Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অলিম্পিক নিয়ে এত লাফালাফি বন্ধ হোক - রোহিত

স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছিলেন, গীতা পড়ার চেয়ে ফুটবল খেলা ঢের ভালো। এই বিবেকানন্দ আজ আমাদের প্রত্যেকের ড্রইংরুমে আশ্রয় পেলেও তার কথাগুলো আমাদের কারোরই মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। যদি পারত তাহলে আমাদের এই করুণ পরিস্থিতি আজ হতো ন…

 






স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছিলেন, গীতা পড়ার চেয়ে ফুটবল খেলা ঢের ভালো। এই বিবেকানন্দ আজ আমাদের প্রত্যেকের ড্রইংরুমে আশ্রয় পেলেও তার কথাগুলো আমাদের কারোরই মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। যদি পারত তাহলে আমাদের এই করুণ পরিস্থিতি আজ হতো না...


আমাদের দেশের স্কুল গুলোতে,সপ্তাহে একটা শারীর শিক্ষা ক্লাস আর বছরে মাত্র একটা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের গার্জিয়ানরা বেছে বেছে বিকেলবেলাতেই প্রাইভেট টিউশন রাখেন। কোন বাচ্চার কোন খেলার প্রতি ন্যাক থাকলে তাকে পড়াশোনার দোহাই দিয়ে তার মনঃসংযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ধরেই নেওয়া হয়, খেলাধুলা করলেই পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাবে। আজ্ঞে না, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। খেলোয়াড়রাও মেধাবী হয় এবং অন্য যেকোনো দশটা ছেলে মেয়ের চেয়ে যথেষ্ট বেশি মেধাবী হতে পারে। খেলাধুলা করলে সুষ্ঠু শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি অভূতপূর্বভাবে সুষ্ঠু মানসিক বিকাশও হয়। সমস্যা খেলাধুলা নিয়ে না, সমস্যা আমাদের ঠুনকো চিন্তাভাবনা নিয়ে..


আমাদের এই সমাজে কেউ ভালো ছাত্র হলে তাকে ভালো ছেলে বা ভালো মেয়ে বলা হয়। অথচ কেউ ভালো খেলোয়াড় হলে ধরেই নেওয়া হয় সেই ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার কিংবা সেই মেয়ে নষ্ট চরিত্রের। এইসব হার্ডেল পার করেও যদি কোন ছেলে বা মেয়ে স্পোর্টসকে কেরিয়ার হিসাবে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই তাহলে তার কপালে নিশ্চিত ভোগান্তি। তার বয়স আঠারো পার হতে না হতেই প্রতিনিয়ত সবার কাছ থেকে শুনতে হয় -"কি হলো এত খেলাধুলা করে ? একটা চাকরি তো জোটাতে পারলি না..." আজ্ঞে,এই পৃথিবীতে সবাই চাকরি করে না। পড়াশোনা শেখা প্রত্যেকটা ছেলে মেয়ে চাকরি পায় না। চাকরি ছাড়াও সৎপথে উপার্জনের অনেক পথ খোলা আছে। ভালো মানুষ হওয়াটা জরুরী...


আমাদের এই সমাজ, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর একটা ডাক্তার হতে চাওয়া ছেলেকে ছয় থেকে সাত বছর সময় দেয়। একজন ইঞ্জিনিয়ারকে ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়ার জন্য কমপক্ষে পাঁচ বছর সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষক হতে যাওয়া ছেলেমেয়ে গুলোও আট-দশ বছর সময় পায়। উকিল, টেকনিশিয়ান, পাইলট, ইত্যাদি পেশায় নিযুক্ত হওয়ার জন্য নিদেনপক্ষে এই সমাজ থেকে বছর চারেক সময় পাওয়া যায়। অথচ একজন খেলোয়াড় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরেই মোটা মাইনের চাকরি পেয়ে যাবে, এই আশায় সবাই বসে থাকে। তারপর রুঢ় বাস্তবের ধাক্কায় যখন তাদের এই অলীক স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় তখন তীর্যক বাক্যবাণে সেই খেলুড়ে ছেলে বা মেয়েটার বেঁচে থাকাই দুষ্কর করে দেয় এই সমাজ ব্যবস্থা ...


আমরা একটা গুন্ডাকে এম.এল.এ মেনে নিতে পারি। একটা স্মাগলার অনায়াসে এম.পি হতে পারে। একটা অশিক্ষিত, ভাওতাবাজ বিনা বাধায় মন্ত্রী হয়ে বসে। তাদের কোনো শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয় না। তাদের কথাও মেন্টাল এবিলিটি টেস্ট করা হয় না। যত নিয়ম সাধারণ মানুষের জন্য। আর এইসব কিছু আমরা মুখ বুঝে সহ্য করি। আমাদের যত অভাব-অভিযোগ ওই শিক্ষিত ছেলেটার প্রতি,ওই উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়েটার প্রতি,আকাশ ছুঁতে চাওয়ার খেলোয়ারটার প্রতি...


কোন মুখ নিয়ে আমরা অলিম্পিকে চীন,আমেরিকা,কোরিয়া,জাপান,রাশিয়ার মত ভুরিভুরি মেডেল আশা করি ? কি করেছি আমরা আমাদের দেশের খেলাধুলার উন্নতির জন্য ? এইসব দেশগুলো ছোট থেকেই বাচ্চাদের প্রতিভা অনুযায়ী তাদের পরিকাঠামো দেয়। উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের সঙ্গে ওরা বড় হতে থাকে। তাই আজ ওরা সমাজের প্রত্যেক দিকে, প্রত্যেক পেশায় সফল এবং গোটা পৃথিবীর তালিকায় প্রথম সারিতে‌। ওরা সবাই হা করে সরকারের দিকে চেয়ে থাকে না, নিজেরাই নিজেদের জায়গা থেকে চেষ্টা চালিয়ে যায়। আর ওদের সরকারও বাহুবলে বা পকেটের গরমে তৈরি হয় না, যোগ্য মানুষই চেয়ারে বসে। তাই ওদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। আর আমাদের .....?সরকার কিছু করুক বা না করুক, সেই বিচারে পরে আসা যাবে। সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের খেলাধুলার উন্নতির স্বার্থে আমাদের কতটুকু অবদান আছে ? 


এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর যদি আমাদের কাছে না থাকে, তাহলে আমাদের কোন অধিকার নেই গাদা গাদা মেডেল আশা করার। দু'চারটে যা আসবে তাই নিয়ে খুশি থাকতে হবে। নয়তো এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হবে আগামীর জন্য.....

No comments