Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ব্রজবাসী ডাকাতের কথা’ রানা চক্রবর্তী

‘আঠারো শতকের ‘ময়মনসিংহ’ জেলার ‘রতনপুরের’ নীলকুঠির দেওয়ান ছিলেন ‘নবকুমার বসু’। নবকুমারবাবুর মত লোক সেকালে খুব একটা দেখা যেত না। তিনি অনেকদিন নীলকুঠিতে দেওয়ানির কাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সময়ে প্রজাদের উপরে কোন ধরণের অত্যাচার হত …

 






                                   

আঠারো শতকের ‘ময়মনসিংহ’ জেলার ‘রতনপুরের’ নীলকুঠির দেওয়ান ছিলেন ‘নবকুমার বসু’। নবকুমারবাবুর মত লোক সেকালে খুব একটা দেখা যেত না। তিনি অনেকদিন নীলকুঠিতে দেওয়ানির কাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সময়ে প্রজাদের উপরে কোন ধরণের অত্যাচার হত না। তাঁরা পয়সা-কড়ি ঠিকমতন পেতেন। ওই সময়ে নীলকুঠির সাহেব ছিলেন ‘মিঃ ম্যাকেঞ্জি’ নামে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তিনি ছিলেন দরিদ্রের বন্ধু। তিনি প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় প্রজাদের নিজের কুঠিতে ডেকে বাইবেল পড়ে শুনাতেন। বলতেন - ‘‘তোমরা যীশুর আদেশ ও উপদেশ শোন। সৎপথে চলো। সৎকথা বলো। ঈশ্বরকে ভক্তি করো। সব ধর্ম সমান।’’ সেই সাহেব রোগীর সেবা ও দরিদ্র মানুষদের অর্থ সাহায্য করতেন। ম্যাকেঞ্জি সাহেবের পোশাকটা ছিল অনেকটা পাদ্রীদের মতো। একটা ঢোলা লম্বা জামা পরে, কোমরে ফিতা বেঁধে লম্বা লাল দাড়ি ঝুলিয়ে তিনি তাঁর প্রজাদের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতেন। পাড়ার হিন্দু মুসলমান ছোট-ছোট ছেলেরা সাহেবের হাত ধরে চলত - পয়সা চাইত, খাবার চাইত। সাহেব হাসিমুখে সবই তাঁদের দিতেন। সেই সরল হৃদয় সাধু-চরিত্র ম্যাকেঞ্জি সাহেব দেওয়ান নবকুমারকে বলেছিলেন - ‘‘বড় দুঃখী, বড় গরীব, এই দেশের লোক। এঁদের উপরে কোন অত্যাচার কোরো না।’’ নবকুমার সেই মহাপ্রাণ সদাশয় সাহেবের আদর্শে কাজ করতেন। ফুলে কুঠির কাজও ভাল হত। এর জন্য ম্যাকেঞ্জি সাহেবকে নীলকুঠির অন্যান্য সাহেবরা এমন কি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট, হাকিম, দারোয়ানরাও সহ্য করতে পারতেন না। ওই অঞ্চলে কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা হত না, কোন গোলমাল হত নয়। প্রজারা ভাল কাজ করতেন, ফলে নীলের চাষও ভাল হত। একদিন সাহেব নবকুমারকে বলেছিলেন - ‘‘আমি দেশে চলে যাব। তুমি যদি পারো তাহলে কাজ ছেড়ে দিও। আমি দেশে দেশে ধর্ম প্রচার করে বেড়াবো।’’ তিনি কাজেও সেটাই করেছিলেন। কিন্তু নবকুমার কুঠির কাজ ছাড়েন নি। তিনি কুঠির দেওয়ানই রয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর ছিল বড় পরিবার - তাই চাকরি না করলে তাঁর চলবে কী করে। তবে তিনি যদি ম্যাকেঞ্জি সাহেবের পরামর্শ শুনে কাজ ছেড়ে দিতেন, তাহলে সেটা তাঁর পক্ষে মঙ্গলজনক হত। ম্যাকেঞ্জি বিলেতে ফেরৎ চলে গিয়েছিলেন। তাঁর পরে রতনপুরের নীলকুঠীর নতুন অধ্যক্ষ হয়ে এসেছিলেন ‘মিঃ ল্যাডলি’। তিনি ছিলেন বাইশ-তেইশ বছর বয়সের দুর্দান্ত স্বভাবের এক ইংরেজ তরুণ। এক ইংরেজ চাষার ঘরের ব্রিটিশ সন্তান। ল্যাডলি শুনেছিলেন - নীলকুঠির সাহেবরা এই দেশ থেকে অজস্র অর্থ সংগ্রহ করে ইংল্যাণ্ডে নিয়ে যায়। তাই কুঠির দায়িত্ব নেবার প্রথম দিন থেকেই ল্যাডলি সাহেবের সেইদিকে নজর ছিল। কয়েকদিন পরেই ল্যাডলি নবকুমারকে বলেছিলেন - ‘‘দেওয়ান! তুমি আমাকে দু’হাজার টাকা দাও - যেমন করেই পারো।’’ নবকুমার তাঁকে বলেছিলেন - ‘‘তা কেমন করে হবে, সাহেব। কুঠি-তহবিল ভেঙ্গে আমি টাকা দিতে পারবো না।’’ সাহেব তাঁকে বলেছিলেন - ‘‘সে দায়িত্ব আমার।’’ নবকুমার বলেছিলেন - ‘‘আমি দেওয়ান। তহবিল ভেঙ্গে আমি কিছুতেই টাকা দিতে পারবো না।’’ এই কথা শুনে ল্যাডলি তাঁকে আদেশ করেছিলেন - ‘‘তবে চাষী মজুরদের কাছ থেকে টাকা আদায় কর, দাদন কমিয়ে দাও।’’ নবকুমার তাঁর মুখের উপরে সটান বলে দিয়েছিলেন - ‘‘তা হয় না সাহেব। আমি ম্যাকেঞ্জি সাহেবের আমলের লোক। আমি পারবো না গরীব চাষীদের উপর অত্যাচার উৎপীড়ন করতে।’’ এরপর সাহেব শুধু বলেছিলেন - ‘‘অল রাইট।’’ তারপরে একদিন কুঠির উত্তর-পশ্চিম দেশীয় লেঠেল ও বরকন্দাজদের নিয়ে, ল্যাডলি সাহেব ঘোড়ায় চড়ে দেওয়ানের বাড়ী আক্রমণ করেছিলেন। কুঠি থেকে দেওয়ানের বাড়ি ছিল মাইলখানেক দূরে। সাহেব লেঠেল বরকন্দাজদের সাহায্যে দেওয়ানের যথাসর্বস্ব লুঠ করে অবশেষে বন্দুক ছুঁড়ে, মশাল জ্বেলে, ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে, ধান নষ্ট করে, খাদ্যশস্য ভস্মীভূত করে নবকুমারকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন। সাহেব নবকুমারকে ‘দরিয়ানগরের’ কুঠির এক মালগুদামে বন্দী করে রেখেছিলেন। গুদামের দরজা তালা চাবি লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দরজায় পাহারা বসানো হয়েছিল। তাই কারও সাধ্য হয়নি সেদিকে যাওয়ার। বন্দী অবস্থায় নবকুমারের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার ও উৎপীড়ন চলেছিল। সাধারণ লোক সেই বিষয়ে বিন্দু-বিসর্গও জানতে পারেনি। ঐ সময় ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ‘মিঃ ল্যান্স’। সেই ঘটনার কয়েক মাস পরে তিনি মফঃস্বল সফরে বের হয়েছিলেন। একদিন তাঁর নজরে পড়েছিল যে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে রতনপুরের কাছে বহু লোক জমায়েত হয়েছে। ভিড় দেখে উৎসুক হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব খোঁজ করে জানতে পেরেছিলেন যে, মিঃ ল্যাডলি রতনপুরের দেওয়ান নবকুমারের বাড়ী লুঠতরাজ করে তাঁকে দরিয়ানগরের এক গুদামে বন্দী করে রেখেছেন। তাই প্রজারা সেটার একটা প্রতিকারের জন্য জোট বাঁধছে। ম্যাজিস্ট্রেট সেই খবর শুনে তৎক্ষণাৎ ঘোড়া ছুটিয়ে দরিয়ানগরে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানেই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সঙ্গে ল্যাডলির দেখা হয়েছিল। কোন ভণিতা না করে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ল্যাডলিকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলেন - ‘‘মিঃ ল্যাডলি, এই মালগুদামে তুমি দেওয়ান নবকুমারকে বন্দী করে রেখেছো - এ ঘটনা কি সত্যি?’’ ল্যাডলি তাঁকে উদ্ধতকণ্ঠে উত্তর দিয়েছিলেন - ‘‘হ্যাঁ, সত্যি।’’ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তাঁকে বলেছিলেন - ‘‘ওকে তুমি এক্ষুনি গুদাম থেকে ছেড়ে দাও।’’ ল্যাডলি তাঁকে মিথ্যা বলেছিলেন - ‘‘কেন ছাড়ব? সে তহবিলের টাকা তছরূপ করেছে। টাকা আদায়ের জন্যই তাঁকে আটকে রেখেছি।’’ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তাঁকে বলেছিলেন - ‘‘সে অধিকার তোমার নেই। আদালত রয়েছে । সেখানেই বিচার হবে। নালিশ করে প্রমাণ করা উচিত ছিল। দরজা খোল।’’ শেষটায় একপ্রকার বাধ্য হয়ে ল্যাডলি মালগুদামের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। গুদামঘর থেকে মৃতপ্রায় নবকুমারকে বের করে আনা হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দেখেছিলেন - নবকুমারের সারা শরীর কাঁপছে, তিনি কথা বলতে পারছেন না। অত্যাচার ও কদর্য খাওয়া দাওয়ার জন্য তাঁর শরীরের অমন অবস্থা হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব নবকুমারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে ল্যাডলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু নবকুমারের পক্ষে কোন সাক্ষী পাওয়া যায় নি। নীলকুঠির চারিদিকের পাঁচিল ঘেরা মালগুদামে তিনি বন্দী ছিলেন - কে তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিতেন? কুঠির সকলেই তো সাহেবের অনুগত ছিলেন। ল্যাডলি সাহেবের ভয়ে মালগুদামের মধ্যে বন্দী নবকুমারের করুণ বিলাপে কারও প্রাণ কাঁদে নি। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ছেড়ে দেওয়ার লোক ছিলেন না। যথা সময়ে বিচার শুরু হল। বিচারের সময় ম্যাজিস্ট্রেট ল্যাডলিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন - ‘‘তুমি খাঁটি ইংরেজের সন্তান হয়ে এত বড় নৃশংস অত্যাচার করতে পারলে? জাতির কলঙ্ক তুমি! তুমি নবকুমারের বাড়ী লুঠ করেছো?’’ ল্যাডলি নির্ভয়ে উত্তর দিয়েছিলেন - ‘‘হ্যাঁ! করেছি।’’ ... ‘‘বন্দী করেছো, অত্যাচার করেছো?’’ কিছুমাত্র ভীত না হয়ে দুর্দান্ত ল্যাডলি উত্তর দিয়েছিলেন - ‘‘করেছি।’’ ম্যাজিস্ট্রেট ল্যাডলিকে দুশো টাকা জরিমানা ও এক মাসের জন্য কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ল্যাডলি টাকা দিতে না পারলে তাঁকে আরও দুই মাস কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। কিন্তু ল্যাডলি উচ্চ আদালতে আপিল করে মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীন ব্রিটিশ সন্তান, তাঁর কী সাজা হতে পারে? এটাই ছিল সে যুগের বিচার। বিচারের নামে বিচারের প্রহসন।                            

ময়মনসিংহের ‘ব্রজবাসী’ ছিলেন দস্যু। দস্যু হলেও ব্রজবাসী ছিলেন মহৎ। ডাকাত হলেও তিনি ডাকাতি করতেন ধনীর বাড়ীতে, সুদখোর মহাজনদের বাড়ীতে - যাঁরা প্রজাদের রক্ত শোষণ করে তাঁদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করত। ডাকাতির টাকায় তিনি প্রজাদের ঋন শোধ করতেন। ব্রজবাসী ডাকাতি করতেন, আবার চাষ-আবাদও করতেন। বড় বড় জমিদারগণ জমি দখল ও লুটতরাজের সময় ব্রজবাসীর সাহায্য নিতেন। আবার ওদিকে ব্রজবাসী ছিলেন খাঁটি গৃহস্থ। অতিথি সেবা, পূজা-পার্বন সবদিকেই ব্রজবাসীর দৃষ্টি ছিল। তিনি ছিলেন পরম বৈষ্ণব। ডাকাত হলেও তাঁর বাড়ীতে নিত্য মহোৎসব ও অহোরাত্র কীর্তন হত। ব্রজবাসীর অনেক সাকরেদ ছিল। লাঠি, সড়কি, কুস্তি - সব বিষয়ে তিনি ছিলেন ওস্তাদ। তাঁর ছিল ছয় ফুট দীর্ঘ দেহ! মাথাভরা ঝাঁকড়া চুল, হাড়মাংসে গড়া দেহ। তাঁর শরীরের কোথাও মেদবাহুল্য ছিল না। তাঁর হুঙ্কারে গাঁয়ের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ধ্বনিত হত। ভয় বলে কিছুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল না। এদিকে ল্যাডলি মুক্তি পেয়ে জোর অত্যাচার আরম্ভ করেছিলেন৷ তিনি ঘোড়ায় চড়ে নীলক্ষেতে যেতেন। সেখানে তিনি বিনা দোষে চাষীদের বেত মারতেন, লাথি মারতেন, অকথ্য নির্যাতন করতেন। ততদিনে নবকুমারের জায়গায় এক নতুন দেওয়ান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি সাহেবের চেয়েও বেশী শয়তান ছিলেন। ল্যাডলির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন চাষী-মজুর সকলে জোট বেঁধে ব্রজবাসীর কাছে গিয়েছিলেন। ব্রজবাসী নিজের বাড়ির বাইরের ঘরে বসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। চাষী-মজুরদের মোড়ল অনুনয় করে ব্রজবাসীকে বলেছিলেন - ‘‘ব্রজদাদা, আমাদের বাঁচান।’’ ব্রজবাসী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘কী হোল তোমাদের?’’ চাষীদের মোড়ল ‘রামমোহন’ ব্রজবাসীকে সব কথা খুলে বলেছিলেন। ব্রজবাসী সব শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন ৷ পরে ক্রুদ্ধ সিংহের মতো গর্জন করে উঠে বলেছিলেন - ‘‘আচ্ছা, শোধ নিচ্ছি। এতদিন ধরে তোমরা এত অত্যাচার সহ্য করেছ! দেখি কেমন সে লালমুখো।’’ এরপরে কিছুদিন কেটে গিয়েছিল। তারপর একদিন অন্ধকার রাত্রে ব্রজবাসী নিজের দলের চাষী-মজুরদের নিয়ে রতনপুর ও দরিয়ানগরের নীল কুঠি আক্রমণ করেছিলেন। ল্যাডলি সাহেব সেই অতর্কিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। হঠাৎ সাহেবের বাংলোয় ঢুকে পড়েছিলেন ব্রজবাসী ও তাঁর অনুচররা। ব্রজবাসী ল্যাডলি সাহেবকে কাঁধে তুলিয়া টেনে বাইরে বের করে এনেছিলেন। নীলকুঠি লুঠ করা হয়েছিল। সাহেবকে কাছের এক ঘন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওদিকে ব্রজর দলের লোকেরা হল্লা করে নীল কুঠির গুদাম ঘর, সাহেবের কুঠিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। দেখতে দেখতে সব পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল। দূর থেকে লোকে দেখিতে পেয়েছিল আগুনের লেলিহান শিখায় দরিয়ানগর ও রতনপুরের ধ্বংসাবশেষ। ওদিকে ল্যাডলি সাহেবকে পিটিয়ে পিটিয়ে আধমরা করে ব্রহ্মপুত্রের এক চড়ায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ব্রজবাসীর নির্দেশে তাঁর দলের লোকেরা নির্জন জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন। পরে সেই লুঠতরাজ ও অগ্নিকান্ড নিয়ে দারোগা, পুলিশ হাঙ্গামা - অনেক কিছুই হয়েছিল। কিন্তু কাউকেই ধরা সম্ভব হয়নি। কোন সাক্ষীও পাওয়া যায়নি। বরং ল্যাডলি সাহেব যে ভয়ানক অত্যাচারী ছিলেন এবং দেওয়ান নবকুমারের উপরে তাঁর অত্যাচারের ঘটনা ইউরোপীয় ম্যাজিস্ট্রেট কমিশনারের অজানা ছিল না। কাজেই ঘটনার তদন্তের ফলও কিছুই হয়নি। ল্যাডলি সাহেব পঙ্গু অবস্থায় ভারত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আজ সেই নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ আর কিছুই নেই। কিছু নদীতে চলে গেছে, কিছু অংশ পাট ও ধান ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসটা আছে। সেই ইতিহাস হেসে বলে, সাহেব ডাকাত ও দেশী ডাকাতদের লড়াইয়ে দেশী ডাকাত ব্রজবাসীরই জয় হয়েছিল।

(তথ্যসূত্র:

১- বাংলার ডাকাত, যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান (২০১২)।

২- বাংলার ডাকাত, ধীরেন্দ্রলাল ধর, দে’জ পাবলিশিং (২০১৭)।

৩- বাংলার ডাকাত, খগেন্দ্রনাথ মিত্র।)

                             

No comments