নবান্নের ১৪ তলায় তৃতীয়বারের জন্য তাঁকে পৌঁছে দিতে উজাড় করা সমর্থন দিয়েছে গোটা বাংলা। গ্রাম থেকে শহর, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চেয়েছেন তাঁকেই। ক্ষমতায় আসীন হয়ে বাংলার সেই আপামর মানুষের জন্য ‘সমন্বয়…
নবান্নের ১৪ তলায় তৃতীয়বারের জন্য তাঁকে পৌঁছে দিতে উজাড় করা সমর্থন দিয়েছে গোটা বাংলা। গ্রাম থেকে শহর, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চেয়েছেন তাঁকেই। ক্ষমতায় আসীন হয়ে বাংলার সেই আপামর মানুষের জন্য ‘সমন্বয়’-এর বাজেট পেশ করালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিধানসভায় উপস্থাপিত বাজেটের মূল নির্যাস—গ্রাম-শহরের মানোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই গতবারের (২০২০-’২১) তুলনায় ২০.৭৫ শতাংশ বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৭২৭ কোটি টাকার বাজেট পেশ করল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্র অসুস্থ। তাঁর পরিবর্তে এই প্রথম বাজেট পেশ করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নির্বাচনী পর্বে তৃণমূল সুপ্রিমো হিসেবে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা, সেই নতুন কৃষক বন্ধু প্রকল্প, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, দুয়ারে রেশন এবং বাড়ির মহিলাদের হাত-খরচ সংক্রান্ত ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প গুরুত্ব সহকারে ঠাঁই পেয়েছে বাজেট প্রস্তাবে। একইসঙ্গে কোভিড সঙ্কট পর্বে পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোড ট্যাক্স মকুব, জমি-বাড়ি- ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচে ১০ শতাংশ এবং স্ট্যাম্প ডিউটির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ ছাড়ের উল্লেখও রয়েছে সেখানে। তবে, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই শেষোক্ত দু’টি সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাজেট উপস্থাপিত হওয়ার পর ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করছি। কেন্দ্রের বঞ্চনা এবং চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও মানুষের জন্য এই বাজেট। জনস্বার্থ বিরোধী কোনও কর চাপানোর প্রস্তাব নেই এই বাজেটে। বরং, জনস্বার্থবাহী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র—সামাজিক উন্নয়ন এবং কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ অনেক বাড়ানো হয়েছে। তেমনই আবার বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বাজেটে ১৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে সরকার। দুয়ারে রেশন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। এছাড়া কোভিড মোকাবিলার জন্য ১৮৩০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।’ খুব শীঘ্রই বাংলার মহিলাদের হাত-খরচ সংক্রান্ত প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, সরকারি কোনও পেনশন যাঁরা পান না, এমন মহিলারাই এর সুবিধা পাবেন। এসসি-এসটি জাতিভুক্ত মহিলারা পাবেন মাসে ১০০০ টাকা এবং সাধারণ জাতিভুক্ত মহিলারা ৫০০ টাকা। এই প্রকল্প বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কী ভাবে নির্ধারিত হবেন উপভোক্তা? তাও স্পষ্ট করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথীর ডেটাবেসকে এক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে।’ রাজ্যের এই বাজেট নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে রাজ্যের বণিক-শিল্প মহল। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতে, এই বাজেট দিশাহীন। সাধারণ মানুষের স্বার্থবাহী নয়।
এবারের উপস্থাপিত বাজেটে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন, পানীয় জল সংস্থানে বরাদ্দ বাড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পুর ও নগরোন্নয়নেও। পাশাপাশি নারী ও শিশু কল্যাণ, বিদ্যুৎ, সেচ, সমবায়, পূর্ত, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী উন্নয়নের মতো সাধারণ বিষয়গুলিতেও বরাদ্দ বেড়েছে। বাম আমলে শেষ বাজেট হয়েছিল ২০১০-’১১ সালে। সেবারের তুলনায় এবার কৃষি খাতে ৩২.৫ গুণ, স্কুল শিক্ষা খাতে ১৮.৪ গুণ, উচ্চ শিক্ষা খাতে ২২.৫ গুণ, স্বাস্থ্য খাতে ১৭.৯ গুণ, পানীয় জল সরবরাহ ক্ষেত্রে ১৪.৯ গুণ বরাদ্দ বাড়িয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার।
No comments