Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

লক্ষ্মীপুজোয় মিলছে না ধানের শিষ

বন্যায় দু’লক্ষ হেক্টর আমন জমির ক্ষতি।বন্যার জেরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আমন চাষ কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। আশ্বিনের শেষে কার্তিক মাসের শুরুতে সবুজের বদলে চারদিকে ধূ-ধূ মাঠ। জেলায় ২লক্ষ ১০হাজার ৬৫৬হেক্টর আমন জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। ক্…




 

বন্যায় দু’লক্ষ হেক্টর আমন জমির ক্ষতি।বন্যার জেরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আমন চাষ কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। আশ্বিনের শেষে কার্তিক মাসের শুরুতে সবুজের বদলে চারদিকে ধূ-ধূ মাঠ। জেলায় ২লক্ষ ১০হাজার ৬৫৬হেক্টর আমন জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৫১০কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেই এনিয়ে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে নবান্নকে। একই সঙ্গে জেলাশাসক এনিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৌজার গেজেট নোটিফিকেশনও করেছেন। জেলায় চাষে এরকম বিপর্যয় সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর জন্য ধানের শিষটুকুও মিলছে না। বেশিরভাগ ব্লকে একশো শতাংশ জমি ক্ষতির কবলে পড়েছে। সবুজের চিহ্নটুকু নেই। তাই ধানের ছড়া ছাড়াই এবার পূর্ব মেদিনীপুরের বেশিরভাগ জায়গায় লক্ষ্মীপুজো হবে। 

পটাশপুর-১ব্লকের অমর্ষি-১গ্রাম পঞ্চায়েতের মনসাতলা আমরা ক’জন ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছর মনসাতলায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হয়। এবার পুজো দু’বছরে পড়ল। পুজো উপলক্ষে মেলা বসে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এবার বন্যায় ওই এলাকায় কোথাও আমন চাষ নেই। সব ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বাজেট কাটছাঁট করে পুজোর সিদ্ধান্ত নিলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা মেলা বন্ধ। ক্লাব সভাপতি প্রবীরকুমার আদক বলেন, মায়ের কাছে আমন ধানের শিষ দেওয়ার মতো উপায় নেই। খেজুরি-১ব্লকের লাখি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বেগুনাবাড়ি হাইস্কুল ময়দানে লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ঘিরে প্রতিযোগিতা হয়। এই উপলক্ষে মেলা বসে। একশোর বেশি প্রতিমা নিয়ে এই প্রতিযোগিতা জেলার অন্যতম আকর্ষণ। এবার বন্যায় সবকিছু তছনছ হয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা ওই প্রতিযোগিতা এবং মেলা এবছর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিমল জানা জানিয়েছেন।এবছর জেলায় ২লক্ষ ৪৫হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। তারমধ্যে ২লক্ষ ১০হাজার ৬৫৬হেক্টর আমন জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। গত ৮অক্টোবর জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বন্যায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৩১৯৯টি মৌজার মধ্যে ২৮১৯টি মৌজায় আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এর অর্থ সরকারিভাবে ওইসব মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত বলে সিলমোহর পড়ল। তমলুক ও হলদিয়া মহকুমায় ১২০৯টি, কাঁথি মহকুমায় ৮৮৭টি এবং এগরা মহকুমায় ৭২৩টি মৌজা সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, আমন চাষে মোট ১৫১০কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারমধ্যে পটাশপুর-১ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ ১০৪কোটি ৭৬লক্ষ টাকা, পটাশপুর-২ব্লকে ১১২কোটি ৬৭লক্ষ, ভগবানপুর-১ব্লকে ৯৪কোটি ৬৭লক্ষ, ভগবানপুর-২ব্লকে ৮৯কোটি ২৪লক্ষ, এগরা-১ব্লকে ১১৭কোটি ১৭লক্ষ, এগরা-২ব্লকে ৮৪কোটি ৪৭লক্ষ, পাঁশকুড়া ব্লকে ৬৯কোটি ৮৪লক্ষ, ময়না ব্লকে ৩৪কোটি ২৯লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। একইভাবে নন্দীগ্রাম-১ ও ২, খেজুরি-১ ও ২, কাঁথি-১ ও ৩ এবং দেশপ্রাণ, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার, মহিষাদল, সুতাহাটা, তমলুক, কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী সহ প্রতিটি ব্লকে আমন চাষে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

একইভাবে ফুল, সব্জি এবং পান চাষে প্রায় ১৯০কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মোট ৫১০০হেক্টর জমিতে ফুল, সব্জি, পান প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও ভগবানপুর-১ ও ২ব্লকের অনেক গ্রাম প্লাবিত। নিম্নচাপের জেরে দু’দিনের বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়েছে। বাজকুল থেকে এগরাগামী রাজ্য সড়কের উপর বিভিন্ন জায়গায় এখনও হাঁটুসমান জল। ভগবানপুর-১ব্লকের অন্তর্গত বিভীষণপুর নেতাজি সঙ্ঘ, বিভীষণপুর হসপিটাল স্ট্যান্ড লক্ষ্মীপুজো কমিটি, পূর্ব শশুড়িয়া লক্ষ্মীপুজো কমিটি এবার অনাড়ম্বরভাবেই লক্ষ্মীপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওইসব এলাকা এখনও জলমগ্ন। তার উপর আমন চাষ একেবারে বেশ। জেলা কৃষিদপ্তরের সহ অধিকর্তা(শস্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, দু’লক্ষ হেক্টরের বেশি আমন চাষ একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৫১০কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্মীপুজোর আগে জেলার চাষিদের মন ভালো নেই। 

No comments