Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির: ইতিহাস এবং বর্তমান

ভারতীয় ধর্মে, মৃত পূর্ব পুরুষের আত্মার সদ্গতির জন্য গয়াতে পিণ্ড দানের কথা বলা হয়। এই গয়ার মন্দিরের পৌরাণিক ইতিহাস কি ?বিহারে অবস্থিত গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির। বর্তমানে অবস্থিত এ মন্দিরটি ইন্দোরের রানী অহল্যা বাই হোলকার ১৭৬৬ সালে তৈরি…

 




ভারতীয় ধর্মে, মৃত পূর্ব পুরুষের আত্মার সদ্গতির জন্য গয়াতে পিণ্ড দানের কথা বলা হয়। এই গয়ার মন্দিরের পৌরাণিক ইতিহাস কি ?

বিহারে অবস্থিত গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির। 

বর্তমানে অবস্থিত এ মন্দিরটি ইন্দোরের রানী অহল্যা বাই হোলকার ১৭৬৬ সালে তৈরি করেন। এটি ফল্গু নদীর তীরে অবস্থিত। এ মন্দিরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এখানে বিষ্ণুর পদচিহ্ন আছে যা কালো কষ্টি পাথরে সংরক্ষিত। ভগবানের এই পায়ের ছাপের জন্য এখানকার মন্দিরের নাম হয় বিষ্ণুপদ মন্দির। এ মন্দিরে রামানুচার্য, মাধবাচার্য , শঙ্করদেব, শ্রীচৈতন্যের মত মহর্ষিরা পরিদর্শন করেছেন। 


এই মন্দির কে ঘিরে রয়েছে এক বিশাল কাহিনী।

এই মন্দির গয়াতে অবস্থিত। গয়া নামটি এসেছে গয়াসুরের নামে। গয়া অসুর নামে এক রাক্ষসকে শ্রীবিষ্ণু একবার আশীর্বাদ করেছিলেন যে তাঁর নাম অনুসারেই সবচেয়ে পবিত্র স্থানের নামকরণ হবে। পুরাকালে গয়াসুর নামে এই অসুর বিষ্ণুর উপাসনা শুরু করে। তার উদ্দেশ্য ছিল অমরত্ব লাভ করা এবং স্বর্গ দখল করা। সে এই জন্য তুখোড় তপস্যা শুরু করে।

তপস্যা এত দাপটে করতে থাকে যে বিষ্ণু আর স্থির থাকতে পারেন না- তিনি ছুটে যান গয়ের কাছে। গয় বিষ্ণুর কাছে বর চান যেন অমর হতে পারেন। তখন বিষ্ণু বলেন-

" হে গয়- আমার অবতারগনও জন্ম নেয় এবং এই পৃথিবী তেই তাদের মৃত্যু হয়। তুমি অন্য কোন বর চাও। এই পৃথিবীর সৃষ্টির কারন আমি। আমি তোমাকে পৃথিবীর নিয়মের ব্যতিক্রম কোন বর দিতে পারবো না। তুমি অন্য কিছু চাও।"

তখন গয় মহা চিন্তায় পড়ে যায়। শেষে সে বলে-

" হে পরম বিষ্ণু- আমাকে এমন এক দেহ দান করুন যেন আমার দেহ স্পর্শ না করে এই পৃথিবীর কারো স্বর্গ লোক প্রাপ্তি না হয়।"

তখন ভগবান বিষ্ণু বললেন-

"এ জন্য আমাকে যজ্ঞ করতে হবে- এবং তোমাকে মৃত্যু বরন করে দেহ খানা দিতে হবে।" 

এ শুনে সদাহাস্যময় গয় নিজের দেহ দান করতে প্রস্তুত হল, কিন্তু সে এত বিরাট ছিল যে বিষ্ণু কোথাও দাড়াতে পারছিলেন না। তখন গয় নিজের মাথা পেতে দেয়- ভগবান বিষ্ণু সেই মাথায় পা দিয়ে অত্র এলাকাকে মহা পবিত্র করে দেন এবং বর দেন যে, এই খানে পিন্ড দান না করে কোন দেব দানব বা মানুষের আত্মা স্বর্গলোকে প্রবেশ করবে না। পুরাণ অনুযায়ী, গয়াতে অবস্থিত বিষ্ণুপদ মন্দিরে পুজো করে মৃত আত্মীয়ের শেষকৃত্যের পর ছাই গয়ার গঙ্গায় বিসর্জন করলে সেই আত্মীয় মুক্তিলাভ করবেন বলে বিষ্ণু নির্দেশ দেন। 

 ফল্গু নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির। রামায়নে লেখা আছে এই ফল্গু নদী পূর্বে প্রবাহমান ছিল। রাজা দশরথের মৃত্যুর পর এখানে শ্রী শ্রী রামের অনুপস্থিতিতে সীতাদেবী দশরথের পিন্ড দেন। এখানে এই পিন্ড দানের সাক্ষী ছিল এই ফল্গু নদী, অক্ষয় বট,ও তুলসী কে সাক্ষী মানেন।

শ্রীরাম ফিরে এলে সীতা দেবী পিন্ড দানের কথা জানান এবং বলেন যে এর সাক্ষী ও আছে। এই সময় অক্ষয় বট সত্য স্বীকার করেন, কিন্তু ফল্গু নদী ও তুলসী রামের পায়ের স্পর্শ পাবার আশায় মিথ্যে সাক্ষী দেন। এতে সীতা দেবী অভিশাপ দেন। এর পর থেকে এই ফল্গু নদীর জল যায় শুকিয়ে আর তুলসি যেখানে সেখানে জন্মায়। এমন কি কুকুর প্রস্রাব করলেও সেখানে জন্মায়। এই ফল্গু নদী এখন ও শুকনো। এখানে মাটির দুই হাত খুড়লেই জল বের হয়।

আবার, পুরাণ অনুযায়ী, গয়ায় বাবা দশরথের মৃত্যুর পর পিণ্ডদান করেছিলেন স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র। বেদে বর্ণিত আছে যে মানুষকে প্রধানত তিনটি ঋণ শোধ করতে হয়। 

এই তিনটি ঋণ হল পিতৃঋণ, দেবঋণ এহং ঋষিঋণ।

 এটাও শোনা যায় যে, যেখানে ভগবান বিষ্ণু পা দিয়ে প্রথম যজ্ঞ স্থান নির্ধারন করেন সেখানে ভগবানের ডান পায়ের একটা ছাপ পড়ে যায়। সেই ছাপে এখন পিণ্ড দেয়া হয়। এখানে পিন্ড না দিলে মানব আত্মা মুক্ত হয় না।

 হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মৃত্যুর পরে আত্মার শান্তির জন্য পিণ্ডদানের প্রথা প্রচলিত আছে। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মাকে মুক্তি দিতে পিণ্ডদান করা অবশ্যই প্রয়োজন বলে মনে করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী পিণ্ডদান করলে আত্মা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে এবং আর জন্ম নিতে হবে না, অর্থাত্‍ কারোর নামে পিণ্ডদান করা হলে জন্ম ও মৃত্যুর এই চক্র থেকে সেই আত্মা চিরতরে মুক্তি লাভ করবে।

অনেকে আবার মনে করেন যে অনেক অতৃপ্ত আত্মা মৃত্যুর পরেও এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে পারে না। পিণ্ডদান করা হলে সেই আত্মার মোক্ষলাভ হবে এবং পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অমৃতলোকের উদ্দেশ্যে চিরতরে যাত্রা করবে সে। পিতৃপক্ষে পিণ্ডদান করার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। মনে করা হয় পিতৃপক্ষে আত্মারা উত্তরপুরুষের হাত থেকে জল পান করতে পৃথিবীতে নেমে আসে। গঙ্গা নদীতেই সাধারণত পিণ্ড দান করা হয়ে থাকে। পিণ্ডদান করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হল গয়া।

 গয়ায় গঙ্গার ধারে সারা বছর পিণ্ডদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে পিণ্ডদান করার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় বর্ণিত আছে। পিতৃপক্ষই পিণ্ডদান করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময় প্রতি বছর বহু মানুষ গয়ায় পূর্ব পুরুষের নামে পিণ্ড দিতে যান। পিণ্ডদানের প্রক্রিয়াটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। স্নান এবং সংকল্প, পিণ্ডদান এবং তর্পণ। প্রথমে গঙ্গায় স্নান সেরে তারপর প্রয়াত পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে পুজো সমাপন করতে হয়। এরপর পাঁচ দেবতা এবং নবগ্রহের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য দিয়ে তর্পণ করতে হয়। অনেকে পিতৃপক্ষ চলাকালীন জল এবং তিল বীজ দিয়ে তর্পণ করেন।।

(তথ্য এবং চিত্র: সংগৃহীত)

No comments