কেমিক্যাল হাবের জন্য সালেম গোষ্ঠীকে দেওয়া নয়াচরের ১১ হাজার ৯২৭ একর জমি ফেরানোর জন্য রাজ্যকে চিঠি দিচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার ও সালেম গোষ্ঠীর মধ্যে মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই মউ অনুযা…
কেমিক্যাল হাবের জন্য সালেম গোষ্ঠীকে দেওয়া নয়াচরের ১১ হাজার ৯২৭ একর জমি ফেরানোর জন্য রাজ্যকে চিঠি দিচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার ও সালেম গোষ্ঠীর মধ্যে মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই মউ অনুযায়ী প্রায় ২৯ কোটি টাকার বিনিময়ে সালেম গোষ্ঠীর হাতে ওই জমি তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২০১০ সালেই সালেম গোষ্ঠী সেখানে সার্ভের কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু, কেমিক্যাল হাব তৈরি নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সালেম গোষ্ঠী বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেয়। পরবর্তী সময়ে সেটাও ভেস্তে যায়। এখন সেই জমি সালেম গোষ্ঠীর হাত থেকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে রাজ্য। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এই আবেদন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, সালেম গোষ্ঠী জমি নিয়ে ফেলে রেখেছে। নয়াচরে কিছুই করছে না। সেখানে কোনও শিল্প বা প্রকল্প হলে শুধু এলাকার মানুষের নয়, রাজ্যের উপকার হবে। তাই ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক।
নন্দীগ্রামে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের জেরে সালেম গোষ্ঠীর এসইজেড প্রকল্প বাতিল করতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার বাধ্য হয়। তবে ওই সংস্থাকে ‘সান্ত্বনা’ হিসেবে নয়াচরে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমি তৎকালীন বাম সরকার দিয়েছিল। হুগলি ও হলদি নদীর মোহনার নয়াচরে প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্যজীবীর থাকেন। তাঁদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষ। তাঁরা বেশিরভাগই মৎস্যজীবী। সালেম গোষ্ঠী ওই জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেয় এবং তারজন্য সার্ভেও করে। কিন্তু, তারপর আর কাজ এগয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগপতিদের নিয়ে নয়াচরে এসে ইকো ট্যুরিজম তৈরির কথা বলেছিলেন। তারপরই সালেম গোষ্ঠীর কাছ থেকে জমি ফেরানো নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। তারপর আর সেব্যাপারে কোনও কথা এগয়নি। তৃতীয়বার তৃণমূল ক্ষমতায় বসার পর নয়াচর নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন নয়াচরের জমি ফেরানোর তোড়জোড় শুরু করল। জেলা প্রশাসনের এক অফিসার বলেন, নয়াচরে মোট ১৩ হাজার একরের মতো জমি রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় এক হাজার একর জমি কলকাতা বন্দরের। ১১ হাজার ৯২৭ একর জমি সালেম গোষ্ঠীর এবং বাকি ৭০ একরের কিছু বেশি জমির মালিক ভূমিদপ্তর। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নয়াচরের চারপাশে ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের তৎকালীন প্রধান সচিব এবং সালেম গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের মধ্যে মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাই জমির মালিক এখনও সালেম গোষ্ঠী। তারা এখানে না থাকলেও রাজ্য সরকার নয়াচরে কিছু করতে পারছে না। নয়াচরের জমি কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই ধুলো ঝেড়ে মউ চুক্তির ফাইল বের করেছেন জেলা প্রশাসনের অফিসাররা।
No comments