Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মহারাজ নন্দকুমার ও কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ী - সনাতন দাস

মহারাজ নন্দকুমার অষ্টাদশ শতকের বাংলার ইতিহাসে অন্যতম নায়ক । উপরন্তু তিনি ছিলেন দেশের ব্রাহ্মণ তথা হিন্দু সমাজের প্রধান নেতা। প্রথম দিকে রাজনৈতিক ভুলভ্রান্তি হলেও শেষের দিকে তাঁর ত্যাগ ও তেজস্বীতার কাহিনী নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল।      …

 






মহারাজ নন্দকুমার অষ্টাদশ শতকের বাংলার ইতিহাসে অন্যতম নায়ক । উপরন্তু তিনি ছিলেন দেশের ব্রাহ্মণ তথা হিন্দু সমাজের প্রধান নেতা। প্রথম দিকে রাজনৈতিক ভুলভ্রান্তি হলেও শেষের দিকে তাঁর ত্যাগ ও তেজস্বীতার কাহিনী নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। 

              নন্দকুমারের সৎকীর্ত্তির সংখ্যা কিছু কম নয়। বিরভূম জেলার ভদ্রপুরে নবরত্ন মন্দির, লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহ, একাধিক শিবলিঙ্গ, আকালীপুরের গুহ্যকালী ও গৌরীশঙ্কর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা নন্দকুমারের সৎকীর্তির কয়েকটি দৃষ্টান্ত। 

             ১৭০৫ সালে বীরভূম জেলার ভদ্রপুরে নন্দকুমার  জন্মগ্রহণ করেন । পিতার নাম পদ্মনাভ রায়, তিনি রাজস্ব দপ্তরের কর্মচারী ছিলেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে। নন্দকুমার ছাত্র অবস্থায় বাংলা ও গণিত শাস্ত্র ভালো ভাবে অধ্যায়ন করেন এবং পরে তিনি সংস্কৃত ও ফারসি ভাষাকেও আয়ত্ত্ব করেন। পরবর্তী সময় তিনি পিতার সঙ্গে থেকে রাজস্ব সংক্রান্ত কাজে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন। পিতা পদ্মনাভ যখন ঘোড়াঘাট পরগনায় নায়েব পদে কর্মরত ছিলেন তখন তাঁরই অধীনে নন্দকুমার সহকারী নায়েব পদে নিযুক্ত হন। ১৭৪০ সালের দিকে বাংলার মসনদে নবাব আলীবর্দী খাঁ সেই সময় নন্দকুমার মুর্শিদাবাদে সিরাজদৌল্লার সংঙ্গে ঘন ঘন দেখা সাক্ষাৎ করেন। এবং সিরাজের সুপারিশে নবাব আলীবর্দী নন্দকুমারকে হুগলীর দেওয়ান পদে নিযুক্ত করেন। সেইসময় হুগলীর ফৌজদার হেদায়েৎ আলী। তাঁর সঙ্গে নন্দকুমারের সম্পর্ক ভালো ছিলনা। দেওয়ানকে কাজ করতে হতো ফৌজদারের অধীনে। তাই নন্দকুমার হুগলীর দেওয়ান পদ ত্যাগ করেন । বেশকিছু বছর পরে নবাব আলীবর্দী পরলোকগমন  করলে সিরাজউদৌলা নবাব হন, বাংলা বিহার উড়িষ্যার তাঁর অধীনে। তখন উক্ত হুগলীতে নন্দকুমারকে ফৌজদারী পদে নিযুক্ত করেন নব নবাব সিরাজউদ্দৌলা । তখন ফৌজদারের বার্ষিক বেতন আড়াইলক্ষ টাকা। 

              সেই সময় ইউরোপে ইংরেজ ও ফরাসীদের যুদ্ধ বাধে এই অছিলাই ইংরেজরা চন্দননগর দখলের চেষ্টা করেন। চন্দননগরে ফরাসীরা এই সংবাদ পেয়ে বিচলিত হয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। ইংরেজদের এই অভিপ্রায় নবাব সিরাজ জানতে পেরে ইংরেজদের এই কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেন । কিন্তু ইংরেজরা নবাব সিরাজের আদেশ অগ্রাহ্য করে ও চন্দননগর আক্রমণে ঝাপিয়ে পড়ে। নবাব সিরাজদৌল্লা ফরাসীদের সাহায্য করতে হুগলীর ফৌজদার নন্দকুমারকে নির্দেশ দেন এবং দুর্লভরামকে সসৌনে হুগলী পাঠান। নন্দকুমার নবাবের নির্দেশ অগ্রাহ্য করেন  ও ফরাসীদের কোনপ্রকার সাহায্য করেননি। এমনকি দুর্লভরামকেও ফিরে যেতে পরামর্শ দেন। ফলে ইংরেজরা সহজেই চন্দননগর দখল করতে সমর্থ হয়। শুনাযায় ক্লাইব সাহেব তাঁর অনুগত মহাজন আমীনচাঁদের মারফৎ নন্দকুমারকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন এবং ইংরেজদের অতুলনীয় শক্তি ও যুদ্ধে ইংরেজদের জয় সুনিশ্চিত বলে জানিয়ে ইংরেজ পক্ষে নন্দকুমারকে থাকতে অনুরোধ জানান। সেদিন আমীনচাঁদের কাছে ইংরেজদের শক্তির পরিচয় ও নবাবের ভবিষ্যত্ অন্ধকার চিন্তা করে বিভ্রান্ত নন্দকুমার ফরাসীদের সাহায্যে এগিয়ে যান নি । ব্রিটিশ ঐতিহাসিক অর্ম্মে বলেছেন ইংরেজরা আমীনচাঁদের মারফৎ নন্দকুমারকে বারো হাজার টাকা উৎকোচ (ঘুষ) দিয়েছিলেন। তবে যাই হোক মহারাজ নন্দকুমারের এই আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।নবাবের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে, দুর্লভরামকে হুগলীতে আসতে বাধা ও ইংরেজদেরকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করা নন্দকুমারের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন হয়। ইংরেজদের চন্দননগর দখল মানে বাংলাতে ইংরেজ রাজত্বের প্রতিষ্ঠার সুচনা। 

             মহারাজ নন্দকুমারের স্ত্রীর নাম রানী ক্ষেমঙ্করী। তার একমাত্র পুত্র গুরুদাস। এবং নন্দকুমারের তিন কন্যা প্রথম কন্যা সম্মানী , দ্বিতীয় কন্যা আনন্দময়ী ও তৃতীয় কন্যা কিনুমনি। প্রথম কন্যা সম্মানীর বিবাহ হয় কুঞ্জঘাটা রাজপরিবারের আদি পুরুষ জগৎচন্দ্রের সঙ্গে । রাজকার্যের কারনে মুর্শিদাবাদ এলেই এই কুঞ্জঘাটা রাজবাড়িতে (জামাই বাড়িতে )  মহারাজ নন্দকুমার প্রায় বাস করতেন। সেই কারনে অনেকে কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ীটিকে মহারাজাষ নন্দকুমারের বাড়ি বলে মনে করেন । এই বাড়িটিও উক্ত সময় জাঁকজমক প্রিয় কারুকার্য শিল্পকলায় পরিপূর্ণ ছিল। এখানে চণ্ডী মণ্ডপ ও জোড়া শিবমন্দির অবস্থিত ছিল । 

            বর্তমান অবস্তা করুন, দেখে পাসানেরো চোখে জল আসবেই। মুল রাজবাড়ির অংশ ধুলিস্বাত হয়েগিয়েছে, রাজপ্রসাদের প্রবেশ দ্বারটি কোনরকমে জরাজীর্ণ হয়ে আজো টিকে আছে, কবে ধসে পরবে সেই অপেক্ষাই। প্রবেশ দ্বারের উপরে একটি মার্বেল পাথরে লেখা আছে  HERE Resided Maharaja Nanda Kumar in 1775 AD (এখানে বাস করতেন মহারাজা নন্দকুমার ১৭৭৫ সালে)। এই প্রবেশ দ্বারের বিপরীত দিকে জরাজীর্ণ অবস্থাতে জোড়া শিবমন্দির অবস্থিত আজো বিদ্যমান, মন্দিরে শ্বেতপাথরের জোড়া শিবলিঙ্গ দুটি আজো বর্তমান। কিন্তু চণ্ডী মণ্ডপ আরনেই তবে বছরে একটি দূর্গা পূজা পালন করা হয়। 

               আমি মনে করছি এই কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ির অবশিষ্ট অংশ ও জোড়া শিবমন্দির বাংলার ঐতিহ্য গুলির মধ্যে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগ ও ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দৃষ্টিতে কেন এই কুঞ্জঘাটা মহারাজ নন্দকুমার স্মৃতি জড়ানো নিদর্শনটি রক্ষার প্রয়োজন বলে মনে করছেন না! 

তথ্য সংগ্রহ = প্রতিভা রঞ্জন মৈত্রের লেখা 'নবাব বেগম উজির' গ্রন্থ । 

চিত্র সংগ্রহ ও লেখা = সনাতন দাস, লালবাগ,পিলখানা। 

বিঃদ্রঃ = কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ির পূর্বচিত্র ও মহারাজা নন্দকুমারের চিত্র সংগ্রহ ইন্টারনেট থেকে।

No comments