Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্মৃতির থেকে আজ বিশেষ দিন - সমর সিনহা

আজ এক বিশেষ দিন। ঠিক দশ বছর আগে এই দিনেই শিমূলবেড়‍্যা যোগেন্দ্র বিদ‍্যাপীঠে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন রামবাবু, দেববাবু, নারায়ণবাবুর মত প্রবীণ সহকর্মীরা আমাকে স্বাগত জানান। স্কুলের পরিবেশ খুব ভালো  লেগেছিল। গাছগাছালি …

 





আজ এক বিশেষ দিন। ঠিক দশ বছর আগে এই দিনেই শিমূলবেড়‍্যা যোগেন্দ্র বিদ‍্যাপীঠে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন রামবাবু, দেববাবু, নারায়ণবাবুর মত প্রবীণ সহকর্মীরা আমাকে স্বাগত জানান। স্কুলের পরিবেশ খুব ভালো  লেগেছিল। গাছগাছালি ভরা আশ্রমিক পরিবেশ, সঙ্গে বড় মাঠ ও পুকুর। পাশেই রেল লাইন। মাঠের উল্টোদিকে তপশিলী জাতি/ উপজাতি ছাত্রদের হোস্টেল। সুখে ও শোকে দশ বছর কোথা দিয়ে কেটে গেল, আজ পেছন ফিরে তাকালে বুঝতেও পারি না। প্রথম দু'বছর খুব অসুবিধায় কেটেছে। না ছিল ক্লার্ক , না ছিল পিয়ন। সব কাজ নিজেকেই করতে হয়েছে। কিন্তু কষ্ট হলেও হতাশ হইনি। অফিসের যাবতীয় কাজ করতে হয়েছে। এক এক দিন এমনও হয়েছে, একই দিনে বিডিও অফিস, এ.আই. অফিস ও ডি.আই অফিসের কাজ করেছি যথাক্রমে সুতাহাটা, দুর্গাচক ও তমলুকে। বাড়ি ফিরতে রাত্রি ৮-৯ টা হয়ে গেছে। এই রকম অনেকবারই হয়েছে। স্কুলের উন্নয়নের জন‍্য নীচ থেকে উপর বহু মানুষের কাছে দরবার করেছি। প্রয়াত দেববাবুকে সঙ্গে নিয়ে সেই সময়ের হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি তার বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে দু'বারে মোট সাত লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছেন। সেই অর্থে গ্রন্থাগার ও অডিটোরিয়ামের কাজ হয়েছে। ২০১৩-'১৪ সালে স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে টিম করে প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীদের বাড়ি বাড়ি সাহায‍্যের জন‍্য হাত পেতেছি। বহু মানুষ তাদের সাধ‍্যমত সাহায‍্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০১৬-'১৭ আর্থিক বছরে রাজ‍্যসভার সংসদ শ্রী কুণাল ঘোষ কম্পিউটার ল‍্যাবরেটরি ও সেট আপের জন‍্য আট লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেন। তার ঐ অর্থ ও ICT-র সহায়তায় স্কুলে একটি সুসংহত কম্পিউটার ল‍্যাব গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে KYan প্রকল্পও চালু হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশন ও সংখ‍্যালঘু দপ্তরের আর্থিক সহযোগিতায় অনেক শ্রেণিকক্ষ গড়ে উঠেছে। উচ্চ মাধ‍্যমিকে শারীরশিক্ষা, সমাজবিদ‍্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান এই তিন বিষয়ের অনুমোদন করিয়ে আনি শিক্ষা সংসদ থেকে। গত প্রায় দু'বছর বিদ‍্যালয় শিক্ষা বন্ধ থাকলেও উন্নয়ন এক মুহূর্তও থেমে থাকেনি। গত বছরের আমফান ঝড়ে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, শিক্ষা দপ্তরের অর্থানুকূল‍্যে সেই ক্ষতির মেরামত হয়েছে। যদিও অনুমোদিত অর্থের অর্ধেক এখনও পাইনি। সর্বশেষ যে প্রকল্প বিদ‍্যালয়ের মাথায় স্বর্ণমুকুট পরিয়েছে, সেটি হল কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত Atal Tinkering Laboratory(ATL)। ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানের অনুসন্ধিৎসা বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পের সূচনা। অত‍্যন্ত আনন্দের সংবাদ যে আমাদের স্কুল ATL-এর অনুমোদন পেয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই এই প্রকল্প চালু হতে চলেছে। এই অতিমারি শেষ হলে যাদের জন‍্য এই কর্মপ্রয়াস তাদের হাতে সব তুলে দিতে পারলে এই পরিশ্রম সার্থকতা লাভ করবে। পেছন ফিরে তাকিয়ে সবই কি সুখের অনুভূতি পাই। তা হয়তো নয়। অনেক কষ্ট, অনেক অপমান অসম্মানের তিক্ত স্মৃতি অন্তরকে কুরে কুরে খায়। কিন্তু একে জীবনেরই অঙ্গ বলে মেনে নিয়েছি। আমার কিছুমাত্র কাজে যদি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উজ্জীবিত হয়, প্রতিষ্টিত হয় ও সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে, তাহলেই শিক্ষকতার জীবন সার্থক হবে।



No comments