Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বরিষ্ঠ সম্মাননা রাধাকান্ত চক্রবর্তী অনুলিখনে শিশিরকুমার বাগ

রাধাকান্ত চক্রবর্তী অনুলিখনে শিশিরকুমার বাগসভাপতি/সুতাহাটা আঞ্চলিক ইউনিট/মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা।   মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সম্মাননীয় অশীতিপর সদস্য মাননীয় রাধাকান্ত চক্রবর্তী মহাশয় অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার একজন একনিষ্ঠ সমাজকর…

 





 রাধাকান্ত চক্রবর্তী অনুলিখনে শিশিরকুমার বাগ

সভাপতি/সুতাহাটা আঞ্চলিক ইউনিট/মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা।   মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সম্মাননীয় অশীতিপর সদস্য মাননীয় রাধাকান্ত চক্রবর্তী মহাশয় অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার একজন একনিষ্ঠ সমাজকর্মী।

      শ্রদ্ধেয় রাধাকান্ত চক্রবর্ত্তী মহাশয় (যিনি কাশীবাবু নামে সমধিক পরিচিত) ১৯৩৬ সালের ২রা জুন অবিভক্ত মেদিনীপুর (বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর) জেলার সুতাহাটা থানার অন্তর্গত জুনাটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অমূল্যরতন চক্রবর্ত্তী এবং মাতা শতদলবাসিনী দেবী। গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনার পর দোরো কৃষ্ণনগর হাই স্কুলে এবং তারপর তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয় থেকে আই.এ ও বি.ও পাশ করেন। পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে এম.এ এবং ঝাড়গ্রাম সেবায়তন থেকে বি.টি পাশ করেন। তিনি ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং দোরো কৃষ্ণনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর সহ-শিক্ষকতার কাজ করেছেন।

রাধাকান্তবাবু একজন সফল ফুটবল, ভলিবল খেলোয়ার্ড। স্কুলে ও কলেজে ফুটবলের লেফট আউট প্লেয়ার ছিলেন। ১০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, সাঁতার, পোলভল্ট প্রভৃতি ইভেন্টে বরাবর প্রথম হতেন। পরে তিনি পাশ করা ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্সের রেফারী হন। তিনি ছিলেন সুতাহাটা ব্লক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং হলদিয়া রেফারিজ অ্যান্ড আম্পায়ার্স অ্যসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও দীর্ঘ ৩০ বছরের সভাপতি। 

ছাত্রজীবন থেকেই নানান সামাজিক কাজে লিপ্ত ছিলেন রাধাকান্তবাবু। দীর্ঘদিন তিনি সুতাহাটায় ফ্রি কোচিং সেন্টার চালিয়েছেন। কর্মজীবনে নিজের গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল এবং অন্যত্র একটি কে.জি স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছেন। গ্রামীন কো- অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, সুতাহাটা মার্কেটিং সোসাইটি ও মেদিনীপুর রেঞ্জ ২ নম্বর কো অপারেটিভের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সুতাহাটার মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সদস্য ছিলেন দীর্ঘ ৫২ বছর এবং বর্তমানে তিনি ওই সমিতির সভাপতি। 

 রাধাকান্তবাবু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুরোহিত পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। পুরোহিত পর্ষদের পরিচালনায় প্রতি বছর তিনি সাফল্যের সঙ্গে চণ্ডীপাঠ, গীতাপাঠ, লক্ষ্মীচরিত্র পাঠ প্রভৃতির প্রতিযোগিতা করে এসেছেন। কুকড়াহাটী গঙ্গার তীরে তাঁরই উদ্যোগে একটি তর্পণ ঘাট স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে তিনি হলদিয়া রেড ক্রশ সোসাইটির কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সুতাহাটা আঞ্চলিক ইউনিটের সভাপতি।

    যখন তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র, তখন থেকেই তিনি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি প্রায় দুই শতাধিক যাত্রা-থিয়েটারে অভিনয় করেছেন ও বহু নাটকও নির্দেশনা করেছেন। 

    হলদিয়া উৎসবের অঙ্গ হিসাবে গণবিবাহ, গণভাইফোঁটার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন ও দীর্ঘদিন সুতাহাটায় নন্দনাচ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে এসেছেন। খড়্গপুরের আদলে দোরো কৃষ্ণনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ৫২ ফুট উঁচু লোহার রাবণ-দহন অনুষ্ঠানের তিনি আজও মুখ্য ব্যবস্থাপক। দশ দিনের গ্রামীণ মেলা ও লোকসংস্কৃতি উৎসব করিয়েছেন নিজের গ্রামে। এছাড়া ঢাকঢোল, বাঁশি, সানাই, জগঝম্প প্রভৃতি গ্রামীণ বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছেন নানা সময়ে। 

সাহিত্যের জগতেও তাঁর অবাধ বিচরণ। নান সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর ৮০ টিরও বেশী প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানীয় লিটল ম্যাগাজিন এবং সাহিত্যসভার  সঙ্গে  তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চাকরী জীবনের শুরুর দিকে ‘গ্রামের ডাক’ নামক সংবাদপত্রে বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতার কাজও করেছেন। ১৯৯২ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা সাংবাদিক সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন তিনি।

  ২০০০ সালে পিঠেপুলি ও খোলান উৎসবের আয়োজন করেছিলেন রাধাকান্তবাবু। এছাড়া ২০১৭ সালে সুতাহাটার সুবর্ণজয়ন্তী ভবনে ‘ঘুঁটে উৎসব’-এর আয়োজন করে তিনি কেবলমাত্র নিজের এলাকায় নয় সারা পশ্চিমবাংলায় সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ওই ‘ঘুঁটে উৎসব’-এ উপস্থিত সাংবাদিকগণ বলেছিলেন সারা ভারতে এমন অভিনব বিষয় নিয়ে গ্রামীণ লোকসংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠান তাঁরা এর আগে দেখেননি। এই উপলক্ষে রাধাকান্তবাবুর সম্পাদনায় ‘ঘুঁটে’ নামক একটি সুন্দর সুশোভন পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। সদা-হাস্যময়, সদা-উৎসাহী ও কর্মচঞ্চল এই মানুষটিকে সুতাহাটার সাহিত্যসমাজ ও এলাকাবাসী ‘হলদিয়ার দাদাঠাকুর’ আখ্যা দিয়েছেন।

   তিনি বলেন মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার পরিধি আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। সদস্য/সদস্যার সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট হতে হবে। তরুণ উৎসাহী কর্মীকে খুঁজে বার করতে হবে। কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর না করে এলাকা ভিত্তিক প্রচারে জোর দিতে হবে। সুতাহাটা বাজারে তাঁর যে দ্বিতল বাড়িটি রয়েছে সেই বাড়ির দোতলায় বরিষ্ঠ নাগরিক মঞ্চের অফিস। সেখানেই মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা সভাও করে থাকে। এই রকম কয়েকটি সভাতে তিনি সপুত্র ঘোষনা করেন যে দোতলার সভাগৃহটি মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা আজীবন ব্যবহার করতে পারবে। সংস্থার প্রতি রাধাকান্তবাবুর এই ভলোবাসা আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। তিনি আশা রাখেন যে মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার তরুণ সদস্য/ সদস্যাগণ আরো সংঘবদ্ধ হয়ে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবেন।

অনুলিখনে শিশিরকুমার বাগ, প্রাবন্ধিক, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কর্মজীবন সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু ও মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সুতাহাটা আঞ্চলিক ইউনিটের আজীবন সদস্য।(৬.৭.২০২১)

No comments