জোতদার- জমিদারদের থেকে বেনাম জমি উদ্ধারের লড়াইয়ে, মজুরির দাবি সহ তেভাগা আন্দোলন সংগ্রামের লড়াকু সেনানি কমরেড জ্যোতিন্দ্র জানার জীবনাবসান হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০৫ বছর। খেজুরি১ ব্লকের, কামারদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশগোড়…
জোতদার- জমিদারদের থেকে বেনাম জমি উদ্ধারের লড়াইয়ে, মজুরির দাবি সহ তেভাগা আন্দোলন সংগ্রামের লড়াকু সেনানি কমরেড জ্যোতিন্দ্র জানার জীবনাবসান হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০৫ বছর। খেজুরি১ ব্লকের, কামারদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশগোড়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম।
বিগত পাঁচ বছর ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।
ষাটের দশকে উত্তাল গণআন্দোলনের দিনগুলিতে সারা রাজ্যের সাথে প্রত্যন্ত এলাকার খেজুরি তে আন্দোলনের তীব্রতা যখন ছড়িয়ে পড়ে,সেইসময়ের আন্দোলনের সঙ্গে বাঁশগোড়া গ্রামের খুবই দরিদ্র পরিবারের কালো ছিপছিপে এক যুবক হাতে লাল ঝান্ডা নিয়ে মাঠে, ময়দানে গরীব মেহনতী মানুষকে জড়ো করার কাজে যুক্ত হন। চোখেমুখে জোত্দ্দার- জমিদারদের অত্যাচার ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঘৃণা নিয়ে সাহসের সাথে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানে মানুষকে জড়ো করে লড়াই শুরু করেন। "নাঙ্গল- যার জমি তার" স্লোগানে স্লোগানে মাঠ-ঘাট মুখরিত করে বেনাম জমি উদ্ধার, বর্গা জমিতে চাষির অধিকার রক্ষা, আর সারাদিন খাটার পর ন্যায্য মূল্যের দাবিতে লড়াইয়ের সামনে থাকা কমরেড জ্যোতিন্দ্র জানা এলাকার মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেন। তিনি কৃষক- ক্ষেতমজুরের নেতা ছিলেন।তদানীন্তন সময়ে প্রবাদপ্রতিম স্বাধীনতা সংগ্রামী কমিউনিস্ট নেতা কমরেড সুকুমার সেন গুপ্ত খেজুরি তে নেতৃত্ব দিয়েআন্দোলন গড়ে তোলার কাজে আসার ফলে একেরপর অঞ্চল সহ সমগ্র খেজুরি এলাকায় লাল ঝাণ্ডার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। খেজুরির সংগ্রামী লড়াকু নেতা কুমেদ পাহাড়ি, হরি মণ্ডল ,ব্যোমকেশ ঘোষ,জহরলাল পড়িয়া, প্রশান্ত মাইতি, দেবেন্দ্রনাথ শীট, বারিদবরণ রায় প্রমূখ কমিউনিস্ট নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন কমরেড জ্যেতিন্দ্র জানা। শুরু হয় আন্দোলনের এক নতুন অধ্যায়। খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি জোত্দ্দার জমিদারদের কাছে মাথা নত করেননি। খাদ্যাভাবে মানুষ যখন জর্জরিত, ভিক্ষাবৃত্তি, সাধারণ লতানো গাছ, পাতা, শাক সবজি খেয়ে যখন জীবন ধারণ করছেন, সেই সময় কালে জ্যোতিন্দ্র জানা এলাকার মানুষকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে লড়াই করেন। তিনি গ্রামের মানুষকে বুঝাতেন, দান অনুদান নয়, ভিক্ষাবৃত্তি নয়, আমাদের ন্যায্য অধিকার আমাদের কেড়ে নিতে হবে। সে লড়াই থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পিছিয়ে আসেন নি। এমনকি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী থাকলেও এই বিধানসভা নির্বাচনে তার বাড়িতে যখন নির্বাচনী অফিসার, কর্মীরা ভোট নিতেএসেছিলেন তখন তিনি ,তাদের সামনে দ্বিধাহীনচিত্তে বলে দেন আমি কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্ন ভোট দেবো এবং সেই মতো তিনি তাঁর দুর্বল শরীর নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে জীবনের শেষ ভোটটি দিয়ে যান। তাঁর আত্মত্যাগ , সাধারন সহজ,সরল, জীবনযাপন, মানুষের কাছে খুবই শ্রদ্ধার ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।১৯১৬ সালে খুবই দরিদ্র পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।দারিদ্রতার জন্য লেখাপড়া তেমন করতে না পারলেও তিনি কিন্তু একজন রাজনৈতিক সচেতন নিষ্ঠাবান কর্মী ছিলেন। অসুস্থতার জন্য তিনি পার্টির সদস্য পদ নবীকরণ করতে পারেননি। এদিন তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে এলাকার গরীব সাধারন মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
সি,পি,আই(এম)রাজ্য কমিটির সদস্য হিমাংশু দাস জেলা কমিটির সদস্য যাদবেন্দ্র সাহু হেঁড়িয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক গোকুল ঘোড়াই শোক প্রকাশ করেন ও তাঁর পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এই নির্বাচনের সময়ে , রাজ্য নেতা তথা
খেজুরি বিধানসভার প্রার্থী উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কথা বলেন, কান্নায় ভেঙে পড়া কমরেড কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সান্তনা দেন। এলাকার পার্টি নেতৃত্ব প্রবোধ মাইতি, সুবল সামন্ত, বিষ্ণুপদ কামিলা প্রমূখ নেতৃত্বগণ তাঁর দেহে পার্টির লাল পতাকাও ফুলমালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় সত্বে ও বহু মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। তাঁর তিন পুত্র ও এক কন্যা বর্তমান।
।।কমরেড জ্যোতিন্দ্র জানা লাল সেলাম কমরেড জ্যোতিন্দ্র জানা অমর রহে।।
No comments