Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জ্ঞানী ব্যাক্তি দার্শনিক সক্রেটিস

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জ্ঞানী ব্যাক্তি দার্শনিক সক্রেটিসপ্রকৃতপক্ষে সক্রেটিসই পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক, চিন্তাবিদ যাকে তার চিন্তা দর্শনের জন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার নশ্বর দেহের শেষ হলেও চিন্তার শেষ হয়ন…

 




পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জ্ঞানী ব্যাক্তি দার্শনিক সক্রেটিস

প্রকৃতপক্ষে সক্রেটিসই পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক, চিন্তাবিদ যাকে তার চিন্তা দর্শনের জন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার নশ্বর দেহের শেষ হলেও চিন্তার শেষ হয়নি। তার শিষ্য প্লেটো, প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলের মধ্য দিয়ে সেই চিন্তার এক নতুন জগৎ সৃষ্টি হলো, যা মানুষকে উন্নীত করেছে আজকের পৃথিবীতে।

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস ৪৭০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন।

দার্শনিক সক্রেটিস কে পৃথিবীর ইতিহাসে একজন অন্যতম জ্ঞানী ব্যাক্তি বলা হয়। সক্রেটিস এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন, দীর্ঘ ২ হাজার বছর ধরে যা পশ্চিমা সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে ব্যপকভাবে প্রভাবিত করেছে।

প্রাচীন এই গ্রীক দার্শনিককে তাই পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তিস্থাপনকারী হিসেবেও অভিহিত করা যায়।

কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ে যে মন্তব্যটি করেছিলেন তা হলো, “আমি এটাই বলবো আমি কিছুই জানি না।”

জীবদ্দশায় দার্শনিক সক্রেটিস ছিলেন এক ধাঁধার মত। মৃত্যুর পরেও চিরন্তন এক বিষ্ময়ে পরিণত হয়েছেন তিনি।

দর্শন বিষয়ে যদিও কিছুই লিখে যান নি, কিন্তু তবুও তাঁকে হতেগোনা কয়েকজন মহামানবের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাঁদের দ্বারা পৃথিবীর মানবদর্শন বদলে যায়।

কালজয়ী এই দার্শনিক নিজের সম্পর্কে কিছু লিখে গেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো পর্যন্ত।

তাই তাঁর জীবনী সম্পর্কে জানতে গোটা বিশ্বকে ৩ টি উৎসের দিকে চোখ রাখতে হয়। সেগুলো হচ্ছে

১.  প্লেটোর ডায়ালগ

২.  এ্যারিস্টোফেনিস (Aristophanes) এর নাটক, এবং

৩.  জেনোফনের রচনা

তবে এ্যারিস্টোফেনিসের নাটক The Clouds’এ যেভাবে দেখানো হয়েছে তা সর্বজন গ্রহণযোগ্য নয়।

সক্রেটিস এর অন্যতম শিষ্য কালজয়ী দার্শনিক প্লেটোর বর্ণনামতে আমরা আজ সক্রেটিসের জীবনী সম্পর্কে জানবো।

জন্ম:

সক্রেটিসের জন্ম খ্রীস্টপূর্ব ৪৭০ অব্দে।

তিনি গ্রিসের এথেন্স নগরীতে এলোপাকি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

পরিবার:

সক্রেটিস এর পিতার নাম সফ্রোনিস্কাস। তিনি ছিলেন একজন ভাস্কর।

এবং তাঁর মাতা ফিনারিটি যিনি ছিলেন ধাত্রী।

জীবনধারা:

সক্রেটিস দেখতে একদমই সুদর্শন ছিলেন না। টাক মাথা এবং চ্যাপ্টা-নাক। ছোট ছোট চোখ এবং স্ফীত উদর।

অস্বাভাবিক গতিভঙ্গির এই মানবটির দেহের সৌন্দর্য্য না থাকলেও তিনি ছিলেন প্রখর রসবোধের অধিকারী।

রঙ্গ করে প্রায়ই বলতেন, নাসারন্ধ্রটি বড় হওয়ায় ঘ্রাণ নেওয়ার বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তাই নাকটি বেশি চ্যাপ্টা হওয়াতে চোখের দৃষ্টি কোথাও বাধা পায় না।

তবে দার্শনিক সক্রেটিস এর রূপ না থাকলেও তাঁর কথাবার্তা এবং আচার-আচরণে মুগ্ধ হতেন সবাই।

দর্শন অনুশীলন করতে গিয়ে সংসার ও জীবিকা নিয়ে খুবই উদাসীন ছিলেন সক্রেটিস।

আর একারণেই জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এবং তাঁর পরিবারকে চরম দারিদ্র এবং অনাহারের মধ্য দিয়ে জীবনধারণ করতে হয়।

কর্মজীবন:

সক্রেটিসের জীবিকা নির্বাহ সম্পর্কে পরিষ্কার কোন তথ্য না থাকলেও কিছু কিছু উৎসানুসারে জানা যায়, প্রথম জীবনে তিনি তাঁর বাবার পেশা অর্থ্যাৎ ভাস্কর ছিলেন।

একারণে প্রাচীনকালে অনেকেরই ধারণা ছিল গ্রিসের অ্যাক্রোপলিসে ২য় শতাব্দী পর্যন্ত বিরাজমান ঈশ্বরের যেসব করুণা-চিহ্নিতকারী মূর্তি ছিল তার সবগুলো সক্রেটিস তাঁর নিজ হাতে তৈরি করেন।

যদিও বর্তমান কালে এসেও পৃথিবীর তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবীরা এর সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ উদ্ধার করতে পারেনি।

যদিও জেনোফোনরচিত সিম্পোজিয়ামে বলা হয় তিনি কখনো কোন পেশা অবলম্বন করেননি।

কারণ দার্শনিক সক্রেটিস ঠিক তাই করতেন যা তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতো।

আর তা হচ্ছে দর্শন নিয়ে আলোচনা।

আবার এ্যারিস্টোফেনিসের বর্ণনায় দেখা যায় শিক্ষার বিনিময়ে অর্থ নিতেন সক্রেটিস।  গ্রিসের চেরিফোনে অবস্থিত একটি সোফিস্ট বিদ্যালয়ও পরিচালনা করতেন তিনি।

তবে প্লেটোর অ্যাপোলজি এবং জেনোফোনের সিম্পোজিয়ামে দেখা যায় শিক্ষাদানের বিনিময়ে কখনোই অর্থ নেন নি সক্রেটিস ।

অধিকাংশ বর্ননা অনুসারে দার্শিনিক সক্রেটিস কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রদান করতেন না।

রাস্তা-ঘাট কিংবা হাটবাজারই ছিল তাঁর শিক্ষাপ্রদানের স্থান।

প্লেটোর ডায়ালগের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ পাওয়া যায়, তিনি জীবনের কোন একসময় সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

এসময় তিনি পটিডিয়া, অ্যাম্‌ফিপোলিস এবং ডেলিয়াম অভিযানে এথেনীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে অংশ নেন।

ডেলিয়ামের যুদ্ধের সময় তাঁর অসাধারণ দক্ষতা এবং অবদানের বর্ণনা লাকিস নামের রচনাতেও বর্ণিত রয়েছে।

বৈবাহিক জীবন:

সক্রেটিসের স্ত্রীর নাম জানিথিপি। যিনি বয়সে সক্রেটিস থেকে অনেক ছোট ছিলেন।

সক্রেটিস-জানিথিপি দম্পতি ৩ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তাদের নাম যথাক্রমে লামপ্রোক্লিস, সফ্রোনিস্কাস এবং মেনেজেনাস।

মৃত্যুদন্ড এবং মৃত্যু:

এই মহান শিক্ষক সক্রেটিসের মৃত্যুটি ছিল একেবারেই অন্যরকম।

সত্য ‍প্রতিষ্ঠায় দার্শনিক সক্রেটিস কখনই মাথা নত করেননি মিথ্যা কিংবা কাপুরুষতার কাছে।

এথেনীয় সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতার যুগ থেকে পেলোপনেশীয় যুদ্ধে স্পার্টা ও তার মিত্রবাহিনীর নিকট হেরে যাওয়ার সময়কাল অবধি সম্পূর্ণ সময়টাই বেঁচে ছিলেন তিনি।

পরাজয়ের গ্লানি ভুলে এথেন্স যখন আবার ঘুড়ে দাড়াবার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই একটি কর্মক্ষম সরকার পদ্ধতি হিসেবে গণতন্ত্রের সঠিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সক্রেটিস।

এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের একজন সমালোচক হিসেবেও আত্ম প্রকাশ হয় তাঁর।

ধারণা করা হয়, হয়তো এর ফলশ্রুতিতেই সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

তাঁর আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব, গুণাবলি ও সত্যের প্রতি অটল মনোভাব তৎকালীন সরকার নীতি ও সমাজের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টিতে বেশ ইন্ধন জুগিয়েছিল।

প্লেটোর মতে দার্শনিক সক্রেটিস সরকারের জন্য একটি বিষফোঁড়ার মত কাজ করেছিলেন। যার মূলে ছিল বিচার ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও ভালোর উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা।

দার্শনিক সক্রেটিস এর জ্ঞানের কথাও তুলে ধরেন প্লেটো। তাঁর অ্যাপোলজিক গ্রন্থ অনুসারে সক্রেটিসের বন্ধু চেরিফোন একদিন ডেলফির ওরাকলের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেন সক্রেটিসের থেকে প্রাজ্ঞ কেও আছে কি না।

উত্তরে ওরাকল জানান সক্রেটিসের থেকে প্রাজ্ঞ কেও নেই। তবে ওরাকলের এই কথাটি সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য সক্রেটিস এথেন্সবাসীকে উত্তম সৌন্দর্য্য এবং গুণ নিয়ে প্রশ্ন করেন।

উত্তর শুনে তিনি বুঝতে পারেন এদের কেউই এই প্রশ্নগুলির উত্তর জানে না। কিন্তু মনে মনে ভাবেন তারা সব জানেন।

এই সময় তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের জন্য তখনকার স্বনামধন্য এথেনীয়দের বিব্রতকর পরিস্থির সম্মুখীন হতে হয়।

এরপর থেকেই সবাই তাঁর বিরোধীতা শুরু করেন। এছাড়াও সক্রেটিসকে তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে চরিত্রহীনতা সৃষ্টি ও দুর্নীতিগ্রস্থ করে তোলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

সকল অভিযোগ বিবেচনায় এনে তাঁকে বিষপানে মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

আর তাই তৎকালীন শাসক ও সমাজ সংস্কারকদের রোসানলে পরে হেমলক বিষ পান করে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাঁকে।

মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে দার্শনিক সক্রেটিস শেষবার বাঁচার সুযোগও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

খ্রীস্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দের এক সন্ধ্যাবেলা-

মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পূর্বমুহুর্তে তিনি নিরুত্তাপ হাসিমুখেই প্রিয়জনদের সঙ্গে শেষ কুশল বিনিময় করেন।

এরপর জল্লাদ তাঁর হাতে গ্লাসভর্তি হেমলক বিষ তুলে দেয়। জল্লাদের কথামত বিষপান করে।

এরপর তিনি কিছুক্ষণ হাঁটার চেষ্টা করেন। কিন্তু পা দুটো দ্রুত অবশ হয়ে আসে কালজয়ী দার্শনিক সক্রেটিস এর।

এবং তারপরই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে ঢলে পরেন মৃত্যুর কোলে।

কিন্তু এর ঠিক পূর্বমুহুর্তে সক্রেটিস তাঁর বন্ধু ক্রিটোকে ডেকে বললেন, “ক্রিটো, অ্যাসক্লেপিয়াস আমার কাছে একটি মোরগ পায়, তার ঋণ পরিশোধ করতে ভুলোনা যেন।”

প্রসঙ্গত, অ্যাসক্লেপিয়াস হলেন গ্রিকদের আরোগ্য লাভের দেবতা।

মৃত্যু মানে দেহ থেকে আত্মার মুক্তি বলেই কি শেষ মুহুর্তেও নিজেকে এভাবে মহিমাণ্বিত করে গেলেন সক্রিটিস?

অথচ তাঁর বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগ তুলা হয় এর প্রথমটিই ছিল প্রচলিত দেবতাদের প্রতি অবমাননা।

দার্শনিক সক্রেটিস এর দর্শন পদ্ধতি:

সক্রেটিস দার্শনিক জেনোর ন্যায় দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিকে বিশ্বাস করতেন।

এই পদ্ধতি অনুসারে প্রথমে প্রতিপক্ষের অযৌক্তিক মত স্বীকার করে নেওয়া হয়। এবং তারপর যুক্তির মাধ্যমে সেই মত খন্ডন করা হয়। এ পদ্ধটির একটি অন্যতম প্রধান বাহন হচ্ছে প্রশ্নোত্তর।

দার্শনিক সক্রেটিস এই প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতির মাধ্যমেই তাঁর দর্শন আলোচনা চালিয়ে যেতেন।

সক্রেটিসের এই পদ্ধতিকে বলা হয় সক্রেটিসের শ্লেষ।

দার্শনিক সক্রেটিস এর কিছু সেরা বাণী:

-নিজেকে জান

-টাকার বিনিময়ে শিক্ষা অর্জনের চেয়ে অশিক্ষিত থাকা ভালো।

-তারা জানে না যে তারা জানে না, আমি জানি যে আমি কিছুই জানি না।

-পৃথিবীতে শুধু একটিই ভালো আছে, জ্ঞান। আর একটিই খারাপ আছে, অজ্ঞতা।

-তুমি কিছুই জানো না, এটা জানা-ই জ্ঞানের আসল মানে।

-পোশাক হলো বাইরের আবরণ, মানুষের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে তার জ্ঞান।

-আমি কাউকে কিছু শিক্ষা দিতে পারবো না, শুধু তাদের চিন্তা করাতে পারবো।

-বিষ্ময় হলো জ্ঞানের শুরু।

-অপরীক্ষিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা গ্লানিকর।

-বন্ধু হচ্ছে দুটি হৃদয়ের অভিন্ন মন।

-যাই হোক বিয়ে করো। তোমার স্ত্রী ভালো হলে তুমি সুখী হবে আর খারাপ হলে হবে দার্শনিক।

-আমাদের প্রার্থনা হওয়া উচিত সাধারণের ভালোর জন্য। শুধু ইশ্বরই জানেন কিসে আমাদের ভালো।

-তুমি যা হতে চাও তাই হও।

-মৃত্যুই হলো মানুষের সর্বাপেক্ষা বড়ো আশীর্বাদ।

তথ্যসূত্রঃ Curious24World

No comments