরাম হেমচন্দ্রের কাছ থেকে একটা রিভলবার চেয়েছিলেন । রিভলবার দিয়ে ব্রিটিশ মারতে হবে এই কথাই বলেছিলেন ।
এইভাবেই সেইদিন ভবিষ্যতের গুরু এবং শিষ্যের মিলন ঘটে গিয়েছিলো । হেমচন্দ্র বুঝতে পারলেন , ওই আগুন - শিখাটিকে ঠিক মতো তালিম করতে পারলে, যত্ন করতে পারলে , একদিন তা মহাপ্রলয় ঘটিয়ে দেবে । এই সময় ক্ষুদিরাম বসু সত্যেন বসুর সংস্পর্শে আসেন । সত্যেন বসু ছিলেন একজন বিশিষ্ট সংগঠক । তিনি গ্রামবাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে সাহসী তরুণ যুবকদের খোঁজ করতেন,খুঁজে খুঁজে বেরকরে তরুণদের তালিম করতেন ।
তাদের দিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করববার পরিকল্পনা করেন , দীর্ঘদিনের এমন ইচ্ছে ছিল তাঁর । ক্ষুদিরামকে দেখে তার খুব পছন্দ হল । তিনি বুঝতে পারলেন ক্ষুদিরামের মধ্যে দিয়ে তার ওই ইচ্ছা বা স্বপ্ন সফল হবে ।
কংসাবতী নদীর ওপারে ঘন দুর্গম জঙ্গলের মধ্যে একটি শিবের মন্দির, সেখানে অনেকে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে মনোস্কামনা পূর্ণ করবার জন্যে, ক্ষুদিরামও বেশ কয়েক দিন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলেন । তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন , যাতে তাঁর দেশ ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি পায় । ক্ষুদিরামের এই কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । চারপাশে বিষাক্ত সাপ জন্তু জানোয়ারের ভয় না করে ক্ষুদিরাম ধ্যানমগ্ন হয়ে শুয়ে ছিলেন মন্দিরে ।
সত্যেন বসু খবর পেলেন, মন্দিরে এসে হাজির হলেন । তিনি বুঝতে পারলেন ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণটি এসে গেছে । এই প্রহরটির জন্যই তিনি প্রতীক্ষা করছিলেন এতদিন । তিনি ক্ষুদিরামের চোখে চোখ রাখলেন । তারপর বিপ্লব মন্ত্রে দীক্ষা দেবার আগে তিনি ক্ষুদিরামকে জিজ্ঞাসা করলেন দেশের জন্য জীবন দিতে পারবিতো ? ক্ষুদিরাম দ্বিধাশূন্য ভাবে জবাব দিয়েছিলেন -
“ পারব বই কি,নিশ্চিত পারব ”।
এই ছোট্ট কথা টির মধ্যেই ক্ষুদিরামের দেশের জন্য ভালোবাসা,মমতা ও তেজস্বীতার প্রমাণ মেলে । এরপর থেকেই তিনি সাধারণ বাঙালীর জীবনযাপন ত্যাগ করে বিদ্রোহী জীবন গ্রহণ করে নিলেন ।
ক্ষুদিরামের যে স্বপ্ন দেখেছিলো তা সফল হল । শুরু হল তার নতুন জীবন - উপন্যাসের নতুন অধ্যায় । তিনি পরিণত হলেন গুপ্ত সমিতির এক সক্রিয় কর্মীতে ।
তারপর দিন কাটল প্রচণ্ড কর্মচঞ্চলতার মধ্যে । ক্ষুদিরামের ওপর গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । তাকে মেদিনীপুর থেকে তমলুকে যাতায়াত করতে হত । দিনের বেলা গেলে পুলিশের নজরে পড়ে যাবেন , তাই সমস্ত রাত পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পারা পার করতেন । শেষ অব্দি ক্ষুদিরামের এই নৈশ ভ্রমণের কথা পুলিশের কানে পৌঁছে গেল । ক্ষুদিরামকে সবসময় সতর্ক হয়ে থাকতে হতো ।
১৯০৫ সাল অবিভক্ত বঙ্গদেশকে দ্বিখণ্ডিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলো । সর্বত্র প্রতিবাদে মানুষ ফেটে পড়ল । বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে । ক্ষুদিরাম এই আন্দোলনে এক মহান সৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন ।
১৯০৬ সালে মেদিনীপুর জেলখানার প্রাঙ্গনে কৃষি এবং শিল্পমেলার আয়োজন করা হয়েছে । সেখানে ক্ষুদিরামের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হল । ‘ সোনার বাংলা ’ নামে একটি প্রচারপত্র বিলি করতে হবে । ক্ষুদিরাম পুস্তিকা বণ্টন করার কাজে লেগে পড়লেন । হঠাৎ পুলিশের নজরে পড়ে গেল ক্ষুদিরামের উপর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে গেলেন তিনি । তখন তাঁকে বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীদলের নির্দেশে ক্ষুদিরাম ধরা দিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হল । বলা হল , তিনি সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ।
ক্ষুদিরাম প্রথমদিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চাননি । তবে তিনি পরে আইনজীবীদের পরামর্শ শুনে মুক্তি পেলেন ।
ক্ষুদিরামের মুক্তিতে সমস্ত শহর জুড়ে বিজয়োৎসব শুরু হল । সমিতির কাজে অরবিন্দ সেই সময় মেদিনীপুরে এসেছিলেন । তিনি নিজে ক্ষুদিরামকে বুকে টেনে আশীর্বাদ করলেন । সকলে আনন্দে আত্মহার হয়ে উঠলেন ।
১৯০৭ সালে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ তার সহযোগী হেমচন্দ্র কানুনগোকে প্যারিসে নির্বাসনে থাকা একজন রাশিয়ান নিকোলাস সাফ্রানস্কি-এর কাছ থেকে বোমা তৈরির কায়দা শেখার জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন । বঙ্গ প্রদেশ ফেরার পর হেমচন্দ্র এবং বারীন্দ্র কুমার আবার দুজনের সহযোগিতায় ডগলাস কিংসফোর্ডকে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন । কিংসফোর্ড আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম ছিলেন, যার হাতে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং যুগান্তর এর অন্যান্য সম্পাদকদের মামলা চলছিল । যাঁদের তিনি কঠোর সাজা শুনিয়েছিলেন । যুগান্তর দ্বন্দ্বমূলক সম্পাদকীয় লিখে তার প্রতিক্রয়া জানায়, ফলে এব্যাপারে আরো পাঁচজন অভিযুক্ত হলে এই সংবাদপত্র ১৯০৮ সালে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় । এসমস্ত অভিযোগে সংবাদপত্রের প্রচার বৃদ্ধি পায় এবং এতে অনুশীলন সমিতির জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আদর্শ প্রচারের সহায়ক হয় ।শুক্লা সান্যালের মতে, বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ একটা আদর্শ হিসেবে প্রত্যক্ষ না-হলেও অঘোষিতভাবে বঙ্গ প্রদেশের জনতার সমর্থন আদায় করেছিল । যুগান্তর মামলার বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নেওয়ায় একজন বাঙালি ছেলে সুশীল সেনকে চাবুক মারার সাজা দেওয়ায় কিংসফোর্ড সাহেবের জাতীয়তাবাদীদের কাছে কুখ্যাত ছিল । তিনি আলিপুর প্রেসিডেন্সি আদালতে মুখ্য হাকিম হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই নবীন রাজনৈতিক কর্মীদের কঠোর ও নিষ্ঠুর বাক্য প্রয়োগ করতেন । তিনি ওইসব কর্মীদের শারীরিক নির্যাতনের সাজা দিতেন ।
হেমচন্দ্রের তৈরি করা বই বোমা দিয়ে কিংসফোর্ডকে হত্যার প্রথম প্রচেষ্টা করা হয় । একটা ক্যাডবেরি কোকোর খালি টিনে এক পাউন্ড অ্যাসিড এবং তিনটে ডেটোনেটর । এবার এটা হার্বার্ট ব্রুমএর কমেন্টারিজ অন দ্য কমন ল বইয়ের ফাঁপা অংশে প্যাক করা হয়েছিল এবং বাদামি কাগজ দিয়ে মুড়ে নবীন বিপ্লবী পরেশ মল্লিক কিংসফোর্ডের বাড়িতে দিয়ে আসেন । কিংসফোর্ড প্যাকেটটা না-খুলে পরে দেখবেন বলে তার সেলফে রেখে দেন ।
১৯০৮ সালে মার্চে বিচারকের নিরাপত্তার ভয়ে, কিংসফোর্ডের পদোন্নতি করে সরকার তাকে বিহারের মুজাফফরপুর জেলার বিচারপতি হিসেবে বদলি করেন । তার সঙ্গে যায় আসবাবপত্র, লাইব্রেরি এবং বই বোমা ।
অনুশীলন সমিতি কিংসফোর্ডকে হত্যা করার প্রচেষ্টা জারি রেখেছিল । এপ্রিলে দুই সদস্যের একটা পরিদর্শক দল মুজাফফরপুর সফর করে, সেখানে যুক্ত ছিলেন প্রফুল্ল চাকি । প্রফুল্ল চাকি মুজাফফরপুরে ফিরেছিলেন একটা নতুন ছেলেকে নিয়ে,যার নাম ক্ষুদিরাম বসু । তাদের ফিরে আসায় তাদের বোমা দিয়েছিলেন হেমচন্দ্র,যেগুলো বানানো হয়ছিল ৬ আউন্স ডিনামাইট দিয়ে , একটা বিস্ফোরক এবং কালো পাউডার ফিউজ ও দিয়েছিলেন ।
অরবিন্দ ঘোষ,বারীন্দ্র ঘোষ এবং তাদের সহযোগীদের কাজকর্মে পুলিশের সন্দেহ হতে থাকে । কলকাতা পুলিশ কিংসফোর্ডের জীবন বাঁচানোর জন্যে খুব সচেতন হয়ে ওঠে । কমিশনার এফ এল হলিডে মুজাফফরপুর পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের উপেক্ষার বদলে সতর্ক হয়েছিলেন । যাইহোক, চারজন লোককে ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্যে ব্যবস্থা করা হয় ।
ইতিমধ্যে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি নতুন নাম ধারণ করে যথাক্রমে হরেণ সরকার ও দীনেশ চন্দ্র রায় হয়েছেন, এবং কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এক দাতব্য সরাইখানায় (ধর্মশালা) তারা বাসা নিয়ে আশ্রয় নেন । তাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলোতে ওই বিপ্লবীদ্বয় তাদের লক্ষ্যের কার্যকলাপ এবং দৈনন্দিন রুটিনের ওপর নজরদারি করতেন । দুই বিপ্লবী সফলভাবে তিন সপ্তাহের ওপর তাদের পরিচয় গোপন রাখতে পেরেছিল । মুজাফফরপুরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আর্মস্ট্রঙের কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে সিআইডি অফিসার কলকাতায় ফিরে এসেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে, বিপ্লবীদ্বয় এখানে পৌঁছায়নি ।
২৯ শে এপ্রিল সন্ধ্যায় ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকি তাদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যে নির্দিষ্ট জায়গামতো হাজির হয়েছিল । স্কুল ছাত্রের ভান করে মুজাফফরপুর পার্কে তারা সমীক্ষা করেছিলেন যে, ব্রিটিশ ক্লাবের উল্টো দিকে, যেখানে কিংসফোর্ড ঘনঘন আসেন । একজন কনস্টেবল তাদের দেখেছিল ।
প্রিঙ্গল কেনেডি নামে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের মেয়ে এবং স্ত্রীর সঙ্গে কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী ব্রিজ খেলছিলেন । তারা রাত ৮.৩০ নাগাদ বাড়ি ফিরবে বলে মনস্থ করেন । কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী একটা গাড়িতে ছিলেন যেটা কেনেডি এবং তার পরিবারের গাড়ির মতোই দেখতে ছিল । কেনেডি মহিলাগণ কিংসফোর্ডের বাড়ির চত্বর থেকেই যাচ্ছিলেন । যখন তাদের গাড়ি ওই চত্বরের পূর্ব ফটকে পৌঁছায়, ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি গাড়িটার দিকে দৌড়ে যান এবং গাড়িতে বোমা ছোড়েন । একট প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং গাড়িটা সঙ্গে সঙ্গে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল এবং কেনেডি মহিলাগণ ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন । মিস কেনেডি এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান এবং মিসেস কেনেডি গুরুতর আঘাতের ফলে ২ রা মে প্রয়াত হন ।
ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকি নিজেদের রাস্তায় পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন । মাঝ রাত্রিরের মধ্যে সারা শহর ঘটনাটা জেনে গিয়েছিল খবর ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে এবং খুব সকাল থেকেই সমস্ত রাস্তায় পুলিশের টহল শুরু হলো সমস্ত রেলস্টেশনে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল যাতে প্রত্যেক যাত্রীর ওপর নজর রাখা যায় । সকাল পর্যন্ত ক্ষুদিরাম ২৫ মাইল পায়ে হেঁটে ওয়াইনি নামে এক স্টেশনে পৌঁছান । তারপর তিনি যখন তিনি একটা চায়ের দোকানে এক গ্লাস জল চেয়েছিলেন, তখন তিনি ফতে সিং এবং শিউ প্রসাদ সিং নামে দুজন কনস্টেবলের মুখোমুখি হন, যারা তার ময়লা পা এবং বিধ্বস্ত ও ঘর্মাক্ত চেহারা দেখে কিছু সন্দেহ করেছিল । কয়েকটা প্রশ্ন করবার পর তাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায় এবং তারা ক্ষুদিরামকে আটক করার সিদ্ধান্ত নেয় । ক্ষুদিরাম তাদের দুজনের সঙ্গে সংগ্রাম শুরু করলে তখন তার সাথে থাকা দুটো রিভলভারের মধ্যে একটা পড়ে যায় আর অন্য রিভলভারটা দিয়ে কনস্টেবলদেরকে গুলি করতে উদ্যত হওয়ার আগেই কনস্টেবলদের একজন ক্ষুদিরামকে পিছন দিক থেকে জাপটে মজবুত করে জড়িয়ে ধরে ফেলে । ছোটো এবং হালকা চেহারার ক্ষুদিরামের পক্ষে নিজেকে বাঁচানোর বা ছাড়ানোর কোনো উপায় ছিলনা । তার কাছে ৩৭ রাউন্ড গোলাগুলি, ৩০ টাকা নগদ, একটা রেলপথের মানচিত্র এবং একপাতা রেলের সময়সারণি ছিল । ক্ষুদিরাম চিরকালের জন্যে ধরা পড়ে গেলেন! ওয়াইনি রেল স্টেশনটির নাম বর্তমানে নাম বদল করে হয়েছে ক্ষুদিরাম বোস পুসা স্টেশন ।
অন্যদিকে প্রফুল্ল কয়েক ঘণ্টা কষ্ট করে অনেকটা হেঁটেছিলেন । দিনের মাঝামাঝি ত্রিগুণাচরণ ঘোষ নামে এক নাগরিক লক্ষ করলেন যে, একজন যুবক তার দিকেই আসছেন । তিনি বোমা বিস্ফোরণে ভীত হয়েছেন এবং অনুভব করেছেন যে, প্রফুল্ল চাকি হলেন সেই অন্য বিপ্লবী । ত্রিগুণাচরণ ঘোষ তার জীবন রক্ষা করে তাকে তার বাড়িতে বিশ্রাম দিয়ে বাঁচাতে চাইছেন । তিনি সেই রাতেই প্রফুল্লর কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা করেছিলেন । তিনি সমস্তিপুর থেকে মোকামাঘাট যাওয়ার এবং পরবর্তী যাত্রায় হাওড়া যাওয়ার ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করেন । ট্রেনের একই বগিতে ব্রিটিশ পুলিশের একজন সব-ইন্সপেক্টর নন্দলাল ব্যানার্জি সফর করছিলেন । একটা কথোপকথনে তিনি ধরে ফেলেন যে, প্রফুল্লই হচ্ছেন সেই অন্য বিপ্লবী । শিমুরিঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্ল যখন জল খাওয়ার জন্যে ট্রেন থেকে নামেন, তখন মিস্টার ব্যানার্জি মুজফফরপুর থানায় একটা টেলিগ্রাম পাঠান । মোকামাঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্লকে পাকড়াও করার চেষ্টা করেন মিস্টার ব্যানার্জি । প্রফুল্ল তার কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে নিজের মতো লড়াই করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষে যখন দেখেন যে, রিভলভারে একটামাত্র গুলি আছে, তখন তিনি নিজের মুখের মধ্যে গুলি করে গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন ।
ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয় ।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল । মহাত্মা গান্ধি ক্ষুদিরামকে সর্মথন তো করেনইনি, ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিংসাকে নিন্দা করেন, দুজন নিরপরাধ মহিলার মৃত্যুতে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন । তিনি বলেন যে, "ভারতীয় জনগণ এই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবেনা । যাইহোক, বাল গঙ্গাধর তিলক, তার সংবাদপত্র কেশরীতে দুজন নবীন যুবককে সমর্থন করে আওয়াজ তোলেন অবিলম্বে স্বরাজ চাই । যার ফল হয় অবিলম্বে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার দেশদ্রোহিতার অপরাধে তিলককে গ্রেপ্তার করে ।
হাতে হাতকড়ি লাগানো ক্ষুদিরামকে পয়লা মে মুজফফরপুর থেকে আনা হয় । পুরো শহর থানায় ভিড় করেছিল একদল সশস্ত্র পুলিশকর্মীর ঘিরে থাকা একটা কিশোর ছেলেকে শুধু একপলক দেখার জন্যে । জেলাশাসক মিস্টার উডম্যানের বাড়িতে ক্ষুদিরামকে আনা হয়েছিল ।
পরের দিন, অর্থাৎ ১৯০৮ সালে ২ মে, ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান লিখেছিল -
একটা ছেলেকে দেখার জন্যে রেল স্টেশনে ভিড় জমে যায় । ১৮ বছরের এক কিশোর হলেও তাঁকে রীতিমতো দৃঢ় দেখাচ্ছিল । বাইরে তার জন্যেই রাখা এক চারচাকার খোলা গাড়িতে উঠতে প্রথম শ্রেণীর এক রেল কামরা থেকে বেরিয়ে সে হেঁটে আসছিল, এক উৎফুল্ল কিশোরের মতো, যে কোনো উদ্বেগ জানেনা....গাড়িতে নির্দিষ্ট আসনে বসার সময় ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠল 'বন্দেমাতরম্'।"
১০ ই আগস্ট ক্ষুদিরাম আইনজীবী সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছিলেন -
‘ রাজপুত নারীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়া জওহরব্রত পালন করিত, আমিও তেমন নির্ভয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিব । আগামীকাল আমি ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাদ খাইয়া যাইতে চাই ।’
১৯০৮ সালের ১১ ই অগাস্ট ভোর ছটা , সব আয়োজন শেষ হয়েছে । ক্ষুদিরামকে স্নান করানো হল । শেষ ইচ্ছে আছে কিনা জানতে চাওয়া হল । ক্ষুদিরাম হাসলেন বড়ো করুণ ছিলো সেই হাসি । দেশের স্বাধীনতা ছাড়া আর কী ইচ্ছে আছে আমার ? শেষবারের মতো ক্ষুদিরাম বললেন বন্দেমাতরম । চতুর্দিকে প্রতিধ্বনিত হল বন্দেমাতরম ।
ফাঁসির মঞ্চে ওঠার সময়ও ক্ষুদিরামের মুখে লেগে ছিল হাসি । যেন দেশের জন্য প্রাণ দিতে পেরে তিনি দারুন খুশি । ব্রিটিশ সরকারের চারজন পুলিশ তাঁকে ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে আসে । ফাঁসি মঞ্চের সামনে থাকা আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে হাসেন ক্ষুদিরাম । গলায় ফাঁসির দড়ি পরানোর পর জল্লাদকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন -
‘ আচ্ছা, ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?’
শহিদ ক্ষুদিরামের জীবনের শেষ কথা ছিল এটাই । জল্লাদ বিস্ময় হয়ে আর কিছু বলতে পারেননি । হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ জেলারও ।
১৯০৮ সালের ১১ ই অগাস্ট মুজাফরপুর ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসি হয় ওই মহান বিপ্লবীর, তখন খাতায় কলমে তাঁর বয়স মাত্র ১৮ বছর । তারুণ্যেই যে প্রাণকে ঝরে যেতে হলো, তাঁর শরীরের মৃত্যু হলেও অমর হয়ে থেকে গেলেন প্রতিটি ভারতবাসীর মনের মণিকোঠায় ।
ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয় মুজফফপুর সংশোধনাগারে । বর্তমানে সেই কারাগারের নাম বদলে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর নামেই নামকরণ করা হয়েছে ।
বাংলার কাব্যে , সাহিত্যে , সঙ্গীতে ও ইতিহাসের পাতায় এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরাম মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে আছেন । থাকবেন চিরদিন ।
অগ্নিশিশু ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান ভারতের বিপ্লবীদের মনে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল । তাঁর প্রদর্শিত পথে অনেক বিপ্লবী দেশমাতৃকার চরণতলে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ।
No comments